• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

রক্তচোষা!!!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯  

ভ্যাম্পায়ারের কথা উঠলেই আমাদের সামনে উচু কলারের আপাদমস্তক কালো আলখেল্লায় ঢাকা একটি পুরুষ অবয়ব ফুটে উঠে যার চোয়ালের দু'পাশ থেকে দুটো সুচালো দাঁত  ঠোঁট বের করে বেরিয়ে আসে। মানুষের রক্ত পান ক্রার জন্য তারা এই দাঁত দুটো ব্যবহার করে। বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক ব্রাম স্টোকার তার অমর উপন্যাস ড্রাকুলাতে আমাদের ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর তাই ভ্যাম্পারের কথা উঠলেই আমাদের সামনে ড্রাকুলার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। নীচে MATTHEW BUNSON রচিত The Vampire Encyclopedia বই এর সূত্র ধরে প্রতিম দাসের লেখা ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কিত কিছু তথ্য দেওয়া হল।

Abbott and Costello Meet Frankenstein
১৯৪৮ সালে  ইউনিভার্সাল (ইন্টারন্যাশনাল)নির্মিত এই সিনেমাটিকে সবচেয়ে সফল ভ্যাম্পায়ার কমেডি বলা হয়ে থাকে।    চার্লস বারটন  দ্বারা পরিচালিত, চলচ্চিত্রটিতে সেই যুগের ভয়ঙ্কর সিনেমার সাথে যুক্ত এবং    পরিচিত বেশ কয়েকজন তারকা   অভিনয় করেছিলেন । যার মধ্যে উলফম্যান খ্যাত লন চ্যানি, জুনিয়র  এবং ড্র্যাকুলার চরিত্রাভিনেতা বেলা লুগোসির নাম উল্লেখ্য । ১৯৩১ সালের পর লুগোসি পুনরায় তার জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত ভূমিকাতে   অভিনয় করেন।   ড্র্যাকুলার চরিত্রে , জন ক্যারাডিনের অভিনয় করার কথা ছিল প্রথমে । উনি নিজে থেকেই সরে যান।    গ্লেন স্ট্রেঞ্জ অভিনয় করেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্ট দানবের চরিত্রে । এই ভুমিকায় অভিনয়ের জন্য আগে থেকেই জন্য উনার খাতি ছিল।  
 উদ্ভট পাগলামোর জন্য বিখ্যাত এই সিনেমার কাহিনীতে দেখা যায় ড্রাকুলা দানবটির জন্য একটি সহজ সরল মানুষের    মস্তিষ্কের খোঁজ করছেন। যার সাহায্যে দানবটিকে সহজে    নিয়ন্ত্রন করা যাবে ।  হয়। উইলবার ব্রাউন,  নামক এই মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেন লৌ কস্টেলো ।  ড্রাকুলা অপহরণ করে ব্রাউন কে। তাকে বাঁচাতে যায় উলফম্যান আর চিকের চরিত্রে অভিনয় করা বাড অ্যাবট । তারপর পূর্ণিমার রাতে যে জগঝম্প কান্ডকারখানা ঘটে সেটাই এই কাহিনীর মূল ইউ এস পি ।
 এই চলচ্চিত্রটির নির্মাণ প্রমান করে ড্রাকুলার মতো ভয়াবহ চরিত্রকে নিয়ে কমেডি বানানো সম্ভব ।   
The Adventure of the Sussex Vampire
স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা একটি শার্লক হোমস রহস্য কাহিনী । প্রকাশিত হয়েছিল স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে, ১৯২৪ সালে । একসাথে প্রকাশিত হয়েছিল কেসবুক অফ শার্লক হোমস গ্রন্থে । এক দক্ষিন আমেরিকান ভদ্রমহিলাকে দেখতে পাওয়া যায় তার শিশু সন্তানের রক্ত পান করতে । মনে করা হয় এটী একটি ভ্যাম্পায়ারিজমের ঘটনা । তদন্তে নামেন  গোয়েন্দা শার্লক এবং ডঃ ওয়াটসন । একটি প্যারালাইজড কুকুর, দক্ষিন আমেরিকার শিকার সংক্রান্ত কিছু সামগ্রী, এক অনুশোচনাগ্রস্থ স্বামী, এক ক্রুদ্ধ রুষ্ট প্রথম সন্তান সব মিলিয়ে খোঁজ মেলে কাহিনীর আসল রহস্যের । এ কাহিনী এক অদম্য মাতৃসত্তার ।
লাস্ট ভ্যাম্পায়ার নামে এই গল্পটির টেলিভিশন চিত্রায়ন হয়েছিল । হোমসের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জেরেমি ব্রেট ।বিবিসি রেডিও ফোরেও এর নাট্যরুপ প্রচারিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে ।
Alucard
১৯৪৩ সালে ইউনিভার্সাল পিকচার্স এর সিনেমা ‘সন অফ ড্রাকুলা’তে এই নামটি পাওয়া যায় । কাউন্ট ড্রাকুলা এই নাম পুরো সিনেমায় একাধিকবার ব্যবহার করেছেন । এর ফলে এক অদ্ভুত রকমের কমেডির সৃষ্টি হয়েছে। ইংরেজি ড্রাকুলা বানানটিকে উলটো করে উচ্চারন করলে এই নাম পাওয়া যায় । অভিনয় করেছিলেন লন চ্যানি জুনিয়র ।
Aluga[Aluca]
ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষা শয়তানকে এই নামে ডাকা হয় । অর্থ ঘোড়া-জোঁক । ল্যাটিন ভাষায় যার থেকে সাঙ্গুইসুগা শব্দটি জন্ম নিয়েছে । অর্থ রক্তচোষা । অ্যালুগা শব্দটির সাথে অ্যারাবিয়ান আল্গুল বা ঘৌল এর সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয় । তবে সাধারণত রক্তখেকো শয়তান বা ভ্যাম্পায়ারদের শয়তান রাজাকে এই শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়ে থাকে।
Victor Ardisson
১৯০১ সালে ভিক্টর আরডিসনকে দক্ষিন ফ্রান্সের মুইতে গ্রেপ্তার করা হয় ভ্যাম্পায়ারিজমের দায়ে । একধিক কবর খোঁড়ার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে । তদন্তে প্রকাশ পায় এই বিকৃত মানসিকতাগ্রস্থ অপরাধীর আসল চেহারা । সে আদপেই ভ্যাম্পায়ার ছিলনা । তবে কেন সে কবর খুঁড়তো? এর উত্তর মানুষটি ছিল নেক্রোফিলিয়াক । যে সমস্ত সুন্দরী মহিলাদের সে বাস্তব জীবনে দেখেছিল তারা মারা গেলে তাদের কবর খুঁড়ে মৃতদেহর সাথে সহবাস করতো আরডিসন । ডঃ অ্যালেক্সিস ইপৌলার্ড এই বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে একটা থিসিস লিখেছিলেন ওই একই বছরে। আরডিসনের স্থান হয় মানসিক হাসপাতালে ।
Asanbosam
আফ্রিকার ভ্যাম্পায়ার প্রজাতি । এদের কথা শোনা যায় দক্ষিন ঘানার আসান্থি এবং আইভরি কোস্ট ও টোগোর এলাকায় । ঘন জঙ্গলে বাস করে আসানবোসাম বা আসানবন্সাম । স্থানীয় অনেক শিকারীই এদের দেখা পেয়েছে । আকারে সাধারন মানুষের মতো । দাঁত লোহার এবং পায়ে হুকের মতো জিনিষ থাকে । গাছের ডালে বসে থাকে। নিচ দিয়ে মানুষ গেলে ওই হুকে আটকিয়ে তাকে উঠিয়ে নেয় এবং রক্ত চুষে হত্যা করে। নারী, পুরুষ এবং ক্ষুদ্রাকৃতি আসানবোসাম আছে বলে বিশ্বাস ।
Ash
ভ্যাম্পায়ারকে মারার জন্য কিলক বানানো হয় এই অ্যাস গাছের কাঠ দিয়ে। ইউরোপে এর বহুল প্রচলন আছে বা ছিল বলা যায়। উত্তর ইউরোপ, রাশিয়া এবং বাল্টিক এলাকায় এটি ভ্যাম্পায়ার দমনের অন্যতম হাতিয়ার । রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার তার ন্যাচরাল হিস্ট্রি বইয়েতে লিখে গেছেন যেকোনো ধরণের শয়তান তাড়াতে অ্যাস কাঠ অতীব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস । নর্স পৌরাণিক গাথা অনুসারেও এই গাছ বিশেষ সম্মানের অধিকারী । সম্ভবত এই গাছের নামের জন্মও হয়েছে নর্সদের সুত্রে ।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল