• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বাঙালির আঁকা দু’শো বছর আগের ছবির ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে স্থান

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২০  

কোনোটায় আঁকা রয়েছে একটা গিবন আবার কোনোটায় কালো লোমশ ভালুক। দেখেই বোঝা যায় আঁকাগুলির কোনোটিই সাম্প্রতিক নয়, অনেক বছরের পুরনো। কিন্তু কী অদ্ভুত ডিটেইল! যেন নিখুঁত হয়ে ফুটে উঠছে প্রাণীগুলোর চামড়ার প্রতিটি ভাঁজ, লোম। 

সম্প্রতি ব্রিটিশ লাইব্রেরির সংগ্রহে আসা ২০টি পুরনো চিত্র আর পুঁথির মধ্যে জায়গা পেয়েছে এই ছবিগুলিও। এখানেই জড়িয়ে আছে একটি আশ্চর্য তথ্য। ওই ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে চারটি ছবি, যার সঙ্গে নাম জড়িয়ে আছে একজন অজ্ঞাতপরিচয় বাঙালির। ইতিহাসের ভুলে যাওয়া পাতায় তাঁর নাম শুধু ‘হালুদার’। একজন প্রকৃতিবিদ হিসেবে আঁকা তাঁর এই ছবিগুলিই প্রথমবারের জন্য দর্শকদের সামনে আসছে।

 

কিন্তু কে এই হালুদার? হালুদার কি হালদার-এর অপভ্রংশ? জানা যায় না। সেইরকমই অজ্ঞাত থেকে যান এই ‘হালুদার’ মশাই। কিন্তু যতটুকু জানা যায়, সেই তথ্য অনুযায়ী সতেরো ও আঠেরো শতক জুড়ে ছিল তাঁর কাজের বিস্তৃতি। তাঁর সঙ্গে যোগসূত্রের একটি মাধ্যম হলেন সেই সময়ের একজন স্কটিশ সার্জন, নাম ডঃ ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিলটন। পলাশির যুদ্ধের পরপরই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাক্তার হিসেবে তিনি ভারতে চলে আসেন। তখনই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় হালুদারের। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সিস বুকানন কিন্তু স্রেফ ডাক্তারি করেই বসেছিলেন না। ভারতীয় উপমহাদেশে যে সমস্ত জীবজন্তু পাওয়া যেত, সেগুলোর সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। শুধু তাদের জৈবিক তথ্য নয়, ছবিও তো চাই। এখনকার মতো ক্যামেরা তো ছিল না যে সঙ্গে সঙ্গে সবসময় নিয়ে ঘোরা যাবে। এঁকে রাখতে হত সেসব। সেই কাজেই বুকাননের সহযোগী ছিল এই হালুদার।

 

১৭৯৫ থেকে ১৮১৮— এই বিস্তৃত সময় গোটা ভারত ঘুরে ২৮টি ছবি এঁকেছিলেন হালুদার। পুরোটাই ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক। তাদের গঠন, গড়ন, বৈশিষ্ট্য সবকিছু যেন লেগে থাকত আঁকায়। গিবন, শ্লথ ভালুক, ভারতীয় সম্বর হরিণ-সহ অনেক প্রাণীই উঠে এসেছিল তাঁর কলমে। যত্ন করে সেই কাজ করেছিলেন হালুদার। লন্ডনেও পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর কাজ। পরে অবশ্য কী হয়েছিল, জানা যায় না। তাঁর জীবন, আসল নাম, পরিচয় কিছুই প্রায় জানা যায় না। শুধু তাঁর কাজ আর কলকাতার বাসিন্দা— এইটুকুই লুকিয়ে ছিল ইতিহাসে। বুকাননের সেই সংগ্রহে ওই ২৮টি আঁকা থেকেও গিয়েছিল। কিন্তু কখনও সামনে আসেনি। সম্প্রতি ব্রিটিশ লাইব্রেরি লোনের মাধ্যমে ২০টি ছবি নিলে, তার মধ্যে হালুদারের চারটি আঁকার খোঁজ পাওয়া যায়। এই বছরের এপ্রিলেই ‘ফরগটেন মাস্টার্স’ নামের একটি প্রদর্শনীতে জায়গা পাবে এই বাঙালির কাজ।

 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল