• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল
সর্বশেষ:
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি : স্পিকার ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা পদ্মাসেতুর নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ ভুটানের রাজা অ্যানেসথেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের ৬ দফা নির্দেশনা

২৭ জানুয়ারি ১৯৭১, ভুট্টো ও বঙ্গবন্ধুর কয়েক দফা ব্যর্থ আলোচনা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২১  

১৯৭০ সালের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন বাঙালির জাতিসত্তার প্রেক্ষাপটে জাগরণের শক্তি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়ে আছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দুই আন্দোলনে মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালির আত্মজাগরণের জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন। এই দুটো জায়গায় নিজের ভূমিকাকে আত্মপ্রত্যয়ী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাঙালির মানসপটে বিপুলভাবে আত্মজাগরণের দরজা খুলে দেন। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করে। শুরু হয় স্বাধীনতার স্বপ্নে নিরন্তর যাত্রার দুঃসাহসী ভূমিকা। সত্তরের নির্বাচন ও অসহযোগ আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান বিপুল সাহসী চৈতন্যে ঐক্যবদ্ধ বাঙালির তোরণ উন্মোচন করেন। বিশ্বজুড়ে বাঙালির জাগরণ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা বিপুল সাহসী প্রত্যয় বিশ্বের মানচিত্রে প্রলয় ঘটায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতার আসনে আসীন করে বাঙালি নিজের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটায়। পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

 

ইয়াহিয়া খানের (১৯৬৯-১৯৭১) সামরিক শাসনামলে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ইতিহাসে ১৯৭০-এর নির্বাচন নামে পরিচিত। এ নির্বাচনে মোট ২৪টি দল অংশ নেয়। ৩০০টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট এক হাজার ৯৫৭ জন প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে এক হাজার ৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাকিগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে। আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। একই সঙ্গে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে। নজিরবিহীন এ বিজয়ে আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন ও ছয় দফার পক্ষে গণরায় লাভ করে।

 

পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর দেশবাসীকে একটি সর্বজনগ্রাহ্য শাসনতন্ত্র উপহার দিতে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭১ সালের ২৭শে জানুয়ারি ঢাকায় এই আলোচনা শুরু হয়। পরপর তিন দিন তাঁদের মধ্যে দেশের শাসনতন্ত্র নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর আলোচনা ব্যর্থ হয়। ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। 

 

১৯৭১ সালের ২৭ জানুয়ারীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে পিপলস পার্টি প্রধান ভুট্টো করাচী থেকে ঢাকা আগমন করেন। ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান, তাজউদ্দিন আহমদ ও জহীরুদ্দিন। পিপলস পার্টির কর্মী, সমর্থকগণ বিভিন্ন স্লোগান সহকারে বিমানবন্দরে ভুট্টোকে অভ্যর্থনা জানায়। ঢাকা পৌঁছার পর ভুট্টো বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন।

 

ভুট্টো তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভি আই পি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। আলোচনাকালে আওয়ামী লীগ যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে তাহলে তাঁর মনোভাব কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আমি শ্রদ্ধা করি।” তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে সরকার গঠন এবং পরিচালনা করা সম্ভব, কিন্তু একটি ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামোর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে “ঐকমত্যই হচ্ছে গণতন্ত্রের সারবস্তু।” 

ভুট্টো আওয়ামী লীগের ৬-দফা পড়ে দেখেছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি কী মনে করেন আমি আমার ঘরের পড়াশুনা করি না।” ৬-দফার প্রথম দফাটি তিনি যেখানে মেনে নিয়েছেন, সেখানে বাকি ৫টি দফা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচটি দফা আলোচনা করা হবে। 

তিনি জানান, এ বিষয়ে আর কিছু বলবেন না। কারণ এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর আলোচনা বিঘ্নিত হতে পারে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুট্টো শাসনতন্ত্র বিষয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান সময় সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এবং শেষ হয় ৮টা ২৫ মিনিটে। ৭৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে তাঁদের সাথে কোন সহযোগী ছিলেন না। বৈঠক শেষে ভুট্টো প্রথমেই অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা বহু বিষয়ে আলোচনা করেছি।” বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমরা সবেমাত্র আলোচনা শুরু করেছি এবং তা অব্যাহত রাখবো।” বঙ্গবন্ধু এবং ভুট্টো যখন বৈঠক চালাচ্ছিলেন তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, কামরুজ্জামান প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা এবং পিপলস পার্টির অন্যান্য নেতা অপর একটি কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একবার বৈঠক কক্ষে কয়েক মিনিটের জন্য ঢুকে বের হয়ে আসেন।

 

পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম. আহসান ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজে বক্তৃতাকালে পুলিশ বাহিনীকে জনসাধারণের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার সাথে কর্তব্য পালনের আহবান জানিয়েছেন। গভর্নর পুলিশ বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সাহসিকতার জন্য কায়েদে আজম পুলিশ পদক ও প্রেসিডেন্টের পুুলিশ পদক বিতরণ করেন। গভর্নর বিগত নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা  ছাড়া দেশের অগ্রগতি হতে পারে না। কাজেই পুলিশ বাহিনীকে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

তথ্য: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও অনলাইন গণমাধ্যম

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল