• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

যে গ্রামে দেশ বিদেশের মানুষ আসে কালো জাদু শিখতে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আমাদের সমাজে কারও অসুখ-বিসুখ হলে, অনেকেই বলে তাকে জাদু-টোনা করেছে, বান মেরেছে। তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাও। কালো জাদু কি সত্যিই রয়েছে? এর অস্তিত্ব নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। এটি এমন এক ধরনের চর্চা যা অন্যের অনিষ্ট সাধনে কিংবা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে করা হয়। কালো জাদু অতিমানবিক ও অশুভ শক্তির সংশ্লিষ্টতা। বলা হয়ে থাকে কালো জাদু দিয়ে ভূত, প্রেত, প্রেতাত্মা ইত্যাদি বশ করে তাদের দিয়ে নানা কাজ করা যায়। 

আসামের জেলাগুলোর মধ্যে অত্যন্ত পরিচিত একটি জেলা হল মরিগাঁও। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এই জেলাতেই রয়েছে গা ছমছমে একটি গ্রাম। যার নাম মায়ং। গুয়াহাটি থেকে ৪০ কিলোমাটার দূরে হলেও এই গ্রাম আজও যেন পড়ে রয়েছে সেই প্রাচীন যুগে। আজও এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা কালো জাদু বা ডাইনি বিদ্যা। 

 

শুনলে সত্যিই অবাক লাগে। সভ্য জগতের মানুষের কাছে কালো জাদু আজ কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু মায়ং ও আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ আজকের বিজ্ঞানের যুগেও এই কালো জাদুতেই ভরসা রাখেন। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরাও ছুটে আসেন মায়ংয়ের কালো জাদু দেখতে। অনেকের মতে, সংস্কৃত শব্দ মায়া থেকেই মায়ং শব্দের উৎপত্তি। গুয়াহাটি থেকে চার কিলোমিটার দূরে পবিতরা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে অবস্থিত এই গ্রাম। 

 

ম্যায়ং সেন্ট্রাল নামে সেখানে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। যেখানে কালো জাদুতে ব্যবহৃত সমস্ত পুরনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখা রয়েছে পর্যটকদের জন্য। দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ নাকি আগে এই গ্রামে আসতেন কালা জাদু শেখার জন্য। ম্যাজিসিয়ান পিসি সরকারও বলেছিলেন, তার জীবনে এই গ্রামের প্রভাব রয়েছে। 

 

মায়ং গ্রামে কালো জাদু নিয়ে নানা মিথ রয়েছে। শোনা যায়, যেকোনো সময়ে মানুষকে অন্য কোনো প্রাণীতে পরিণত করে দিতে পারতেন ওঝারা। ফুলকে পরিণত করে দিতে পারতেন কোনো প্রাণীতে! এমনকি কারও কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে নাকি পানিতে ফুল ভাসিয়ে বলে দিতে পারতেন ঠিক কোথায় গেলে পাওয়া যাবে সেটা।

 

অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ওঝারা নাকি চোখের সামনে নিজেদের গায়েব করেও দিতে পারতেন। মন্ত্র পাঠ করে হিংস্র বাঘকেও বশে আনতে পারতেন তারা, শোনা যায় এমনই। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ছিল যে, ওঝারা ভূত পুষতেন। আর সেই ভূতই তার ক্ষমতাবলে এই সব অসাধ্য সাধন করে দেখাত।

 

কালো জাদুর রমরমা এই গ্রামে এতটাই ছিল যে, গ্রামের প্রতিটা মানুষ এই জাদু বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বংশ পরম্পরায় জাদুবিদ্যার পাঠ দেয়া হত। আশেপাশের গ্রাম থেকে মানুষেরা ছুটে আসতেন যেকোনো সমস্যার সমাধানে। এটাই হয়ে ওঠেছিল জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়।

 

বর্তমানে গ্রামটিতে ১০০ জন কালো জাদুকর রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই বয়স্ক। নব প্রজন্মের প্রত্যেকেও এই কালা জাদু জানেন। তবে তাদের মধ্যে কালো জাদুর প্রতি আগ্রহ নাকি আগের থেকে কিছুটা কমেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চাপে বর্তমানে তাদের অন্যান্য পেশাও আপন করে নিতে হচ্ছে।

 

কারণ, আগে গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের এই ওঝাদের কাছেই নেয়া হত। কালো জাদু করে নাকি রোগ সারিয়ে তুলতেন ওঝারা। বিনিময়ে মিলত টাকা। তবে বর্তমানে অনেকেই রোগীদের চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান। ফলে রোজগারের রাস্তা কমেছে ওঝাদের। তবে আজও অসংখ্য মানুষ পিঠ ব্যথা, সাপের কামড়, পাগলামি-র রোগী নিয়ে আসেন মায়ং গ্রামে। তিলক হাজারিকা বা অন্যান্য তান্ত্রিকরা হাত লাগান সেই সব রোগের নিয়াময়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল