• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গণতন্ত্র দখলকারীদের থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪  

জনগণের ভোট চুরি করে অবৈধভাবে গণতন্ত্র দখলকারীদের কাছ থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার তারা (বিএনপি) কে? যাদের জন্মই হয়েছে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে, তারা আবার প্রশ্ন করে কিভাবে?’ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, ভোটের অধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের জন্মটাই বা কোথায়? অবৈধভাবে হত্যা, খুন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্র দখলকারী, তাদের পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দল, তাদের কাছে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। তাদের কাছ থেকে ভোটের অধিকারের কথা শুনতে হয়, যারা হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার চুরি শুরু করেছিল। ’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিটি নির্বাচনই তো আমরা দেখেছি। কিভাবে জনগণের ভোট নিয়ে খেলা হয়। বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের যে নির্বাচন সে নির্বাচনেও তো চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। পার্সেন্টেজ অব ভোট আমাদের বেশি ছিল। আমরা সিট পাইনি। কারণ আমি রাজি হইনি আমার দেশের গ্যাস অন্য দেশে আমরা বেচব। আজকে গ্যাসের জন্য হাহাকার। তখন যদি আমরা রাজি হতাম, গ্যাস বিক্রি করা শুরু করতাম তাহলে কী অবস্থা হতো! আমাদের কি কোনো ইন্ডাস্ট্রি চলত? আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ত? হতো না। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই মুচলেকা দিয়েছিল। সে কিন্তু কথা দিয়েছিল ক্ষমতায় গিয়ে গ্যাস বিক্রি করবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় যাবে লুটপাট করবে। পয়সা বানাবে। হাওয়া ভবন খুলে হাওয়া খাবে; এটাই ছিল তাদের মাথায়। এটাই তারা করে গেছে। এখনো একটা দল যার কোনো মাথামুণ্ডু নেই, তাদের যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনিও সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং দেশান্তরী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই সুবাদে সারা দেশে অনলাইনে শুধু নির্দেশ দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের অধীনে নির্বাচন করবে না। আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে তারা? যাদের জন্মই হয়েছে ভোট চুরির মধ্য দিয়ে, তারা আবার প্রশ্ন করে কিভাবে। জনগণ বলুক, দেশের মানুষ তো ভোট দিয়েছে। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরে খুশি। এলাকায় এলাকায় কিছু সমস্যা হয় স্থানীয়ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাস যদি আমরা দেখি আমি বলব, ২০২৪ সালের নির্বাচনটা যে হয়ে গেল, এমন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলাদেশ?’ তিনি বলেন, ‘২০২৬ সাল থেকে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। তার প্রস্তুতিও কিন্তু আমরা নিয়েছি। আমি এটা বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অগ্রযাত্রাটা সহজভাবে আমরা করতে পারব। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, যারা একেবারেই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া—এদের কিছু বক্তব্য, আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গীবত গাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কিভাবে হলো আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উত্খাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার সময় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো দেয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্ট আমরা বিনা পয়সায় করেছি, কোনো ধনী দেশও করেনি। আমরা দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নিয়েছি। খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়েছি, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি। সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে গেছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে। সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা? মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার অতিমারি, এরপর আসে ইউক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। এসব সমস্যার কারণে শুধু আমরা নই, সারা পৃথিবী, এমনকি উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তার পরও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ ওপরে তুলব। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দিই, দিন বদলের সনদ আমরা ঘোষণা দিই। আজ দিন বদল ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘সব সময় আমরা লক্ষ রেখেছি তৃণমূলের মানুষ, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। আজ কেউ বলতে পারছে না যে গ্রামে দারিদ্র্য আছে। এখন বলে, শহরে দারিদ্র্য। এখন অদ্ভুত এক হিসাব হয়ে গেছে, দারিদ্র্যের হার শহরে বেড়ে গেছে, গ্রামে না। অথচ একসময় গ্রামের মানুষ একবেলা ভাত খেতে পেত না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগের চিকিৎসা পেত না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নে তৃণমূল মানুষের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলা-উপজেলা গৃহহীন, ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা দিয়েছি। অল্প কিছু বাকি আছে, সেগুলোও শিগগিরই হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কোনো মানুষই ঠিকানাবিহীন থাকবে না।’ গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে শুরু হওয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল