• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকৃ‌তির প‌রিচ্ছন্নতা কমী প্রাণী: শকুন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আজ বিশ্ব শকুন সচেতনতা  দিবস প্রকৃতির ভারসা‌ম্যের বন্ধু প্রাণীটি আজ বিপন্ন প্রায়। এক সময় সারা দেশে প্রচুর শকুন দেখা যেত শিশুরা প্রাণিটি দেখে অনেক মজা পেত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গুরু/গবাদিপশু মরা গেলে শুকুনের খাওয়ার দৃশ্য দেখতে রীতিমত ভিড় লেগে যেত।

 

গ্রামীণ নামও ছিল হার‌গিলা, রাজশকুন ইত্যা‌দি ব‌লে অপর শিশু‌কে চিনা‌নোর চিৎকার,‌ চেচা‌মে‌চি। আজ আর সেদৃশ্য দেখা যায় না। আকাশে শুকুন উড়ারর দৃশ্য দেখা,আকাশ দেখা একইসাথে চলত।বাচ্চা শিশুদের প্রকৃতি হতে চঁাদ মামা ডেকে যেমন চাঁদকে চিনানো হত তেমনি শকুন, চিল, আকাশ পরিচিত করানোর চেষ্ট ছিল। 

 

শুকুন নিয়ে লিখার কারণ কি,কারণ আপাত দৃষ্টিতে শকুনের কোন উপকার চোখে না পড়লেও জীবতাত্ত্বিক  ভারসাম্য  রক্ষার্থে  শকুন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিভাবে?তার দৃশ্যমান উদাহরণ হতে পারে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যদি আগের মত থাকত তবে নির্বিচারে কাঠ পাচার হতে পারতো না,বন ধ্বংস হতো না,অন্যান্য বন্য  প্রানিও হুমকিতে পড়ত না।কারণ সুন্দরবন রক্ষক হিসাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারই  যথেষ্ট  ছিল। এখনও যে জায়গা বাঘের বিচরণ সেখানে প্রায় সকল  উদ্ভিদ, প্রাণি নিরাপদ রয়েছে। ‌

 

তেম‌নি প্রকৃ‌তির প‌রিচ্ছন্নতা কমী প্রাণী  শকুন।আবার যেমন সাপ; কিছু সাপ আছে যেমন নির্বিষ দাঁড়াস,গুইসাপ কৃষকের বন্ধু ইদুর খেয়ে কৃষকের অনেক উপকার করে। ব্যাঙ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা খেয়ে কৃষকের উপকার করে।কেঁচো ত কৃষকের প্রাকৃতিক লাঙ্গল হিসাবে পরিচিত। 

 

এসব প্রাণি কমে যাওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার প্রবণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাথে বিদ্যমান  প্রাণির সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তা কতৃক প্রদত্ত।কিন্তু মানুষের অবিবেচিত কর্মকান্ডের কারণেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে। শকুন কেন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে তা জানতে গবেষকদের ১০-১২ বছর গেছে আবার তার প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিতেও সময় লেগেছে। কিন্তু বিলুপ্তি ত আর থেমে থাকেনি।

 

কারণ ছিল প্রধানত শুকুনের  আবাসস্থল অনেক দ্রুত গতিতে কমে যাওয়া,গবাদি পশুর শরীরে বিশেষ করে গুরুর শরীরে ওষুধ প্রয়োগ যা ডাইক্লুফেনাক ও কিটোপ্রোফেন পশু-চিকিৎসায় ব্যবহার করাই শকুন মৃত্যুর প্রধান কারণ। 

 

শকুন বিলুপ্তির ফলে বাংলাদেশ অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক, পশু হতে সংক্রমিত রোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে পড়েছে।ডাইক্লুফেনাক ওষুধ প্রয়োগকৃত গরু কোন কারণে মারা গেলে এবং যদি শকুন সে গরুর মাংস ভক্ষণ করে তবে প্রায় সাথে সাথেই  মৃত্যু ঘটে । কিন্তু ডাইক্লুফেনাক নিষিদ্ধ করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলাতে দেশে শকুনের সংখ্যা হাতে গুনা মাত্র ২৫০-৩০০টিতে নেমে এসেছে।

 

মূলত ১৯৯০ সা‌লে বাংলাদেশের আকাশে ১০ লাখ শকুন উড়ত। এরপর কমতে কমতে তা এখন মাত্র ২৬০-এ নেমে এসেছে। আর তা ২০১২ সালের মধ্যেই ৯৯ শতাংশ শকুন হারিয়ে গেছে দেশ থেকে।চিন্তাও করা যায় না পাখি জাতীয় একটি প্রাণি সারা দেশে হা‌তে গুনা যায়। শুকুন সাধারনত বট,পাকুড়,অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে বাস করে।

 

যে গাছে বাস করে সেখানে এমনকি তার আশেপাশে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব থাকে না।কিন্তু এসব গাছ ত নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। যার জন্য আবাস প্রজনন কমে গেছে বিপরীত দিকে অস্বাভাবিক ডাইক্লুফেনাক জনিত মৃত্যু শকুনের বিপন্ন ত্বরা‌ন্বিত ক‌রে‌ছে। 

 

ইহা ছাড়াও প্রা‌ণি হত্যা প্রবণতা আ‌রেক‌টি কারণ।প্রা‌ণি শকু‌নের এ সংকটাপন্ন অবস্থা বিরাজ কর‌লেও ক‌বির পতাকা খাম‌চে ধরার শকুনের কথা উ‌ঠে আসা‌ মনুষ্য শক‌ুনের সংখ্যা সমা‌জে,‌দেখা যা‌চ্ছে যারা নীতি‌কে বাদ দি‌য়ে দুনীতি,আদর্শ বিচ্যুৎ আচরণ‌কে প্রাধান্য দি‌য়ে সমাজ‌কে নিত্য দূ‌ষিত কর‌ছে য‌দিও শকুন সমাজ দূ‌ষিত ক‌রে না বরং দূ‌ষিত উপাদান খে‌য়ে সাবার ক‌রে। ‌

 

যে শকুন শুধুমাত্র মরা গরু,‌ভেড়া‌,জেব্রাই ভক্ষণ ক‌রে কখনও জী‌বিত গরু/অন্য প্রা‌ণি‌কে আক্রমণ করার প্রবণতা কম।ক‌বির শকুন পরা‌জিত অপশ‌ক্তি আজও রা‌ষ্ট্রের মূল স্তম্ভ সং‌বিধান,সং‌বিধা‌নে‌র মৌ‌লিক বিষয়ে,মহান মু‌ক্তিয‌ুদ্ধের ‌চেতনায় অপপ্রচা‌রে অপতৎপরতায় লিপ্ত, মনুষ্য এই শকুন‌দের প্রা‌ণি শকু‌নের নিকট হ‌তে শিক্ষা নেওয়ার য‌থেষ্ট অবকাশ র‌য়ে‌ছে বরং।‌

 

বিশ্ব শকুন দিব‌সে প্রত্যাশা ক‌বির ভাষার শকুনরা মানুষ হ‌য়ে উঠুক সা‌থে প্রাকৃ‌তিক ভারসাম্য স্থির রাখ‌তে শকুনসহ সকল প্রা‌ণী রক্ষার বিষ‌য়ে স‌চেতন হই আমরা সবাই।

 

লেখক

শামীম তালুকদার

জামালপুর।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল