• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বিশ্বের ৬৮ দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের টমেটো

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

রপ্তানি খাতে বিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন এখন কৃষিপণ্যে। বর্তমানে ১৪০টিরও বেশি দেশে কৃষিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি খাতে এগিয়ে রয়েছে টমেটো। এর মধ্যে বিশ্বের ৬৮ দেশে রপ্তানি হচ্ছে টমেটো। বিশ্বজুড়ে কদর বাড়ছে বাংলার টমেটোর। রপ্তানিতে নতুন নতুন কৃষিপণ্য যোগ হওয়ায় বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানির আশা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সত্যি হতে চলেছে। সরকারের সহযোগিতায় ২০৩০ সাল নাগাদ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


 
কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। অন্যান্য সবজি এবং ফলের তুলনায় প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে টমেটো। দেশে উৎপাদিত টমেটোর বড় অংশই এখন প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে সস, ক্যাচাপ ও টমেটো পেস্টের বাজার বার্ষিক আড়াইশ কোটি টাকার। এই বাজারের পরিধি বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। বর্তমানে মালয়েশিয়া, সংযুক্ত

আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সুইডেনসহ বিশ্বের ৬৮ দেশে রপ্তানি হচ্ছে টমেটোর সস, ক্যাচাপ ও টমেটোর পেস্ট।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, করোনার কারণে প্রায় পাঁচ মাস শাক-সবজি রপ্তানি বন্ধ ছিল। এর পরও বছর শেষে ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে। এই প্রবৃদ্ধি দেশের সব খাতের রপ্তানির মধ্যে একক পণ্য হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ইপিবি তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৩ কোটি ডলারের শাক-সবজি রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিপরীতে শাক-সবজি রপ্তানি হয়েছে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। আগের বছর সবজি রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি ডলারের। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পটোল, বেগুন, বরবটি, চিচিঙ্গা, পান ইত্যাদি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরিশাস, ভারত, সুইডেন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, কুয়েত, ভুটান, সিয়েরালিওন ও সেনেগালে বড় পরিসরে কৃষিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, ইফাদ, অলিম্পিক, রোমানিয়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও আছে অনেক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। কৃষিপণ্য রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কৃষি ও কৃষিজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা। ইউরোপের দেশগুলোতেও চাহিদা রয়েছে শাক-সবজির। শুধু ইউরোপ নয়, মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের সবজি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে চা, তামাক, ফুল, ফল, মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আটা, সুজি, বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবার, হোম টয়লেট্রিজ, গুঁড়া মসলার চাহিদা বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে। এমনকি পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন খাদ্য আমদানির জন্য বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের দিকে ঝুঁকছে।

কোভিড ১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন একটি কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন। যেখানে ৮টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হালাল খাদ্যপণ্য রপ্তানির কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন  বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে উৎপাদনমুখী কাজ অব্যাহত থেকেছে। এতে করে ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। করোনা-পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধ, হালকা প্রকৌশল ও কৃষিজাত পণ্যের মতো অপ্রচলিত পণ্য খুব ভালো করছে। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো খাদ্যজাত কৃষিপণ্য আমদানির আগ্রহ দেখিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন এখন আমাদের সামনে।

এ বিষয়ে প্রাণের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল  বলেন, দেশে বিভিন্ন টমেটোজাত পণ্যের একটি বড় অংশ উৎপাদন করছে প্রাণ গ্রম্নপ। বছরে ১৮ হাজার টন টমেটো সস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে প্রাণের। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আমানতপুরে প্রাণের বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (বিআইপি) রয়েছে। বর্তমানে বছরে ১২ হাজার টন টমেটো প্রক্রিয়াজাত করছে প্রাণ।

পোলান্ডে খাদ্য রপ্তানি করেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, মূলত গ্রীষ্মকালীন সবজি রপ্তানি করেন তিনি। এই খাতে রপ্তানির বাজার আরও বাড়াতে চাইলে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে কোয়ারেন্টিন সার্টিফিকেট দেয়, তার ওপর অনেক দেশেরই আস্থা নেই। তিনি বলেন, বছরজুড়ে পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের টমেটো। আধুনিক প্রযুক্তির মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করায় কমেছে খরচ, বেড়েছে উৎপাদন। বারোমাসি টমেটোর পুষ্টিমানও ভালো। রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বলে রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে যোগ হয়েছে টমেটো।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক  বলেন, কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদ্যমান রপ্তানি নীতিতে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষিপণ্য উন্নয়নে বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বালাইমুক্ত কৃষিপণ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল