• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

সন্ধ্যা নদীর তীরে ১৪২ পরিবারে নতুন ভোর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় বহু ঘরবাড়ি। সন্ধ্যার তীরে ভূমিহীনদের জন্য ১৪২টি ঘর তৈরি করেছে সরকার। সেমি পাকা ঘরগুলোর রঙিন টিনের চালার দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হয় যেন লাল-সবুজের পতাকা। এর এক পাশে সন্ধ্যা নদীর শাখা বড় খাল আর অন্য পাশে পিচঢালা পথ। খালের তীরে বাড়িগুলোর সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুল-ফলের গাছ, শাক-সবজির সবুজের সমারোহ। ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন একখণ্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে বসবাস ১৪২টি পরিবারের।

এলাকার সংসদ সদস্য শাহে আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বানারীপাড়া উপজেলায় ১৪২ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর উপহার দেবেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরো ১৬৩ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিয়ে এই উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। উপকারভোগীসহ বানারীপাড়াবাসীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য বানারীপাড়াবাসী উন্মুখ হয়ে আছে।’


প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার এলাকার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা, বরিশাল জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম ফারুক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা আজরিন তন্বী, পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীলসহ উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল সরেজমিনে এ আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহীত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে অসহায় ভিক্ষুকরাও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই ঘর। এসব প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে মিলেমিশে আছে।

খাসজমি কিংবা অন্যের জমিতে ভাঙা ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে যে মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করত, তারা আজ প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারের বাসস্থানসহ নানা সুবিধার ছোঁয়ায় জীবনমান বদলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তাদের মুখে ফুটেছে অনাবিল হাসি।


হালিমা বেগম পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কুণ্ডু বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে মা-ছেলে মিলে কাগজের মোড়ক তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ সুন্দর পাকা ঘর পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। 

আরেক বাসিন্দা শাহীন শিকদারের স্ত্রী সাথী জানান, এর আগে তাঁরা পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া থাকতেন। জমিসহ রঙিন পাকা ঘর পেয়ে তাঁরা খুব খুশি। শহিদ খলিফার স্ত্রী ঝুমুর জানান, তাঁরা পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকতেন। জীবিকা নির্বাহ করতেন পিঠা বিক্রি করে। এর আগে নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় তাঁরা পিরোজপুরের পাড়েরহাট থেকে এখানে পাড়ি জমান।

পপি বিশ্বাস নামের একজন বলেন, ‘আগে আমরা এখানেই ছোট ভাঙা ঘরে থেকে শিশুসন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টিতে অনেক কষ্টে থাকতাম। সরকারের দেওয়া নতুন ঘরে এখন আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। আগের মতো কষ্ট আর নেই।’

বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম ফারুক কালের কণ্ঠক বলেন, সন্ধ্যা ও এর শাখানদীর তীরে মনোরম পরিবেশে আশ্রয়ণে দুই শতক জমিসহ  পাকা ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের স্থায়ী এ ঘরগুলো পাওয়ায়  গৃহহীন-ভূমিহীন অসহায় মানুষগুলোর জীবন বদলে গেছে।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা আজরিন তন্বী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী জুন মাসে বানারীপাড়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করার মানসে কাজ চলছে।’ আজ প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের মাধ্যমে পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ উপজেলার বাইশারী, সলিয়াবাকপুর ও ইলুহার ইউনিয়নে চতুর্থ পর্যায়ে নির্মিত জমিসহ আরো ১৪২টি সেমি পাকা ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করবেন বলেও জানান তিনি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল