• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল
সর্বশেষ:
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি : স্পিকার ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা পদ্মাসেতুর নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ ভুটানের রাজা অ্যানেসথেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের ৬ দফা নির্দেশনা

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধানের মিয়ানমার সফর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানের আমন্ত্রণে শুভেচ্ছা সফরে মিয়ানমার সফর করছেন। গত রোববার তিনি মিয়ানমার সফরে যান। এই সফর সূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানী নেপিতোতে মিয়ানমার আর্মি চীফ ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল বুধবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে সেনাপ্রধানের।

 

বৈঠকে মিয়ানমার বিমান বাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধানসহ  উধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যে সব কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে তা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। এই লক্ষ্যে মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, এশিয়ান হিউম্যানিটারিয়ান ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম এবং রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিকে খুব শিগগিরই সেটেলমেন্ট এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানানো হয়। এসময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পরিকল্পিত বর্ডার রোড নির্মাণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি’র কর্তৃক সর্বাত্বক সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

 

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে স্থল মাইন এবং আইইডি (IED) এর উপস্হিতিতে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া মিয়ানমার সামরিক হেলিকপ্টার এবং ড্রোন বাংলাদেশের আকাশ সীমা লংঘনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপে ও তাদের ড্রোন পাঠানোর বিষয় তুলে ধরে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানানো হয়। এ বিষয়ে মিয়ানমার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়। সীমান্ত এলাকার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাদক কারখানার উপস্থিতি এবং সেই মাদক বাংলাদেশে প্রবেশে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হলে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

 

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় যেকোন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ভুল বুঝাবুঝি নিরসনে কাজ করতে সম্মত হয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কেবল মাত্র কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশনের জন্য সীমান্ত এলাকায় তাদের সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে থাকে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় যেহেতু দেশটির সেনাবাহিনী কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশন পরিচালনা করছে, তাই তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে এই মর্মে সাহায্য চেয়েছে যে, যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশন পরিচালনা করবে তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেন বাংলাদেশ ভূখন্ডে থেকে সীমান্ত এলাকায় তাদেরকে সহায়তা করে। যাতে তাদের ইন্সার্জেন্ট গ্রুপ সমূহ তাড়া খেয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে আশ্রয় না নিতে পারে। এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ এর ক্ষেত্রে exchange program বৃদ্ধি, বিভিন্ন পর্যায়ের সৌজন্যমূলক ভিজিট বৃদ্ধিতে দুই দেশ কাজ করবে।

 

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের সফরের বিষয়টি বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক কোন উদ্যোগের ফসল নয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নাগরিকগণ বাস্ত্যচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে উল্লেখযোগ্য কোন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যূতদের সাময়িক আশ্রয় দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলকে সংশ্লিষ্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিকভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করে এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে। এর ফলাফল হিসেবে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তি অনুযায়ী দেশটি প্রতিদিন তিনশ’ করে প্রতি সপ্তাহে ১৫শ’ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে এবং দুই বছরের মধ্যে এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসনকে সাফল্যমন্ডিত করার সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করা স্বত্ত্বেও রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়।  

 

উপরোল্লিখিত উদ্যোগ চলমান থাকাকালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধানকে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে গাম্বিয়া এবং এর শুনানির সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানের সফর কোন ক্রমেই একসূত্রে গ্রথিত নয়। এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশ হতে মায়ানমারে বাস্তুচ্যূতদের প্রতাবাসন সম্পর্কিত উদ্যোগ এবং প্রতিবেশী দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে প্রচলিত নিয়মে সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত।

 

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি মঙ্গলবার থেকে হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার ছোট এই দেশটির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি শুরু হয়। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। উল্লেখ্য, এতে গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং কানাডার প্রতিনিধিরা শুনানির সময় পিস প্যালেসে থাকবেন। বাংলাদেশ-কানাডার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস নেপথ্যে থেকে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।

 

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, প্রতিবেশী দেশ সমূহের সামরিক বাহিনী সমূহের মধ্যে পারস্পারিক সফর ও আলোচনা শান্তি ও নিরাপত্তার সাপেক্ষে আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে। এটার সঙ্গে অন্য সব বিষয়কে একীভূত করার চেষ্টা করলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইবুনালে যে সিদ্ধান্তই হোক না কেন, বাস্তুচ্যূতদের প্রত্যাবাসন বিষয়ক প্রচেষ্টা সব সময়েই অব্যাহত রাখতে হবে।

 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল