• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

হারিয়ে যেতে বসেছে টাঙ্গাইলের মৃৃৎশিল্প

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্প উন্মুক্ত বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্লাস্টিক, অ্যালুমোনিয়াম ও মেলামাইনের দাপটে মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্ত। ফলে জেলার প্রতিভাবান মৃৎশিল্পীরা অর্থাভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। 
এক সময় পুরো জেলায় তৈজসপত্রের চাহিদা পূরণ করতো মাটির হাড়ি, পাতিল, কলসি, থালা(সানকি), কুয়ার পাট, নানা ধরনের খেলনা, বিভিন্ন পিঠা তৈরির খরমা(সাজ) ইত্যাদি। গ্রাম্য মেলা ও হাট-বাজারে মাটির তৈরি ওইসব পণ্য শোভা পেতো। মাটির তৈরি এসব পারিবারিক তৈজসপত্র বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থসম্মত ও সুস্বাদুপণ্যের আধার হিসেবে পরিগণিত। মাটির তৈরি উৎকৃষ্টমানের ওইসব তৈজসত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের তৈরি তৈজসপত্র। গ্রামাঞ্চলের উৎসব-মেলা বা হাট-বাজারে প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি মৃৎশিল্পের পণ্য সামগ্রীর জায়গা নিয়েছে কৃত্তিমভাবে তৈরি তৈজসপত্র।  

টাঙ্গাইল বিসিক সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৫৮টি কুমার পরিবার, বাসাইলে ১১৫টি, নাগরপুরে ১০৭টি, মির্জাপুরে ৯৯টি, দেলদুয়ারে ৬৫টি, ঘাটাইলে ৬০টি, ভূঞাপুরে ফলদা কুমার পাড়ায় ২২০টি, কালিহাতীতে ২৮০টি, গোপালপুরে ১১২টি, ধনবাড়ীতে ১০টি এবং মধুপুর উপজেলায় ৯টি কুমার পরিবার বসবাস করছে। জেলায় ১ হাজার ২৩৫টি কুমার পরিবার থাকলেও তাদের অধিকাংশই পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।  

মৃৎ শিল্পীরা সুনিপুণ শৈল্পিকতায় তৈরি করছেন পুতুল, ফুলের টব, কুয়ার পাট, হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, শো-পিসসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ও সৌখিন জিনিসপত্র। এসব পণ্য তারা শহরের দোকান এবং বাসা-বাড়িতে বিক্রি করে থাকেন। বর্তমান সামাজিকতায় মৃৎশিল্পের তৈজসপত্রের ব্যবহার চোখে পড়ে না, সৌখিন জিনিসপত্র এবং কুয়ার পাট তৈরিই মৃৎশিল্পীদের জীবিকার একমাত্র ভরসা। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসাখানপুরের চৈতি পাল, বাদল পাল, ঝর্ণা রাণী পাল, দেলদুয়ারের গমজানির নিমাই পাল, মির্জাপুরের গণেশ পাল, ভূঞাপুরের ফলদা কুমার পাড়ার পিয়াতা পাল, কালিহাতী উপজেলার স্বপন পাল, বাদল কুমার পাল সহ অনেকেই জানান, মাটির তৈরি তৈজসপত্র এক সময় ঘর-গৃহস্থালীর প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এমনিতেই বর্ষাকালে মাটির তৈরি পণ্য রোদে শুকানো যায়না ও চুলায়(পুন/মুখাই/ভাটা) আগুন দেওয়া যায়না। এ কারণে মৃৎশিল্পীদের বছরের ৩-৪মাস বেকার সময় কাটাতে হয়। 

নানা উৎসব-পার্বণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত মেলায় আগতরা সখের বসে মাটির তৈরি ব্যাংক, পুতুল, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, কারুকার্যকৃত ফুলদানী ইত্যাদি কিনে থাকে। করোনাকালে মেলার আয়োজনও বন্ধ থাকায় জেলার মৃৎশিল্পীরা কার্যত বেকার জীবন কাটিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তারা ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারেনি।

মৃৎশিল্পীরা জানায়, বর্তমানে প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমোনিয়ামের তৈজসপত্র সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার মৃৎ শিল্পের ভবিষ্যত ফিঁকে করে দিয়েছে। ফলে মৃৎ শিল্পীরা তাদের বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পৈত্রিক পেশাকে টিকিয়ে রাখতে জড়িতরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেন।

সদর উপজেলার গালা ইউপি চেয়ারম্যান রাজকুমার সরকার জানান, প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য রসুলপুরের জামাই মেলা। এক সময় এ মেলার অন্যতম আয়োজন ছিল মাটির তৈরি তৈজসপত্র। জেলার মৃৎশিল্পীরা প্রতিবছর তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে মেলার আকর্ষন বাড়ানোর পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছে টানতো। মাটির তৈরি জিনিস-পত্রের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এখন হাতেগোনা কয়েকজন মৃৎশিল্পী নানা ধরণের খেলনা, ফুলদানী ও শো-পিস নিয়ে মেলায় অংশ নেয়।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম বলেন, বিসিক থেকে সরকারি সহযোগিতায় মৃৎ শিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়। যে সব মৃৎ শিল্পীরা শো-পিস তৈরি করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও ব্যাংক ঋণে সহযোগিতা করা হয়। 

তিনি আরো জানান, যারা মাটির তৈরি শো-পিস তৈরি করে থাকেন মেধা বাছাই করে তাদের মধ্য থেকে মেধাবীদের শিল্পভবনে তিন মাসের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবসা করার জন্য বিসিকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল