• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ভারতে বাদুড়ের শরীরে মিললো নতুন করোনা ভাইরাস (বিটি-কোভ)

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২০  

প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে পুরো বিশ্ব। এ পরিস্থিতির মধ্যেই  নতুন একটি তথ্য দিয়েছে ভারতের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (আইসিএমআর) গবেষকরা। দেশটির কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, পুদুচেরি এবং তামিলনাড়ুর দুই প্রজাতির বাদুড়ের মধ্যে ভিন্ন ধরনের এক করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আইসিএমআর’র গবেষকরা।

বাদুড়ের শরীরে খুঁজে পাওয়া এ ভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছে ব্যাট করোনাভাইরাস (বিটি-কোভ)। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এ নাম দিয়েছেন।

 

ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিকেল রিসার্চে আইসিএমআর’র বিজ্ঞানীদের করোনা নিয়ে নতুন এ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, পুদুচেরি এবং তামিলনাড়ুর রোসেটাস ও টেরোপাস প্রজাতির প্রায় ২৫টি বাদুড়ের শরীরে করোনা (বিটি-কোভ) পাওয়া গেছে।

 

এই ব্যাট করোনাভাইরাস মানবদেহে কোনো রোগ সৃষ্টি করতে পারে কি না সেব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছেন আইসিএমআর’র গবেষক দলের সদস্য এবং পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) বিজ্ঞানী ডা. প্রজ্ঞা ডি যাদব। এ বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

ডা. প্রজ্ঞা যাদব বলেন, আমাদের গবেষণায় ভারতীয় দুই প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে বিটি-কোভ শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, পুদুচেরি ও তামিলনাড়ুর রোসেটাস ও টেরোপাস প্রজাতির বাদুড়ের গলা এবং মলদ্বার থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় ভিন্ন ধরনের এ ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। তবে কর্ণাটক, চান্ডিগর, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, গুজরাট এবং উড়িষ্যা থেকে এই প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

 

নতুন এই ব্যাট করোনাভাইরাসের সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য দায়ী সার্স-কোভ২ ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন ডা. প্রজ্ঞা যাদব। তিনি আরো জানান এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কেরালায় টেরোপাস প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে নিপাহ নামের এক ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

 

প্রাকৃতিকভাবেই বাদুড়কে অনেক ভাইরাসের জলাধার বলে মনে করা হয়। এদের মধ্যে কিছু ভাইরাস রয়েছে যা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। অতীতে ভারতে টেরোপাস প্রজাতির বাদুড়ের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ-২) এর সঙ্গে বাদুড়ের সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের রোসেটাস ও টেরোপাস প্রজাতির বাদুড়ের শরীরের করোনা শনাক্তকরণ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য জানানো হয়।

 

গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে জনসংখ্যা কাঠামো এবং বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত কৌশলগুলোতে পরিবর্তন আসার ফলে বাদুড়ের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষের সংস্পর্শ ঠেকানো প্রায় কঠিন হয়ে পড়েছে। বাদুড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসজনিত প্রাদুর্ভাব এড়াতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারি দরকার বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

 

গবেষকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, একই গোত্রের বিভিন্ন করোনাভাইরাস বাদুড়ের শরীরে থাকলেও এর ক্লিনিকাল কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। তবে এ ভাইরাসগুলো মানবদেহ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণ ঘটালে তীব্র শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে প্রদাহ এবং অন্যান্য নিউরোলজিক রোগ হতে পারে। তবে কিছু করোনাভাইরাস শুধুমাত্র কেন মানবদেহেই সংক্রমণ ঘটায় সে ব্যাপারে এখনো কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

 

ভারতীয় গবেষণা দলের এই বিজ্ঞানীরা বাদুড়ের শরীরে জিনেটিক সংক্রমণের ব্যাপারে আরো বেশি করে নজরদারির ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ায় দেশটির ওই সব অঞ্চলের মানুষ ও প্রাণীর শরীরের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সুপারিশও করেছেন তারা।

 

এছাড়া এ ভাইরাস যদি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মহামারি পরিস্থিতি তৈরি করে তবে সেই বিষয়ে এখনই নজরদারি বাড়ানো উচিত বলেও সতর্ক করেছেন গবেষকরা। দেশটির বন্যপ্রাণী, পোলট্রি, পশুপালন ও মানব স্বাস্থ্য বিভাগকে একসঙ্গে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল