• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডসহ ৬ জনের যাবজ্জীবন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২২  

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া এপিবিএনের তিন সদস্যসহ ৭ জনকে খালাস ও বাকি ৬ জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬ জন হলেন- নন্দদুলাল রক্ষিত, নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন, আইয়াছ উদ্দিন, রুবেল শর্মা ও সাগর দেব।

খালাস পেয়েছেন- শাহজাহান আলী, রাজীব হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন, লিটন মিয়া, সাফানুর করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে- এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

এর আগে দুপুর ২টার দিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। ২টা ২৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক।

এদিকে, রায় ঘোষণা উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম  বলেন, সকাল থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করছেন। মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পাঁচদিন পর ৫ আগস্ট ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

চার মাস পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মেজর সিনহা হত্যার নেপথ্যে কী এবং কারা
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে কী কারণে হত্যা করেছিলেন ওসি প্রদীপ? এ নিয়ে এখনো জনমনে অনেক কৌতূহল। রায় ঘোষণার প্রারম্ভে এসেও অনেকে জানতে চান সেই কারণ। আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও অভিযোগপত্র উঠেছে হত্যার মূল কারণ।
হত্যার কয়েকদিন আগে থেকেই নানা বিষয়ে মেজর সিনহার সঙ্গে ওসি প্রদীপের মন কষাকষি শুরু হয়। মেজর সিনহার কোনো কথাই সহ্য করতে পারেননি ওসি প্রদীপ। সেই জায়গা থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার অভিযোগপত্র ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে-

সিনহা হত্যা: যা ঘটেছিল সেদিন
৩ জুলাই ২০২০। তিন সহযোগীসহ কক্সবাজার আসেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। কলাতলীতে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে ওঠেন তারা। উদ্দেশ্য জাস্ট গো নামের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভ্রমণ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা। ৭ জুলাই ২০২০। ঠিকানা বদল করে হিমছড়ির নিলীমা রিসোর্টের ডি-১ কটেজে ওঠে টিমটি।

শুরু হয় কক্সবাজারের মনোরম দৃশ্য এবং বৈচিত্রপূর্ণ জীবন ও জীবিকার তথ্য সংগ্রহ আর ভিডিও ধারণ। এক পর্যায়ে তারা যান টেকনাফে। ঐ সময় তারা মাদক নির্মূল অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নিপীড়নের কথা জানতে পারেন। ভূক্তভোগী অনেক পরিবার সিনহা ও তার টিমের কাছে ওসি প্রদীপের অত্যাচার নিপীড়নের বর্ণনা দেয়।

মেজর সিনহা ও তার লোকজন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও তাদের বাহিনীর নাম নানা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে জুলাই মাসের কোনো একদিন মেজর সিনহা, শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম রিফাতের সঙ্গে দেখা হয় ওসি প্রদীপের। নানা অভিযোগ সম্পর্কে ওসি প্রদীপের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তারা।

ঘটনাটি হালকাভাবে নিয়ে দলের সঙ্গে নিলীমা রিসোর্টে থেকেই কাজ চালিয়ে যান মেজর সিনহা। তবে এতটা হালকা হতে পারেননি ওসি প্রদীপ। ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বিষয়টি বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের আইসি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকে জানান। থানার সোর্সদের সঙ্গে গোপনে কথা বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত তিন সোর্স মো. নুরুল আমিন, আইয়াছ উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে মিটিং করেন। তারা তথ্য সংগ্রহে নামে। সাদা পোশাকে ক্রসফায়ারে নিহত ব্যক্তি ও অন্যান্য ভিক্টিম পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেজর সিনহা ও তার টিম সম্পর্কে খোঁজ নেয়। বলে আসে- এ ধরনের লোকজন এলে পুলিশকে খবর দিতে।

জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াছের সঙ্গে আবারো মিটিংয়ে বসেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। সিনহা ও তার ভিডিও দলকে খুঁজে বের করতে তাড়া দেন। বলেন, তা না হলে লিয়াকতের বড় ধরণের ক্ষতি করবে ওসি প্রদীপ। এরপরই মেজর সিনহাকে হত্যা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন লিয়াকত।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে শামলাপুর বাজারের কাছে এপিবিএন পুলিশ চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঐ ঘটনায় ৫ আগস্ট মামলা করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। ৬ আগস্ট সকালে মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করে তদন্তের জন্য র‍্যাবকে হস্তান্তর করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাব-১৩ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষদিনে ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। এ উপলক্ষে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম  বলেন, সকাল থেকে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা প্রস্তুত আছি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল