• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

মধুপুরের চাঞ্চল্যকর চারজনকে হত্যার ঘটনায় তিনজন আটক

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২০  

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় একই পরিবারের চারজনকে গলাকেটে চালঞ্চ্যকর হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নিহত ওসমান গণির বড় মেয়ে সোনিয়া বেগম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সোনিয়া উপজেলার কাকরাইদ গ্রামের শামসু মিয়ার স্ত্রী।

 

এদিকে, শুক্রবার বিকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

আটককৃতরা হচ্ছেন- মধুপুর পৌরসভার মাস্টারবাড়ি এলাকার আবু তাহেরের ছেলে জামাল(৩৫), সালাম (২৭) ও সাইফুল (২৩)।

মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিক কামাল মামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই রহস্য উন্মোচন হবে।

তিনি আরো বলেন, শনিবার (১৮জুলাই) নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে। তারা সম্বপর্কে নিহত ওসমান গনির শ্যালক।

এর আগে শুক্রবার মধুপুর পৌর শহরের পল্লীবিদ্যুৎ রোডের উত্তরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনটি পৃথক কক্ষে চার জনের লাশ পড়েছিল।

একটি কক্ষে দুটি মরদেহ এবং বাকি দুটি কক্ষে একটি করে মরদেহ পাওয়া যায়। নিহত চারজনকেই গলাকেটে এবং কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতরা হচ্ছেন- গাজিবুর রহমান গাজীর ছেলে মো. ওসমান গণি ওরফে গণি মিয়া(৪৫), তার স্ত্রী তাজিরন ওরফে তানিয়া ওরফে বুচি(৩৭), ছেলে তাইজুল ইসলাম তাজেল(১৭) ও মেয়ে সাদিয়া খাতুন(৯)।

শুক্রবার দুপুরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিআইডি, সিআইডি’র ফরেন্সিক টিম, পিবিআই, ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তাক্ত একটি কুড়াল (কুঠার) উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত গণি মিয়ার শ্যালক জামাল হোসেন বলেন, তার বোনজামাই খুব ভালো মানুষ ছিল। নিহত ভাগ্নে তাজেল ধনবাড়ীর ভাইঘাট কলেজের শিক্ষার্থী।

নিহত গণি মিয়ার চাচা শ্বশুর ও প্রতিবেশী হাবেল মিয়া বলেন, উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রাম থেকে ৭-৮ বছর আগে এসে গণি মিয়া শশুর বাড়ির কাছে উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৯ লাখ টাকায় ৬ শতাংশ জমি কিনে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন।

নিহত ওসমান গণি ওরফে গণি মিয়া মধুপুর পৌর এলাকার পোদ্দারবাড়ী গ্রামের মৃত গাজীউর রহমান গাজীর ছেলে। তিনি রিকশা-ভ্যান কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন।

হাবেল মিয়া আরো জানান, গত বুধবার (১৫জুলাই) গ্রামের বাড়ি পোদ্দারবাড়ীতে জমি-জমা ভাগ-বন্টন করতে যান গণি ও তার পরিবারের সদস্যরা। গ্রামে তার এক ভাই ও এক বোন রয়েছে।

তবে সেদিন জমি ভাগ-বন্টন না হওয়ায় পরেরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সালিশী বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার(১৭ জুলাই) নিজ ঘরে তাদের চারজনের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেল। তাদের ধারণা জমি সংক্রান্ত বিরোধেই এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।

 

নিহতের গ্রামের বাড়ি ও মধুপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈন খান বলেন, নিহত ওসমান গণির আরো দুই ভাই আছেন। এদের মধ্যে আব্দুর রশিদ নামে একভাই মারা গেছেন এবং আব্দুল লতিফ নামে অপর এক ভাই এখনও গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন।

গত সপ্তাহে আব্দুল লতিফের সাথে মৃত আব্দুর রশিদের ছেলেদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তাকে সালিশে বসার কথা বলা হয়েছিল। তবে করোনার কারণে তিনি সালিশী বৈঠকের আয়োজন করেননি।

ঘটনাস্থল ও মধুপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম খান পলাশ জানান, নিহত গণি মিয়া সম্প্রতি এ ওয়ার্ডে বাড়ি করায় তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। এছাড়াও নিহত ওসমান গণি ওই ওয়ার্ডের ভোটার হননি বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে নিহতদের বাড়ির ৩টি ঘর থেকে ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। সাথে একটি কুড়ালও পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, নিহতদের শরীরে কুড়ালের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি কখন ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না। রুমটি বাইরে থেকে তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল, কেউ জানতো না এখানে এমন ঘটনা ঘটেছে।

আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে এই হত্যার প্রকৃত রহস্য বলা যাবে। খুব দ্রুতই এর রহস্য উদঘাটন করা হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল