• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও ভূরাজনীতি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন। প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফরে এলেন। তাঁর দুই দিনের এই সফরে অগ্রাধিকার পাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। তবে আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। সই হবে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক। গতকাল বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এটি তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর। বিমানবন্দরে তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এখানে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন কাতারের আমির। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। সন্ধ্যায় বিশেষ ফ্লাইটে তাঁর ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুই দফা কাতার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করছেন। কাতারের আমিরের এ সফরে ১১টি দ্বিপক্ষীয় দলিল সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক। চুক্তিগুলো হচ্ছে– দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি-সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত সহযোগিতা-সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন-সংক্রান্ত চুক্তি, পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা-সংক্রান্ত চুক্তি, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিনিময়-সংক্রান্ত চুক্তি এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন-সংক্রান্ত চুক্তি। সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে– শ্রমশক্তি, বন্দর পরিচালনা, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা-সংক্রান্ত। বাংলাদেশ-কাতার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। আমিরের সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি আমিরের নামে নামকরণ করার কার্যক্রম চলছে। এ দুটি স্থাপনা কাতারের আমিরের উদ্বোধন করার কথা থাকলেও সময়-স্বল্পতার কারণে তিনি তা করছেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সময়-স্বল্পতার কারণে কাতারের আমির জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতেও যেতে পারছেন না বলে জানান তিনি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৭ সালে আরব লিগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর সৌদি আরবের চাপ ছিল। তখন বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। কারণ, বাংলাদেশের জনশক্তির প্রধান বাজার সৌদি আরব হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী কাতারে রয়েছে। বাংলাদেশ ওই সময় কাতারের পাশে থাকায় তারা ঢাকার ওপর সন্তুষ্ট। এটি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রভাব ফেলে। এ কারণে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আমিরের এই সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার পরিচিতি লাভ করেছে এবং ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তা ছাড়া পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দেশ কাতার শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। পাশাপাশি দেশটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। কাতার জ্বালানি আমদানিরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আমিরের সফরের সময় বাকিতে কাতার থেকে জ্বালানি সংগ্রহের পাশাপাশি শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও তহবিল সহযোগিতার দিকে নজর রাখছে ঢাকা। কাতারের বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মাওয়ানি বাংলাদেশে বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানটি মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন বন্দরের ব্যবস্থাপনা করতে চায়। তবে বাংলাদেশ এখনও প্রতিষ্ঠানটিকে এ বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমিরের এই সফরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়, যা এখনও কার্যকর হয়নি। দেশটির আমিরের ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা রয়েছে। এখন কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাতারে কাজ করেন। এর আগে ২০০৫ সালে কাতারের তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন। প্রায় দুই দশক পর বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এলেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল