• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথপ্রদর্শক

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের অগ্রযাত্রার পথপ্রদর্শক। স্বাধীনতা লাভের পর একটা জাতি কিভাবে আত্মমর্যাদা ও স্বনির্ভর হয়ে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সে পথটি তিনি দেখিয়ে গেছেন। দীর্ঘ সংগ্রাম লড়াইয়ের পর এ দেশটি যখন স্বাধীন হয় তখন তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘স্বাধীনতা অর্জন যতটা কঠিন তা রক্ষা করা আরো কঠিন।’

দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে দেশবাসীকে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীন ভঙ্গুর অর্থনীতি তথা অবকাঠামো পুনর্গঠনে সীমাহীন কাজ করে বিশ্ব দরবারে বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে তিনিই অভিসিক্ত করে গেছেন।


 

 
জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেয়াটা ছিল একটি অনন্য উদাহরণ। অতি স্বল্প সময়ে সংবিধান উপহার দেয়া কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। জাতি রাষ্ট্র গঠন করে তার ভবিষ্যৎ রূপ কল্পনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি সংবিধানের মতো দুরূহ কাজটি সেরে নিয়েছিলেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছিল।

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে যাতে আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারি সে বিষয়ে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র- তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন।

বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ সম্পন্ন গ্যাসক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা সহজ কথা নয়। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিল্পায়ন অপরিহার্য। শিল্পায়নে উন্নতি সাধন করতে জ্বালানি নিরাপত্তার প্রয়োজন। তাঁর এই সুদূরপ্রসারী চিন্তার কারণে আজকের বাংলাদেশ নিজস্ব জ্বালানির ওপর নির্ভর করে শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।


 
কিন্তু এই গ্যাসক্ষেত্র ক্রয়ের মাত্র ৬ দিনের মাথায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। স্বাধীনতা সার্বভৌম দেশের বহুমাত্রিক সমস্যা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সব সমস্যা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যাচ্ছিলেন। একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু কাজ করছিলেন।

একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে যখন দেশটি তাঁরই দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে দেশি বিদেশি যড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হন তিনি। সপরিবারে তাকে হত্যা করে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যাওয়া হয় দেশটিকে। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাজনৈতিক নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রায় যে সাফল্য দৃশ্যমান হচ্ছে তা বঙ্গবন্ধুরই রাজনৈতিক দর্শনের ফলশ্রুতি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কেবল একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশই উপহার দেননি, তিনি একটি দেশের সমৃদ্ধি ও জাতি গঠনের নানা দিক নিয়ে চিন্তা করেছেন। কৃষক, শ্রমিক, তথা সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সুখী ও উন্নত জীবনদানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে টেনে তুলেছেন।


 
আধুনিক বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত উন্নয়নে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজকের যে সাফল্য তার পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার আঘাতে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। এর প্রভাব এড়াতে পারেনি বাংলাদেশও। গত ৬ মাস যাবৎ অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর মানুষ লড়াই করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় প্রাণান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলা করে।

আম্ফানের রেশ কাটতে না কাটতেই ভয়ংকর বন্যা আঘাত হেনেছে। একদিকে মহামারী করোনা অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের চলমান গতিকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব প্রতিক‚ল পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ বাঁচানোর বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই মেঘা প্রকল্পের কার্যক্রম।

এর মধ্যে আর্থিক সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আশা জাগিয়েছে মানুষের মাঝে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দৃঢ়চেতা কর্মকুশলতা প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা নানা প্রতিবন্ধকতা এড়াতে পেরেছেন। অর্থনীতির নানা সূচকে বিস্ময়কর উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্সে সু-বাতাস বইছে। মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ডলারের ওপরে। এদিকে ভোগ্যপণ্যের বাজার রয়েছে মানুষের নিয়ন্ত্রণে।


 
উল্লেখ্য, মার্চে করোনা শনাক্তের পর প্রথমে স্কুল, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপর ২৮ মার্চ সকল সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত ছুটি ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। খাদ্যপণ্যের দোকান ছাড়া সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ৬৬ দিন টানা ছুটির পর স্বল্প পরিসরে সবকিছু খুলে দেয়ার নির্দেশনা জারি হয়। ছুটিতে গৃহবন্দি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের সাহায্যার্থে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার উদ্যোগেই মানুষের জীবন প্রবাহে কোনো ছেদ পড়েনি।

মানুষের স্বাভাবিক জীবনের গতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। জীবন ও জীবিকার স্বার্থে সে গতি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পেশার মানুষকে ১৯টি প্যাকেজে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদানা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এতে বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেমন সুযোগ লাভ করেছে ঘুরে দাঁড়াবার, আবার বাদ যাননি ফ্রন্ট লাইনের করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

করোনাকে পুঁজি করে যে সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে টাকা রোজগার করছিল তাদের একচুলও ছাড় দেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজে সব বিষয়ে তদারকি করেছেন দূরদর্শিতার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে যেমন দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কোনো অপশক্তি অন্যায়কারীর সঙ্গে আপোস করেননি।

বাঙালি জাতির ন্যায্য দাবির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়চেতা শুদ্ধ মানুষ। কেবল মানুষের কল্যাণে সারাজীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলে পাকিস্তানি দুঃশাসনের পতন ঘটিয়েছিলেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা ওই একই ধারায় ব্যক্তিগত সব কিছু হারিয়ে এ জাতির পাশে দাঁড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর বাঙালি জাতি যেন এগিয়ে যাবার পথ হারিয়ে ফেলেছিল।

দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছিল বাংলাদেশের মানুষ। হতাশা আর ক্লান্তিভরা জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর আবার যেন পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান।

হয়তো বাঙালির ভাগ্য ফেরাবার লক্ষ্যেই পরম সৃষ্টিকর্তার অপার লিলার অনুষজ্ঞ হিসেবে শেখ হাসিনা ও রেহানার বেঁচে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের হাল কে ধরবে? কে দেবে নেতৃত্ব? এমন পরিস্থিতির দোলাচালে ১৯৮১ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। শেখ হাসিনার দেশে ফেরা যেন গণতন্ত্রেরই পুনঃযাত্রা। শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন। দলে ফিরে আসে প্রাণ। বাঙালি আবার স্বপ্ন দেখে সোনার বাংলার।

তার পরের ইতিহাস না-ই-বা তুলে ধরলাম। শেখ হাসিনা বাঙালির স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সমস্ত শোক সহ্য করে বঙ্গবন্ধুর মতোই ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলেন অপশক্তির বিরুদ্ধে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ভেতর দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় অর্জিত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আজ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই এ জাতির যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। সমস্ত ঝড় ঝাণ্ডা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন পিতার নির্দেশিত পথেই। তাই বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের পথপ্রদর্শক।

লেখক: কলামিস্ট

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল