• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

শিক্ষা খাতের নানা উদ্যোগের প্রতি ৯০ ভাগ মানুষেরই আগ্রহ সমর্থন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

শিক্ষা খাতে নেয়া সরকারের নানা উদ্যোগের প্রতি দেশের ৯০ ভাগ মানুষেরই সমর্থন রয়েছে। যেসব খাত সরকারের সমর্থন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে সেগুলোর মধ্যে শিক্ষার অবস্থান শীর্ষে। তবে ‘শিক্ষাকে একক খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তালিকায় এর অবস্থান পঞ্চম।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৮ জানুয়ারি সংস্থার ওয়েবসাইটে (www.iri.org) সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

 

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আসলে মানুষ চায় দৃশ্যমান উন্নয়ন। বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবাইকে উপবৃত্তি প্রদান, দুপুরে স্কুলেই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা, নিরক্ষরতা হ্রাসসহ শিক্ষায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

 

গ্রামে গেলেই দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক পাকা ভবন হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, জনগণ এসব দৃশ্যমান উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিদ্যমান সমস্যাগুলোও দূর করতে হবে।

 

কেননা, সমীক্ষায়ই জনগণ একক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবেও শিক্ষাকে যথার্থই চিহ্নিত করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যার মধ্যে আছে, পারিবারিক ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। ৯০ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রীকে টিউশন ও কোচিং করতে হয়। ক্লাসরুমে পাঠদান নিশ্চিত করা গেলে হয়তো ‘ছায়াশিক্ষা’র দ্বারস্থ হতে হবে না। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও তদারকির মাধ্যমে সরকার এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটাতে পারে।

 

আইআরআই’র সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের প্রতি সমর্থন এক বছরে অনেক বেড়েছে। সংস্থাটি যে ১১টি খাতের ওপর জনসমর্থন মূল্যায়ন করেছে সেগুলো হচ্ছে- শিক্ষার উন্নয়ন, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, পরিবহন-অবকাঠামোর উন্নয়ন, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, গুণগত স্বাস্থ্যসেবা, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ।

 

এগুলোর মধ্যে শিক্ষার উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপকে ৯০ ভাগ মানুষ সমর্থন করেছে। বিদ্যুতে ৮৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম সমর্থন মিলেছে গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণে, মাত্র ৫২ শতাংশ। তবে অধিকাংশ উত্তরদাতাই সরকারের দুর্নীতিবিরোধী লড়াই, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেকারত্ব হ্রাসে নেয়া পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন দেখাননি। এ তিনটিতে সমর্থনের পালা যথাক্রমে ৪৮, ৪০ ও ৩৭ ভাগ।

 

এদিকে প্রতিবেদনে দেশের একক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে ২১টি খাতকে চিহ্নিত করেছেন উত্তরদাতারা। এরমধ্যে দুর্নীতি আছে একনম্বরে। ১৯ শতাংশ মানুষ এ মতামত দিয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে তালিকায় আছে মাদক, বেকারত্ব, নিরাপত্তা, শিক্ষা, ধর্ষণ, দারিদ্র্য এবং স্বাস্থ্যসেবা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যসব খাতের পদক্ষেপ ছাপিয়ে শিক্ষা শীর্ষে চলে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে দৃশ্যমান উন্নয়ন।

 

গত বছর ৭ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ডা. দীপু মনি। তার রানিংমেট হিসেবে যোগ দেন উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে তারা নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাড়ে ৯ বছর পর ২,৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি এবং বছরের শেষ দিকে স্বল্পসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত।

 

এছাড়া জনগোষ্ঠীকে অধিক কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে সব শিক্ষার্থীর জন্য কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং মাধ্যমিক স্তরেও বিনামূল্যে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বিদায়ী বছরে। শেষের দুই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ২০২০ সাল।

 

যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিতে কারিকুলামে পরিবর্তন এবং শিক্ষার্থী মূল্যায়নের পদ্ধতি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা তৈরি, শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করা, একাধিক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হাজিরা তদারকির বিষয়টিও ইতিবাচক হয়েছে।

 

যদিও বছরের বিভিন্ন সময়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, কিছু ভিসির অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসের মতো কিছু ঘটনায় মানুষ বিরক্ত। এছাড়া শিক্ষাখাতে পুরনো সিন্ডিকেটের সদস্যদের পুনর্বাসন ও জাতীয়করণ কাজে অসহযোগিতার মতো কার্যক্রমও সমালোচিত ছিল। তবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এসব তেমন স্পর্শ করেনি।

 

অপরদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন মো. জাকির হোসেন। তার সঙ্গে ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেনের চমৎকার সমন্বয়ে এগিয়ে যায় শিক্ষার এ স্তরটি। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা না নেয়ার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নে ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড কর্মসূচি প্রবর্তন, মিড ডে মিল, শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা বৃদ্ধি করে

 

স্নাতক করাসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে নেয়া অন্য পদক্ষেপও জনগণ স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু, ২৯২ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিজ প্রতিষ্ঠানেই তৈরি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার উত্তরপত্র অন্য উপজেলায় মূল্যায়নের নির্দেশনা এবং বছরজুড়েই প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান ও ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের শাস্তি দেয়া বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) প্রতিমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান প্রশংসিত হয়েছে। তবে এ খাতে শিক্ষার মানের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন, বায়োমেট্রিক হাজিরার ডিভাইস কেনাকাটায় দুর্নীতি, উপবৃত্তি প্রকল্পে কৌশলে লুটপাট, কম্পিউটার সামগ্রী কেনাকাটার প্রকল্প নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক, অভিযোগ ওঠার পরও ওই প্রকল্পের অর্থে প্রতিমন্ত্রী-সচিবসহ কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা অর্জনকে ম্লান করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতা জন ম্যাককেইনের নেতৃত্বে গতবছরের ১ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের ৮ বিভাগের ৬৪ জেলায় ‘মাল্টি স্টেজ স্টার্টিফাইড প্রবাবিলিটি’ নমুনায়নের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ করে এ জরিপ চালানো হয়। এতে ১৮ বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সী ৪,৯৯৩ জনকে নমুনা হিসেবে নেয়া হয়েছিল

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল