• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বদলে গেছে আশ্রয়ণের শিল্পী-সুফিয়ার ভিক্ষুক জীবন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

একটো ঘর দ্যান স্যার। এল্লা হাউস মিটা ঘুমামু। ছলডোক নিয়া আর বাইরে শীতে  টিকতে পারি নাগো স্যার। এমনিভাবে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আকুতি জানানো শিল্পী খাতুন এখন পাকা ঘরসহ জমির মালিক। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরে তিনি ঠাঁই পেয়েছেন। 

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের শিল্পীকে তার সৎ মা সতেরো বছর পূর্বে এক ভবঘুরের সাথে জোর করে বিয়ে দেন। বছর ঘুরতেই কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান।তার এক বছর পরেই সেই স্বামী শিল্পীকে ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে শিল্পীর ভাগ্য বিড়ম্বিত জীবন।তখন থেকেই আশপাশের মানুষের বাসায় ফাই ফরমাস খেটে ও চেয়ে চিন্তে চলে মা-মেয়ের জীবন। সেই শিল্পী এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। তার সন্তান এখন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। আর শিল্পী এখন আশ্রয়নের পাশের পুকুর ধারে লাগানো লাউ, সিম, কুমড়ো বিক্রি করে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন।

 বুধবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের সোনামুখী পূর্বপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে কথা হয় শিল্পী খাতুনের সাথে। এসময় তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই নিজের একটা ঘর পামু। আর সাথে জায়গাও পামু আমাগোরে প্রধানমন্ত্রী এহন ঘর দিছে। সব কষ্ট গ্যাছে গা। এহন লাউ সিম বেচি। আর কাথা সেলাই করে বেচি। এসব দিয়ে ছলডোর(মেয়ের) স্কুলে খরচ চলে যায়। আমার আর কিছু চাওয়ার নাই।   

 শিল্পীর ঘরের দুইঘর পরেই ঘর পেয়েছেন সুফিয়া জেল হোসেন দম্পতি। নকশী কাঁথা সেলাই আর হাস-মুরগি পালন পালন করে এখন এই দম্পতিও অভাবকে বিদায় বলেছে।অন্যের জমিতে ঘর তুলে এই দম্পতি পার করেছে আঠারোটি বছর।নিজের বাড়িঘর এবং জমি জিরাত না থাকায় সুফিয়ার স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কাজ না থাকলে উপোসের হাত থেকে বাঁচতে অন্যের নিকট হাত পাততেন সুফিয়া। এই অবস্থায় বিয়ের পরেই তাদের ঘর জুড়ে আসে তাসলিমা ও জেসমিন নামের দুই কন্যা। বড় মেয়ে তাসলিমা এখন পোশাক কারখানায় কাজ করে। আর ছোট মেয়ে জেসমিন দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।  আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিজের ঘর পাওয়া সুফিয়া এখন হাস-মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী। তার এক সময়ের ভিক্ষার হাত এখন কর্মের হাতে পরিণত হয়েছে। সুফিয়ার মেয়ে জেসমিন জানায়, আমাগোরে আর কস্ট নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাগোরে ঘর দিছে। এহন আমাগোরে কেউ দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে পারবো না।ঘর পাছি। পাকা ল্যাট্রিন, পাকা টিউবওয়েল ব্যবহার করছি। ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইছি।চলার জন্যে রাস্তা পাইছি।  আর কিছু চাইবার নাই।এসব করে দেবার জন্য কাজিপুরের ইউএনও স্যার, পিআইও স্যারকে সালাম জানাই। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে কাজিপুর উপজেলা প্রশাসন প্রথম পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ টি, এরপর ৫৫ টি ঘর নির্মাণ করেছেন। এবার আরও ৫০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। 

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়নে গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শুরুতে এ কাজে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। ঘরগুলো নির্মাণ করে সুদিধাভোগীদের বুঝে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের খোঁজ খবর রাখছি। বাকি ঘরগুলোরও নির্মাণকাজ চলছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল