• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

লেপ-তোষক তৈরীতে ব্যস্ত কালিহাতীর শীতের কারিগররা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০  

কুয়াশার সকাল আর ঘাসের ওপর ছড়িয়ে পড়া শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের বার্তা। শীতের শুরুতেই টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে লেপ-তোষক তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কারিগররা। ঋতু বৈচিত্রে রাতে কুয়াশা আর দিনে হালকা গরম থাকলেও ঠান্ডার প্রকোপ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ঠান্ডা নিবারণে কালিহাতী উপজেলার মানুষের প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে।

লেপ-তোষক তৈরীর দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মালিক-শ্রমিক লেপ-তোষক তৈরীর সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত মৌসুমের শুরুতেই ক্রেতারা দোকানে পছন্দমতো লেপ-তোষক তৈরীর অর্ডার দিয়ে রেখেছেন।

উপজেলার চারান গ্রামের ফজিলা আক্তার লিলি বলেন, ঠান্ডা বাড়ছে, তাই পুরাতন লেপের তুলা বদলিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে সেলাই করে নিচ্ছি। পরে একটু ঝামেলা হয় তাই আগেই লেপ-তোষক বানাচ্ছি। কালিহাতী সদরের মুন্সিপাড়া জলিল বেডিং হাউজের মালিক আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিটি লেপ-তোষক বানাতে মজুরি হিসেবে দুইশত টাকা করে খরচ হয়। একজন কারিগর ভালো করে তৈরী করলে দিনে ২টি লেপ তৈরী করতে পারে। প্রতিটি ৪-৫ হাত লেপ ১ হাজার ২শত টাকা, তোষক ১ হাজার ৩শত এবং জাজিম ৩ হাজার ৮শত থেকে ৪ হাজার ২শত টাকা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করা যায়। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক বিক্রি বেশি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর লেপের তুলার দাম একটু বেশি। প্রতি কেজি কালা তুলার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিমুল তুলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সাদা তুলা ১০০ টাকা ও কাপাশ তুলা ১৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।

কালিহাতী উপজেলার চারান বাজারের একটি পাইকারী বেডিং হাউজের লেপ-তোষক তৈরীর কারিগর আবুল কাশেম বলেন, শীত শুরু হতে না হতেই কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আমরা ৪-৫ হাতের একটি লেপ ২ ঘন্টায় তৈরী করে দিতে পারি। প্রতিটি লেপের মজুরি দেয় ১শত থেকে দেড়শত টাকা। তোষকের মজুরি দেয় ৫০ থেকে ১শত টাকা এবং জাজিমের মজুরি দেয় ৯০ থেকে ১২০ টাকা। সারাদিনে ৬-৭টি লেপ বানাতে পারি।
এদিকে বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম থাকায় এর চাহিদা বেশি হওয়ায় এবং বেশি আয়ের আশায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলার লেপ-তোষক তৈরীর কারিগররা।

ক্রমেই নিচে নামছে পারদ, হাত বাড়িয়ে আছে হিম শীতল, পৌষ প্রস্তুতি চলছে শীতের অগ্রহায়ণ শুরু হয়ে গেছে। যেখানে গিয়ে শেষ হবে সেখানেই হাত বাড়িয়ে আছে পৌষ। আর পৌষ মাসেই মূলত শীত শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই একটু একটু করে নামছে পারদ। তাপমাত্রা কমছে। শীতের আগেই শীত শীত অনুভূতি। এ অনুভূতিই সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার তাগাদা দিচ্ছে। টাঙ্গাইলে দৃশ্যমান হচ্ছে শীতকেন্দ্রিক নানা ব্যস্ততা।

আবহাওয়াবিদদের মতে এখন যত দিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত শীত বাড়তে থাকবে। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতের স্বীকৃত কাল। এ সময় তীব্র থেকে তীব্রতর শীত অনুভূত হতে পারে। এখন খুব শীত যেমন পড়ছে না, তেমনি উধাও গরম। শীত নেই। গরমও নেই। আবার বলা চলে, শীতের অনুভূতি টের পাওয়া যাচ্ছে। গরমেরও। মূলত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া একেই বলে। ক্রমে শীত নামবে। উষ্ণতা দূর হয়ে যাবে। সে কারণেই এখন রাত সামান্য বাড়তেই শিশির ঝরছে। ঘাসের ডগা, ফুলের পাপড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ছে ঠাণ্ডা জলবিন্দু। সকালের রোদে এই জল চিকচিক করে উঠছে। কবির ভাষায় বললে : সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে…। এখন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গল্প করা, আড্ডা দেয়ায় মানুষের মাথা ভিজিয়ে দিচ্ছে রাতের শিশির। বিন্দু বিন্দু জল মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। অনেকে তাই ক্রিকেটারদের মতো মাথায় ক্যাপ পরে নিচ্ছেন। রাতে ঘুমোনোর সময় বাতির সঙ্গে ফ্যানটিও বন্ধ না করলে এখন চলছে না। শেষরাতে গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে হাল্কা কাঁথাও। ভোরবেলায় সিগারেটের ধোঁয়ার মতো দেখতে কুয়াশা। এ অবস্থায় আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে বৈকি। এরই মাঝে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে টাঙ্গাইলে প্রস্তুতিপর্ব।

শহরের মসজিদ রোডে গিয়ে দেখা যায়, নতুন কম্বলের বিশাল চালান এসে মার্কেটে ঢুকছে। রিকশাভ্যানের ওপরে নানা রঙের কম্বল। স্তরে স্তরে সাজানো কম্বল ওপরের দিকে এত ওঠে গেছে যে, কৌতূহলী চোখ সেদিকে না গিয়ে পারে না। বাইজীদ নামের এক ব্যবসায়ী জানালেন, কম্বলগুলো আসছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। সেখানে অনেক কারখানা। শীত সামনে রেখে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। এসব কম্বল টাঙ্গাইলের বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাথে বিক্রির জন্য চলে যাবে। তবে এখন চাইনিজ কম্বলে বাজার সয়লাব। এরপরও দেশীয় কম্বল বিক্রি করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

টাঙ্গাইলের দোকানে দোকানে ও ফুটপাতে শীতবস্ত্রের আমদানিও বেশ ভাল এখন। বিক্রি চলছে পুরোদমে। এখানকার ছবি দেখে মনে হয় শীতের বাকি নেই। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হতদরিদ্র মানুষের গায়েই সবার আগে কামড় বাসায় শীত। তাই আগেভাগে তারা শীতবস্ত্র কিনতে চলে আসেন।

প্রস্তুতি সেরে রেখেছে বিভিন্ন শো-রুম ও শপিংমলসহ অন্যান্য মার্কেট। দেশী বিদেশী শোরুমে পাতলা জামা কাপড় সরিয়ে গরম কাপড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। লেপ-তোষকের দোকানগুলোতেও চোখে পড়ার মতো ব্যস্ততা। শহরের ছয়আনী বাজারের তুলা পট্রি বাজারের দোকানগুলোতে অহর্নিশ চলছে লেপ-তোষক সেলাইয়ের কাজ।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল