• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

১৯০ কোটি টাকার বড় বিনিয়োগ পেল শপআপ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২০  

প্রথম বাংলাদেশি উদ্যোক্তা হিসেবে ‘সিরিজ এ’ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ পেল স্টার্টআপ শপআপ। শপআপ শুরুতে ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারত্বে ঋণ দেওয়া শুরু করলেও খুব দ্রুতই ভারতের ওমিডিয়ার নেটওয়ার্ক থেকে ১০ লাখ ৬০ হাজার ডলারের প্রাথমিক তহবিল পায়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সেরা স্টার্টআপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পায় শপআপ।

 

যাত্রাবাড়ীর ফাতেমা আক্তারের বিয়ে হয় স্নাতকোত্তর পাস করার পরপর। লেখাপড়া জানা সত্ত্বেও পরিবার থেকে চাকরি করার অনুমতি পাননি ফাতেমা। স্বামী খুব সামান্যই সহযোগিতা করতেন সংসারে খরচে। ফাতেমা ভাবতেন বাড়ি বসেই আয় হয় এমন কিছু করবেন। কিন্তু একা কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। জানা ছিল না কোথায় পাওয়া যায় পণ্য, কীভাবে তা পৌঁছানো যায় ক্রেতাদের ঠিকানায়, কীভাবেই–বা চালায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবসা। একদিন স্বামীও সংসার ছেড়ে চলে যান। তখন ফাতেমার মেয়ের বয়স মাত্র পাঁচ মাস।

 

ফাতেমার পাশে এসে দাঁড়ায় শপআপ নামের একটি উদ্যোগ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের এক ছাদের নিচে আনার কাজ করে তারা। এ ছাড়া উৎপাদনকারীকে পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে, পাইকারি বিক্রেতাকে খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে এবং খুচরা বিক্রেতাকে ক্রেতার সঙ্গে সংযুক্ত করে। পণ্য পৌঁছে দেওয়া, ই-পেমেন্ট, অনলাইনে দোকান চালানো থেকে শুরু করে একটা ছোট ব্যবসা চালাতে যত ধরনের সুবিধা লাগে, তা পাওয়া যায় শপআপের কাছে। ফাতেমা যুক্ত হন, শুরু হয় তাঁর ফেসবুকের দোকান। মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি, ছয় মাস ঘুরতেই আয় দাঁড়ায় আড়াই লাখ টাকায়।

বিজ্ঞাপন

 

ভারতের সিকোয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া, ফ্লারিশ ভেঞ্চার, ভিওন ভেঞ্চার ও স্পিডইনভেস্ট এবং সিঙ্গাপুরের লনসডেল ক্যাপিটাল সম্মিলিতভাবে শপআপে বিনিয়োগ করছে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো উদ্যোগ এত বড় অর্থ বিনিয়োগ পাচ্ছে।

 

স্টার্টআপ হিসেবে শপআপের বয়স কিন্তু খুব বেশি নয়। মাত্র ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা শপআপ পাচ্ছে বেশ বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। ‘সিরিজ এ’ তহবিল থেকে এই বিনিয়োগ পাওয়ার তথ্য গতকাল সোমবার চূড়ান্তভাবে তারা জেনেছে। বিনিয়োগের পরিমাণ ১৯০ কোটি টাকা। মূলত নতুন কোনো উদ্যোগ যখন প্রাথমিক পুঁজি নিয়ে বাজারে ভালো ফল দেখায়, তাদের ক্ষেত্রে সিরিজ এ শ্রেণির বিনিয়োগ করা হয়।

 

শপআপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফ জুবায়ের জামান এ নিয়ে প্রথম আলোকে জানান, ভারতের সিকোয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া, ফ্লারিশ ভেঞ্চার, ভিওন ভেঞ্চার ও স্পিডইনভেস্ট এবং সিঙ্গাপুরের লনসডেল ক্যাপিটাল সম্মিলিতভাবে শপআপে বিনিয়োগ করছে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো উদ্যোগ এত বড় অর্থ বিনিয়োগ পাচ্ছে। নতুন এ বিনিয়োগ ব্যবহার করে শপআপ আরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসাকে তাদের প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনতে চায়।

 

আফিফ জুবায়ের জামান আরও বলেন, আগামী এক দশকে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো আরও পরিণত হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করবে। শপআপ এই পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে চায়।

 

সিরিজ এ বিনিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠানের মূল্যমান খুব ভালোভাবে যাচাই করা হয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আফিফ জামান বলেন, ‘আমরা সত্যি খুব ভাগ্যবান যে বিনিয়োগকারীরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। অন্য যেকোনো উদ্যোগের চেয়ে শপআপ দ্রুত এ বিনিয়োগ পেয়েছে।’

 

যেভাবে শুরু

আফিফ জুবায়ের ও সিফাত সারওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ছিলেন। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে বিবিএ করেন। এরপর সিফাত সারওয়ার যোগ দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আর আফিফ জুবায়ের খোলেন নিজের একটি ব্যবসা। সেখানেই পরিচয় হয় আতাউর রহিম চৌধুরীর সঙ্গে। আতাউর রহিম ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগ থেকে পাস করেছিলেন।

 

খুব দ্রুতই শপআপ অনলাইন ও অফলাইনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। বর্তমানে শপআপ সাড়ে ছয় লাখের বেশি ব্যবসাকে সেবা দিচ্ছে, যা বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো এশিয়াতেই খুচরা ব্যবসায় এক অনন্য উদ্যোগ।

 

২০১৮ সালে পটুয়াখালীর দাদাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আফিফ দেখেন গ্রামের কারুশিল্পীরা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈজস তৈরি করেন, কিন্তু প্রাপ্য দাম পান না। ওই সব কারুশিল্পীকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকেই তাঁরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করেন। সেখান থেকেই শুরু শপআপ। সিফাত সারওয়ার এখন শপআপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, আতাউর রহিম প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং আরেকজন উদ্যোক্তা হচ্ছেন শাহিন সিয়াম প্রধান অর্থ কর্মকর্তা।

 

খুব দ্রুতই শপআপ অনলাইন ও অফলাইনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। বর্তমানে শপআপ সাড়ে ছয় লাখের বেশি ব্যবসাকে সেবা দিচ্ছে, যা বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো এশিয়াতেই খুচরা ব্যবসায় এক অনন্য উদ্যোগ। ছয়টি আলাদা পণ্যের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দেয় শপআপ। এর মধ্যে মোকাম ও শপআপ রিসেলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের যুক্ত করা হয়। শপআপ ই-লোন ব্যবসায়ীদের ঋণসহায়তা দিয়ে থাকে। শপআপ স্টোর ও শপআপ অ্যাসিস্ট ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে এবং রেডএক্স ডেলিভারি সার্ভিস পণ্যকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।

 

শপআপ শুরুতে ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারত্বে ঋণ দেওয়া শুরু করলেও খুব দ্রুতই ভারতের ওমিডিয়ার নেটওয়ার্ক থেকে ১০ লাখ ৬০ হাজার ডলারের প্রাথমিক তহবিল পায়। এ দিয়েই একটু একটু করে এগোতে থাকে শপআপ। ২০২০ সাল নাগাদ শপআপের সঙ্গে যুক্ত হয় মুদিদোকান ব্যবসাও।

 

শপআপ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সেরা স্টার্টআপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছে। আর এ বছরের শুরুতে শপআপ ভারতের বেঙ্গালুরুতে অফিস চালু করেছে। বেঙ্গালুরুর কোম্পানি ভুনিক সংযুক্ত হয়েছে শপআপের সঙ্গে। আর এখন পাচ্ছে ১৯০ কোটি টাকার তহবিল। শপআপের আশা, এভাবে তারা আরও মসৃণভাবে তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে পারবে।

 

শপআপ বলছে, ২০২০–এর এপ্রিল থেকে আগস্টে আশপাশের দোকান থেকে তাদের অর্ডার বেড়েছে সাড়ে আট গুণ, আর পার্সেল সরবরাহ বেড়েছে ১৩ গুণ। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখন অনলাইনে সন্ধান করছে। ক্ষুদ্র বিক্রেতারাও টিকে থাকার জন্য অনলাইনে আসতে চাচ্ছেন। আফিফ জুবায়ের মনে করছেন, শপআপের মাধ্যমে তাঁরা দেশের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো টিকিয়ে রাখতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতিকেও লাভবান করবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল