• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

সরকারি অফিস চলবে ‘এআই’ প্রযুক্তিতে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪  

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় সরকারি অফিসের কাজ সম্পন্ন করতে চায় সরকার। এজন্য সরকারি অফিসের চিঠি, সারসংক্ষেপ, প্রজ্ঞাপন, অফিস আদেশ, পরিপত্রসহ বিভিন্ন কাজ নিষ্পত্তি করতে এআইয়ের সহায়তা নেয়া হবে। অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তিও করা হবে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০২৩’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠতে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর ফফতরে পাঠানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সচিবালয় নির্দেশমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ- এই চার স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের কাজ স্মার্ট পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্মার্ট অফিস পদ্ধতি হলো- উচ্চ প্রযুক্তিযুক্ত কর্মক্ষেত্র, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমতাসম্পন্ন ডিভাইস মেশিন ও সফটওয়্যার সার্ভিস অথবা উদ্ভাবনী চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত করে অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে।

দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন ও সর্বোত্তমভাবে নাগরিকদের পরিষেবা দিতে পারবে। সরকারি অফিসের কাজ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক অর্থাৎ ইলেকট্রিক্যাল, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক, অয়্যারলেস, অপটিক্যাল, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক অথবা তুলনীয় সক্ষমতা রয়েছে এমন কোনো প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সহজে চিহ্নিত করা যাবে অনিয়ম-দুর্নীতি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, সরকারি অফিসের নথি ব্যবস্থাপনায় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। সরকারি চিঠি লেখা, সারসংক্ষেপ তৈরি করা এসব বিষয় এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কার্যক্রমও এই প্রযুক্তিতে চলে যাবে। এতে সরকারি অফিস আরো আধুনিক হবে, সময় ও ব্যয় কমবে এবং জনবান্ধব হবে। সংশোধিত সচিবালয় নিদের্শমালায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল অফিস ব্যবস্থাপনায় অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। স্মার্ট পদ্ধতিতে আরো উন্নতি হবে। এআই প্রযুক্তি ডাটা ব্যবস্থাপনার সহায়ক ভূমিকাও পালন করবে।

সচিবালয় নির্দেশমালা হচ্ছে, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের দাফতরিক কাজ কিভাবে হবে তার নির্দেশনা। এর আলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতরসহ সরকারি অফিস পরিচালিত হয়। সরকারের নির্দেশনা সময়োপযোগী করার জন্য সময় সময় সচিবালয় নির্দেশমালা পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৬ সালে প্রথম সেক্রেটারিয়েট ইনস্ট্রাকশনস (সচিবালয় নির্দেশমালা) জারি করা হয়। এরপর দফায় দফায় পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। তখন ডিজিটাল বাংলাদেশের আলোকে ইলেকট্রনিক আবেদন, ইলেকট্রনিক নথি ব্যবস্থাপনার মান ও মেটাডাটা ব্যবস্থাপনা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে অর্থ গ্রহণ, এসএমএস ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কার্যনিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নতুনভাবে যুক্ত করা হয়। এবার এসব বিষয়ে আরো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে সরকারি অফিস হবে কাগজবিহীন। সচিবালয় নির্দেশমালা-২০২৩-এর খসড়া সংশোধনে সম্মতি দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী। এখন সচিব সভায় অনুমোদন পেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

নতুন ৫৪টি নিয়ম যুক্ত হচ্ছে
‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০২৩’-এর খসড়ায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরম জুম মিটিং, ভার্চুয়াল মিটিং, জুম আইডি, হোয়াটসআ্যাাপ এসব সংযোজন করার কথা বলা হয়েছে। ই-নথিতে নথি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ইস্যু করার কথাও বলা হয়েছে। ই-নথির পাশাপাশি ডি-নথি চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে ই-নথি বিলুপ্ত হবে। ফ্যাক্স বার্তা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সচিবালয় নির্দেশমালার খসড়ায় সাতটি নির্দেশ, ২৭টি উপনির্দেশ ও ২০টি ক্রোড়পত্র নতুন সংযোজন করা হয়েছে। ৮৮টি নির্দেশ, ৯১টি উপনির্দেশ ও ১৩টি ক্রোড়পত্রের আংশিক সংশোধন এবং বর্তমানে প্রয়োজনীয়তা না থাকায় তিনটি উপনির্দেশ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। আইন, বিধি ও প্রবিধান, পদ সৃজন, সংরক্ষণ ও স্থায়ীকরণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নতুন নির্দেশ ও ক্রোড়পত্র সংযোজনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে নাগরিক সেবা প্রদানসংক্রান্ত অধ্যায় যুক্ত করা হলেও বিস্তারিত বিবরণ ছিল না। এবার সিটিজেন চার্টার সচিবালয় নির্দেশমালায় যুক্ত করা হচ্ছে।

সিটিজেন চার্টার হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরটি কী সেবা দেয় এবং কীভাবে দেয় তা একটি বোর্ডে প্রদর্শন করা। এ থেকে সেবা গ্রহণকারীরা বুঝতে পারেন ঐ সেবা পেতে হলে তাকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে এবং কত দাম দিতে হবে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে সচিবালয়ের কার্যনিষ্পত্তিকে যুগোপযোগী, জনবান্ধব ও অধিকতর গতিশীল করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে সচিবালয় নির্দেশমালা হালনাগাদ করা হচ্ছে। হালনাগাদ শেষ হলে স্মার্ট অফিস ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজে অনেক সুবিধা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভায় সচিবালয় নির্দেশমালা হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটির আটটি সভা ও সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের অংশগ্রহণে দুটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক বর্ণিত বিষয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটির সদস্য এবং আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত মতামত ও সুপারিশ যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনাপূর্বক ‘সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০২৩’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল