• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

১৭ মে, আজ শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২১  

“শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মূল কারণ।”- নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

 

আজ ১৭ মে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পঁচাত্তরের পর ছয় বছর দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। 

 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। পরে দীর্ঘ ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটে বঙ্গবন্ধু কন্যাদের।

 

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।  

 

এর তিন মাস পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে। রাজধানী ঢাকায় বয়ে যাচ্ছিল কালবৈশাখী। ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল। প্রচণ্ড-ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়া। তাতে কি, শেখ হাসিনা আসবেন তাই কুর্মিটোলা থেকে শেরেবাংলা নগর লোকারণ্য।

 

বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন।

 

সেদিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে নামে লাখো জনতার ঢল। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সেদিনের গগণ বিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল।

 

শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালবাসার জবাবে তিনি এদিন বলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসাবে, মেয়ে হিসাবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

 

এর পর থেকে দলীয় কাউন্সিলে টানা ৮ বার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে শক্ত হাতে দলের হাল ধরে আছেন শেখ হাসিনা। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

তবে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথ কখনো মসৃণ ছিল না। তাকে হত্যার জন্য অন্তত ১৯ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে তাকে লক্ষ করে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা।

 

ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘদিন কারাবাসে থেকেও মাথানত করেননি শেখ হাসিনা। ভয়-ভীতি ও ষড়যন্ত্রে অনেক নেতা পথভ্রষ্ট হলেও জেলে থেকে সফল দিক-নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন তিনি।

 

নেতাজী সুভাষ বসু বলেছিলেন, “বিপ্লবের পথ একেবারে ঋজুপথ নয়। এ পথে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য আসে না, এ পথ বহু বিঘ্নসংকুল, সুদীর্ঘ এবং সর্পিল।” 

 

২০১৭ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক গ্রন্থের অন্য ছয়জন বিশ্বনেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি মুদ্রিত হয়েছিল। বইটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ রিচার্ড ও’ ব্রেইন। ওয়াশিংটনের উইমেন্স ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ক্লাবে (ডব্লিউএনডিসি) বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

লেখক গ্রন্থটিতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠতা ও কঠোর পরিশ্রমী এবং বাংলাদেশের তিনবারের (সে-সময় তিনবার) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অর্জন লিপিবদ্ধ করেছেন। ও’ ব্রেইন বাংলাদেশকে অধিকতর স্থিতিশীল ও অধিকতর গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত কম হিংসাত্মক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন। আমাদের স্বীকার করা উচিত, ১৯৮১ সালের ১৭ মে-র আগের এ-রকম বাংলাদেশ তার কট্টর সমালোচকরাও ভাবতে পারেন নি। একবারেই অন্ধ না হলে স্বীকার করতেই হবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের আদলে নামেই শুধু বাংলাদেশ। তিনি দেশে ফিরে না এলে অনেক আগেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।

 

গার্ডিয়ান পত্রিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিরল।’ ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোষ শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আরেক নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে তুলনা করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান অভিহিত করেন ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’।

 

আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েই এখন দেশ পরিচালনা করছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে বাস্তবায়িত ৬৮ বছরের কষ্ট আর ৪১ বছরের প্রতীক্ষিত সীমান্ত চুক্তি। তার শাসনামলে সমুদ্রসীমা জয় করেছে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ভৌগোলিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার আমলেই বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নির্মিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম পদ্মাসেতু। এই মহাদুর্যোগের মধ্যেও পদ্মাসেতুর কাজ চলমান। ২৯তম স্প্যান বসে গেছে; আর মাত্র ১২টি স্প্যান বাকি আছে। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আদায় করার সবক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। তাকে ‘মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা’ বলেছে ‘অক্সফোর্ড নেটওয়ার্ক অব পিস’ নামক একটি সংস্থা। শ্রীলংকার গার্ডিয়ান পত্রিকা তুলনা করে ‘জোয়ান অব আর্ক’-এর সঙ্গে। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল