• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

প্রবাসীদের আয়ে টাঙ্গাইলে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

গত ১৪ বছরে টাঙ্গাইল জেলা থেকে চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন ৪ লাখের বেশি মানুষ। যা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চতুর্থ সর্ব্বোচ। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এই প্রবাসীদের পাঠানো আয়। প্রবাসীদের পরিবারে দারিদ্র্য কমেছে, এসেছে সচ্ছলতা। তাদের আয় ও সঞ্চয় বাড়ার কারণে গ্রামীণ জনপদে বিনিয়োগও বাড়ছে।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ছয়টি উপজেলা ঘুরে এবং ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইলের অধিকাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন, কোনো পরিবারের পাঁচ থেকে ছয়জন উপার্জনকারী ব্যক্তি প্রবাসে থাকেন। অনেকে প্রবাস থেকে ফিরে নিজস্ব পুঁজিতে গ্রামে ও শহরে ব্যবসা শুরু করেছেন। গ্রামীণ বাজারগুলোতে গড়ে ওঠা দোকানের অধিকাংশই প্রবাসী ও তাদের পরিবারের।


 
কত লোক বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন, সে তথ্য সংরক্ষণ করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থা ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) অফিস। তাদের বিগত ২০০৫ সালের (১ জানুয়ারি) থেকে বিগত ২০১৮ সালের (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ে টাঙ্গাইল থেকে ৪ লাখ ১ হাজার ২৯২ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। শুধু বিগত ২০১৮ সালেই টাঙ্গাইল জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন।

বর্তমানে টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বড়মনি নিজেও একসময় জার্মান প্রবাসী ছিলেন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের অর্থনীতি এখন অনেকটাই প্রবাসীদের আয়নির্ভর। প্রবাসীরা শুধু সরাসরি ব্যবসা- বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছেন তা নয়। স্থানীয় অর্থনীতিতে পরোক্ষভাবেও অবদান রাখছেন।

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান খান ১৩ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে ব্যবসা করছেন। টাঙ্গাইল শহরে ও গ্রামে কিছু জমিও কিনেছেন। বিদেশে থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে দুটি মাইক্রোবাস কিনছেন।


 
সাদিকুর রহমান বলেন, কাঞ্চনপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির কেউ না কেউ বিদেশে থাকেন। বিদেশে যাওয়ার কারণে অনেক দরিদ্র মানুষ তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পেরেছেন। আগে দিনমজুরি করা এখন তারা অনেক বাড়িতে ঘর তুলেছেন, জমি করেছেন।

কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের ছাতিহাটি গ্রামে কথা হয় অমিত ইমতিয়াজের সঙ্গে। ইতালি প্রবাসী অমিত ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে অছেন। অমিতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম পেশায় প্রকৌশলী। শহীদুল ফিনল্যান্ড থাকেন।

অমিত বলেন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দাদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। ১৫-২০ বছর আগে এলাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। প্রবাসীদের আয়ে এলাকার অর্থনীতিক অবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে। কর্মী হিসেবে বিদেশে যাওয়ার জন্য গত তিন মাসে টাঙ্গাইল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে আঙুলের ছাপ পড়েছে ৬ হাজার ৫৮০ জনের।


 
কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গাইলের প্রবাসীদের বড় গন্তব্য মধপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরেও লোক যাচ্ছেন।

মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার বাসিন্দা প্রবাসে থাকেন।

উপজেলার পাথরঘাটা বাজার কমিটির সহসভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, এই অঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের হাত ধরে। প্রবাসীদের পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। পাথরঘাটাসহ আশপাশের এলাকার বাজারগুলোতে ব্যবসা-ব্যানিজ্যের বেশ উন্নতি হয়েছে।

উপজেলার ছাতিহাটি বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল খালেকেরা সাত ভাই। বর্তমানে তাঁর ভাইদের দু’জন ফ্রান্সে, একজন করে স্পেন, মালেয়শিয়া ও সৌদি আরবে থাকেন। খালেক নিজে ১৬ বছর সৌদি আরব ছিলেন। ভাইদের প্রত্যেকে নতুন ঘর তুলেছেন।


 
খালেক বলেন, বিদেশ গিয়ে পরিবারের আর্থিক অবস্থা বদলেছেন। বিগত ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়াসহ বেশকয়েকটি দেশে যাওয়ার খরচ নির্ধারণ করে দিলেও দালালচক্রের কারণে সেই টাকায় কেউ যেতে পারেন না। টাঙ্গাইল থেকে বিদেশে কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের (দালাল) দুষ্টচক্র। দালালদের কারণে সরকার নির্ধারিত খরচের কয়েকগুণ বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

বিদেশগামীদের অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশে যেতে খরচ বেশি লাগায় সেই টাকা উপার্জন করতেও বেশি সময় লাগছে। অভিবাসন ব্যয় কমানো গেলে অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অরও বাড়বে।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থার পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, টাঙ্গাইলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে অভিবাসন ব্যয় বেশি লাগে, প্রতারণার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু অভিবাসন খাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকার মধ্যস্বত্বভোগীদের একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে বৈধতা দিলে অভিবাসন ব্যয় কমবে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতা আসবে বলে তিনি মনে করেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল