• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বৃহত্তম গণতা‌ন্ত্রিক দে‌শ ভারতে ‌ভোটপর্ব শুরু

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯  

ভারতীয় উপমহাদেশে নির্বাচন হচ্ছে উৎসব। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষায়, নির্বাচন ‘গণতন্ত্রের উত্সব’। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে সেই উত্সবই শুরু হতে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। 

 

এ রীতিমতো ম্যারাথন নির্বাচন। এক মাসের বেশি সময় ধরে ধাপে ধাপে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে প্রায় ৯০ কোটি ভারতীয়। এবার অবশ্য মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগের খামতি নেই। ‘সবার উন্নতির’ (সবকে সাথ সবকা বিকাশ) প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। 

 

 

লেজে-গোবরে ঘেঁটে গেছে তাঁর মুদ্রা সংস্কার আর করনীতি। যদিও তাঁর এত ‘অদক্ষতা’ এক পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা দিয়েই ধুয়ে গেছে। নতুন জরিপে বলা হচ্ছে, আবারও ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন মোদি, তিনি এখনো (পাকিস্তানে হামলার পর) দারুণ জনপ্রিয়।

 

মোদির ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধীর এই নাতির বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগেও অভিযোগের অন্ত ছিল না। তিনি ছেলে মানুষ, অপরিণত, দূরদৃষ্টির অভাব, রাজনীতিতে অনীহা—এমন চর্চা যেমন দলে ছিল, তেমনি ছিল দেশেও। বিরোধীদের কথা আর নাই বা বললাম। বিস্ময়করভাবে সব কটি অভিযোগ কাটিয়ে রাহুল এখন পরিণত রাজনীতিক। গত দুই বছরে নানা রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল, কংগ্রেসের এবারের রণনীতি (ভোটের কৌশল), বিরোধীদের আক্রমণ করার ধরন, বক্তৃতা সর্বোপরি বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত সে কথাই প্রমাণ করে।

 

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যায় গৈরিক ঝড়। সেবারের ওই ঝড়ে খড়কুটার মতো ভেসে গিয়েছিল ভারতের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস। ১৯৮৪ সালে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর বিজেপিই প্রথম দল যারা এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে তেমন জয় ছিনিয়ে নেওয়ার কোমরের জোর এবার আর মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেই। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বুঝে-শুনে হিসাব কষে এগোতে হচ্ছে বিজেপিকে। অঞ্চল হিসেবে আসন আর ভোটের হিসাবে এবার কোনো কোনো রাজ্য বিজেপির কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। আবার বিশেষ দৃষ্টি পড়েছে কোনো কোনো রাজ্যের ওপর।

 

কাশ্মীরের বরফ জড়ানো পর্বত থেকে শুরু করে রাজস্থানের মরুভূমি পর্যন্ত সুবিশাল ভোটযজ্ঞের ঢাকে কাঠি পড়বে আজ সকাল থেকে। চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। তবে ভোটের চূড়ান্ত ইতি ঘটবে ২৩ মে। ভোট গণনা আর ফল প্রকাশ ওই দিন। এই সুবিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। ১১ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। এর মধ্যে চীনা সীমান্তবর্তী একটি কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে মাত্র একজন। তার জন্য সেখানে নির্বাচনী কর্মী গেছেন ১১ জন। এই নির্বাচন শুধু উত্সবই নয়, ভীতির বাতাবরণও তৈরি করে। গেলবারের নির্বাচনে নানা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক। সবই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এমনিতেই ভারতের ৯টি রাজ্যে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তত্পরতা রয়েছে।

 

কথার রাজা মোদি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে ক্ষমতায় এলেও পাঁচ বছরে এগুলো পূরণে তেমন কোনো তত্পরতা দেখাতে পারেননি। খরা, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া আর ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে বহু কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বছরে দুই কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও গত পাঁচ বছরের বাস্তবতা ছিল ঋণাত্মক। চাকরি হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ। কাগুজে নোট সংস্করণেও হাত দেন মোদি, ৮৬ শতাংশ নোট বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়। কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়। শেষ দুটি সংস্কারই ভারতের অর্থনীতিতে নেতিবাচক ছাপ ফেলে।

 

আর এগুলোই এবারের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নেহরু-গান্ধী পরিবারের এবারের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী রাহুল গান্ধী। বোন প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে কোমর বেঁধে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। রাহুলের দাবি, মোদি দেশে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। ‘সবার জন্য ন্যায়’ করার স্লোগান নিয়ে রাহুল চষে বেড়াচ্ছেন পুরো দেশ। এবার মুখে খই ফুটছে তাঁর। সরকারের রাফাল দুর্নীতি (যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতি), বেকারত্ব, কৃষকদের সংকট, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি তুলে ধরছেন জনগণের জন্য তাঁর ঝুলিতে কী কী রয়েছে তার ফিরিস্তি। সব মিলিয়ে রাহুলকে বোধহয় এবার আর ছেলে মানুষ বলে এককথায় বাতিল করে দেওয়া যাবে না।

 

এ বছরের নির্বাচনে মোদিগোষ্ঠীর প্রধান প্রচারের হাতিয়ার ‘হিন্দুত্ববাদ’। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান বিদ্বেষ। ভোটের তারিখ ঘোষণার আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন মোদি। প্রচার চলছে টুইটার আর হোয়াটসঅ্যাপে। মোদি নিজেও দারুণ সক্রিয় এসব ক্ষেত্রে। এখানে তিনি নিজের পরিচয় দিচ্ছেন ‘চৌকিদার নরেন্দ্র মোদি’ হিসেবে।

 

কৌশলীও হয়েছেন। হিসাব কষছেন। উত্তর প্রদেশে গতবার বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। জনসংখ্যার দিক থেকে এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য। লোকসভার সদস্যসংখ্যা বিচারেও তাই। বিজেপির উত্থান বুঝে উত্তর প্রদেশে এবার জোট বেঁধেছেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এবং দলিত নেত্রী মায়াবতী। আঞ্চলিকভাবে তাঁরা বুয়া-ভাতিজা হিসেবে পরিচিত। ভোটের হিসাবে দেখা যায়, এই দুই দলের জোটের পর বিজেপির এ রাজ্যে জয়ের আশা অনেকটাই কমে যায়। সে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বিজেপি মনোযোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর দিকে। এসব রাজ্যে ইদানীং ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে মোদিকে।

 

প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পারসা ভেংকটেশ্বর রাও বলেন, ‘নির্বাচন সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। ২০০৪ সালের কথা মনে পড়ছে। সেবার বাজপেয়ি ও বিজেপি ধরাশায়ী হয়। অথচ সবার ধারণা ছিল তারাই জিততে যাচ্ছে।’ কাজেই এবার জরিপগুলো যতই পূর্বাভাস দিক, ৫৪৩ আসনের লোকসভায় ‘জাদু সংখ্যা’ ২৭১ (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) ছুঁতে যাচ্ছে বিজেপি, বাস্তবে তা নাও ঘটতে পারে। হয়তো শেষ পর্যন্ত মোদি নয় হেসে উঠবেন কংগ্রেসের ‘পোস্টার বয়’ রাহুল।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল