• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

শিক্ষা বিস্তারে মোহাম্মদ নাসিম অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২০  

শুরুর কথা :

কাজিপুরের ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন সোনামুখী। বন্দরখ্যাত ইছামতি নদীঘেঁষা এই ইউনিয়নের প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের বাস। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে শিক্ষার হার এই ইউনিয়নে অনেক বেশি।  সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে শিক্ষার চাহিদা এখানে দিন দিন বেড়ে চলেছে। কারণ এই ইউনিয়নের প্রতি পঞ্চাশজন শিশুর মধ্যে একজন শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , কিন্ডারগার্টেন থাকলেও প্রতিবন্ধীদের জন্যে নেই কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত প্রতিষ্ঠান। ঠিক এই চিন্তা থেকেই ইউনিয়নের কৃষ্ণগোবিন্দপুর (পাচঁগাছি) গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “মোহাম্মদ নাসিম অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।” 

 

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস: 

কাজিপুরের মাটি ও মানুষের নেতা সদ্য প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ নাসিম এমপির জীবদ্দশায় তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই বিদ্যালয়টি। পুরো নাম “মোহাম্মদ নাসিম অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।” তিনি এই বিদ্যালয়ের সর্বশেষ খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা  ফরিদুল ইসলাম বাবু। সভাপতি মাহফুজুর রহমান মান্নান।  

  

প্রতিষ্ঠার তারিখ:

২০১৩ সালে সোনামুখী ইউনিয়নের কৃষ্ণগোবিন্দপুর গ্রামের উত্তরাংশে পাকা রাস্তা সংলগ্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি। গতকাল ওই বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলাম বাবুর সাথে।  

তিনি বলেন, “ জন্মগতভাবেই বিকৃত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে যেসব শিশু বেড়ে ওঠে, অস্বাভাবিক আচরণ করে, অন্য সহপাঠিদের সাথে মিশতে পারে না, তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মোহাম্মদ নাসিম অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।”  

 

এলাকা:

সোনামুখীর ইউনিয়নের কৃষ্ণগোবিন্দপুর, রৌহাবাড়ি, চরপাড়া, উত্তর পাইকপাড়া. দক্ষিণ পাইকপাড়া, স্খলবাড়ি, হরিনাথপুর, সোনামুখী বাজার, গাছাবাড়িসহ আশপাশের গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশুরা এই বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। চৌত্রিশ শতক জমির ওপর অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। 

 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান: 

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে (ননএনডিডি ১২ ধরণের প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থী রয়েছে মোট ৩২০ জন। এদের মধ্যে ছেলে ১৯২ জন এবং মেয়ে ১২৮ জন। শিক্ষক সংখ্যা ২৬ জন, অফিস স্টাফ রয়েছে ১৯ জন, ভ্যানচালক ৫ জন।

 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম নিজেও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি জানান, ‘ শিক্ষাথী ও তাদের অভিভাবকদের আনানেয়ার জন্যে ভ্যানগাড়ি ও হুইল চেয়ার সুবিধা রয়েছে।’ 

 

শিক্ষাপোকরণ:

প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় এখনকার শিক্ষকমন্ডলি প্রশিক্ষিত। পাঠদান ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। প্রথম থেকে পঞ্চশ শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। বিনোদনের জন্যে রয়েছে হারমোনিয়াম, তবলা, সাউন্ডবক্স, ফুটবল, লুডু, কেরামবোর্ড। 

 

শিক্ষকমন্ডলি অত্যন্ত যতেœর সাথে এসব সহায়ক উপকরণের মাধ্যমে পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হয়। দূরের শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্যে রয়েছে পাঁচটি অটোভ্যান। এছাড়া হুইল চেয়ারও শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যবহৃত হয়। 

 

শিক্ষার্থীদের সহায়তা:

করোনাকালিন সময়সহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা সহায়তা দেন প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুল ইসলাম বাবু। তাছাড়া সারা বছরের খাতা কলম সব বিনামূল্যে স্কুল থেকে সরবরাহ করা হয়।   

 

স্থাপনাসমূহ:

মোট ৫ টি  টিনশেড বিল্ডিং রয়েছে। এর ছয়টি শ্রেæণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।  ক্লাস চলে দুই শিফটে। আছে বিশেষ কম্পিউটার সুবিধা। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের বসার জন্যে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আছে পাকা টয়লেট, টিউবওয়েল। 

 

সরকারিভাবে পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রেরণ:

“মোহাম্মদ নাসিম অটিস্টিক ও  প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়” এর পরিদর্শন প্রতিবেদন  ২১ জুলাই ২০১৯ তারিখে প্রেরণ করেন মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, সিরাজগঞ্জ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন রান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, ধনবাড়ি টাঙ্গাইল। নিবন্ধনের তারিখ ৫-৮-২০১৮, নবায়নের তারিখ- ৮- ৪-২০২২।

 

 

হিসাব সংক্রান্ত তথ্য:

সরকারি নিময় মেনে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে হিসাব পরিচালনা করা হয়।  হিসাব নং- ৪২১৬৮০১০০৮২১৩। বর্তমান স্থিতি ১ লক্ষ ১ হাজার একশ টাকা। 

 

সভাপতির ও প্রতিষ্ঠাতার মন্তব্য:

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহফুজুর রহমান মান্নান জানান,“কাজিপুরের গণমানুষের নেতা মোহাম্মদ নাসিমের জীবদ্দশায় এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।্ উনি এই বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। আজ তিনি নেই। কিন্তু তার স্বপ্ন আমরা প্রতিবন্ধীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে বদ্ধ পরিকর।”

 

প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুল ইসলাম বাবু জানান, “ যে নেতার নামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে তিনি আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও তার স্বপ্ন ও সম্মান ধরে রাখতে আমরা সচেষ্ট  থাকবো। এরইমধ্যে সরকারি সহায়তার লক্ষ্যে যাবতীয় শর্তই পূরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পথ সুগম হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল