• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

স্যরি বলুন দুঃসাহস নিয়ে, দূর করুন সমাজের অসংগতি!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

একটা সমাজ, একটা দেশ, একটি জাতী তখনই বৈষম্যের শিকার হয়, যখন সমাজে বৈষম্যমূলক কুপ্রথাগুলো জায়গা করে নেয়। প্রতিটি কুপ্রথা মানবতা হরণের জন্য, মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নারী নেতৃত্বের দেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত যৌতুকপ্রথা বাঙ্গালী নারীদের জন্য বৈষম্যমূলক আরচরণই নয়, বরং নারী অধিকার হরণের নীরব ঘাতক ভাইরাসও বটে। যৌতুকের বলি হচ্ছে শতশত সংসার। ফাঁসি খাওয়া থেকে বিষ খাওয়ার মতো অনেক সিদ্ধান্তে কুপোকাত হচ্ছে কতো নারী। যৌতুক নিঃসন্দেহ সামাজিক ব্যধি। সরকারের সচেতনতায় কখনো যৌতুক দূর হবেনা, যদিনা আমরা সচেতন না হই। আমাদের সমাজে যৌতুকের মতো নানা কুপ্রথা জায়গা করে নিয়েছে, যার দরুণ সমাজের মানুষ দিন দিন মানবতা, মনুষ্যত্ব, স্বকীয়তা সব হারাচ্ছে। বৈষম্যবিহীন সমাজ বিনির্মাণে আমাদের নতুন প্রজন্মকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। 

 

অসংগতি গুলো দূর করতে যেভাবে আমরা এগিয়ে যাবো: আপনাকে বিয়ের দাওয়াত দিতে এলো আপনার কোন বন্ধু কিংবা আত্মীয় স্বজন। এবার তাহার থেকে জেনে নিন- শ্বশুরবাড়ী থেকে মোটর সাইকেল দিচ্ছে কিনা (মূলত নিচ্ছে) , টিভি-ফ্রিজ, ফার্ণিচারসহ, বিয়ে-ভাতের লস্কর খাওয়াচ্ছে কিনা (মূলত দাবী)। যদি এর সবকটির একটিও শ্বশুড়বাড়ী থেকে দাবী করে নিচ্ছে নম্র ভাষায় বলুন- স্যরি ভাই ওই বিয়েতে আমি যেতে অপারগ। অন্তত এভাবে বয়কট করুন কয়েকটি বিয়ে। দেখবেন যৌতুক কমে যাবে। পক্ষান্তরে সবকিছু নিজের (বরের) পক্ষ থেকে ম্যানেজ করলে সাদরে দাওয়াত গ্রহণ করুন এবং প্রশংসা করুন এভাবে- আপনিই সেরা কাজটি করছেন। এখানে কনে পক্ষের বড় একটা অসংগতি থাকে তা হলো- বড় অংকের কাবিনের দাবী! বিয়েতে বড় অংকের কাবিন নামাও প্রচলিত অর্থে জুলুম। এ বিষয়ে আমাদের ব্যালেন্সে আসা জরুরী।

 

মেজবানের যে কালচার আমাদের সমাজে প্রচলিত তাতে মেজবানের স্বকীয়তা টিকিয়ে নেই! গরীব মিসকিনদের জন্য মূলত মেজবানের আয়োজনটা করা হয়। বড় বড়, সাহেব সাহেব, বাবু বাবু, নেতা নেতা, ক্ষমতা ক্ষমতা ভাবের লোকদের জন্য মেজবানের দাওয়াতের লম্বা একটা লিষ্ট। এদের উপচেপড়া ভীড়ে তলিয়ে যায় মানবতা! কিন্তু ফকির মিসকিনদের আলাদা প্লেসে, আলাদাভাবে খেতে দেওয়া হয়! অনেক সময় এদের প্রতি দূরাচারও করা হয়! আর সাহেব বাবুদের খাওয়া-দাওয়া যেন জামাই আদুরে! এসব মেজবানের উদ্যেশ্যটা মূলত ভিন্ন। বৈষম্যমূলক এ আচরণ দেখলে লজ্জার মাথা না নুইয়ে উঁচু করে বলুন- স্যরি ভাই, এটা মূলত মেজবানের নিয়্যম না। এয়াতিম, মিসকিনদের সাথে এমন আচরণে মনক্ষুন্ন হলো।

 

মৃত ব্যক্তির জন্য চারদিনা, চল্লিশা নামে যে প্রথাগত অনৈসলামিক কালচার সমাজে প্রচলিত তা বরাবরের মতোই এড়িয়ে চলুন। এসব দাওয়াতে না বলুন! অন্তত নিরুৎসাহিত করুন। এতে অন্তত কুপ্রথাগুলো বর্জন হবে। এমনও হয় যে, অসহায় মৃতের পরিবারের জন্য ওই চারদিনা, চল্লিশা জুলুমে পরিণত হয়। এগুলো পালন না করলে সামাজিকভাবে তাকে ছোট হতে হয়! এগুলো মূলত ভূরিভোজন ছাড়া, উদর ফূর্তি ছাড়া বৈ কিছু না। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, সর্দ্দার, মাতব্বর কখনো অসহায় পরিবারের একদিনের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবেনা। তাই এসব দাওয়াতের বিপরীতে ভদ্রভাবে স্যরি বলুন। তবে, সর্ব্বোচ্চ সম্মান দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে কবরে সমাহিত করে চলে আসাটাই কাজের কাজ।

 

আপনার প্রতিবেশীর গরবী, অসহায়, অনাথ মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে। আপনি তখন ওই সমাজের মাতব্বর, মোড়ল হয়ে এমনটা করতে যাবেন না- অমুক তমুক এক'শজন, দু'শজন সামাজিকে (সমাজের লোকজন) খাওয়াবেন এমনটা বলার স্পর্ধা দেখাবেন না (বড় জঘণ্য সমাজ)! সমাজকে বাধ্য করুন- মেয়েটির বিয়ের কাজ সম্পন্ন না করে বিয়ে বাড়ি থেকে কেউ আসবেন না। আর ওই বিয়ে বাড়িতে মাত্র কয়েকজন যাবেন খাওয়ার জন্য নয় বরং সামাজিকতা ও দায়িত্ব পালন করার জন্য। অন্তত এভাবে হলে সমাজ থেকে জুলুম কমে যাবে। সাম্য মৈত্রি  প্রতিষ্টা লাভ করবে।

 

বিয়ে বাড়ীতে রঙ্গ করে নানা তামাশার আয়োজন করা হয়। নিতান্ত অপচয় যাকে বলি। গান বাজনা বিয়ের জন্য কোন উপকরণ বা উপলক্ষ হতে পারেনা, মোটেও না। বরং এসব কালচার বিয়ে নামক সুন্নতি একটি কাজকে কলুষিত করার নামান্তর। বিশালাকার সুসজ্জিত গেইট, লস্কর বাহারি লাইটিং এসবের পিছনে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকার অপচয়ের কোন কারন দেখছিনা- যদি না আপনি বিবেকবান হয়ে থাকেন। পারলে ওসব ব্যয় বাঁচিয়ে এতিম খানায় দান করুন, নতুবা এতিম-মিসকিনদের দিয়ে দেন। হাতের কামাই, কষ্টার্জিত অর্থের অপচয়ের হিসাব কিন্তু ঠিকই একদিন দিতে হবে। তাই আপনার বন্ধু, চাচা, ভাই-বোনদের বিয়েতে এসব না করতে বলুন। বাঁধা দেন। আর বলুন- এসবে আমার মনক্ষুন্ন হয়। এসব অন্তত অবান্তর, অপচয় ও অকাজের কাজ ছাড়া কিছুই নয়।

 

সরকারের আইন তখনই বাস্তবায়ন হয়, যখন আমরা সচেতন হই। আমরা সচেতন হলে সমাজ হবে যৌতুক মুক্ত, দূর হবে নানা অপসংস্কৃতি, বিলুপ্ত হবে বৈষম্য, কলুষিত হবেনা মানবতা, কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবার হবে ভারমুক্ত, অপচয় বন্ধ হবে আয়ে বাড়বে বরকত। তাই সমাজের সকল প্রকার অসংগতিকে না বলুন, স্যরি বলে এড়িয়ে যান।

 

 

লেখক-

শিব্বির আহমদ রানা

(শিক্ষক ও সাংবাদিক)

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল