• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন শেখ মুজিব

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন সীমাবদ্ধ ছিলো না। বিশ্বের নিপীড়িত মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে তার কণ্ঠ ছিলো সব সময় সোচ্চার। বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘের প্রথম ভাষণেই বঙ্গবন্ধু তার অবস্থান তুলে ধরেন।

১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। ওই বছরই ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।


 
এই ভাষণে তিনি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে তার অবস্থানের কথা উচ্চ কণ্ঠে তুলে ধরেন। ভাষণের একদিকে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সমস্যা, সঙ্কট, নিপীড়ন নির্যাতনের কথা বলেন। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের উপায়ও বাতলে দেন বিশ্ববাসীর সামনে।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ যে শুধু বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না এটি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীক সেটাও বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিব।

জাতিসংঘের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এই অঙ্গীকারের সঙ্গে শহীদদের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম হইতেছে সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম আর সেই জন্যই জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আসিতেছে। ’ 

‘জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পরে এই ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা হইতে দেখা যায় যে, এইসব নীতিমালার বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কী তীব্র সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইতেছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ বীর যোদ্ধার চরম আত্মদানের মাধ্যমে শুধুমাত্র জাতিসংঘ সনদ স্বীকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব। ’

ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিগত বৈষম্য, বর্ণবৈষম্য, ভূ-খণ্ড দখল ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেন। জাতির পিতা শেখ মুজিব বলেন, ‘আগ্রাসনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ভূ-খণ্ড দখল, জনগণের অধিকার হরণের জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রহিয়াছে। আলজিরিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং গিনি-বিসাউ এই সংগ্রামে বিরাট বিজয় অর্জন করিয়াছে। চূড়ান্ত বিজয়ে ইতিহাস যে জনগণ ও ন্যায়ের পক্ষেই যায়, এইসব বিজয় এই কথাই প্রমাণ করিয়াছে। কিন্তু বিশ্বের বহু অংশে এখনো অবিচার ও নিপীড়ন চলিতেছে। অবৈধ দখলকৃত ভূখণ্ড পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য আমাদের আরব ভাইদের সংগ্রাম অব্যাহত রহিয়াছে এবং প্যালেস্টাইনি জনগণের বৈধ জাতীয় অধিকার এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় নাই। উপনিবেশ বিলোপ প্রক্রিয়ার যদিও অগ্রগতি হইয়াছে কিন্তু এই প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায় নাই, বিশেষ করিয়া আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই সত্যটি স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। এই অঞ্চলের জিম্বাবুয়ে (দক্ষিণ রোডেশিয়া) এবং নামিবিয়ার জনগণ জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়তার সাথে লড়াই করিয়া যাইতেছে। বর্ণ বৈষম্যবাদ, যাহাকে মানবতার বিরোধী বলিয়া বার বার আখ্যায়িত করা হইয়াছে তাহা এখানে আমাদের বিবেককে দংশন করা অব্যাহত রাখিয়াছে। ’ 

বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে আগামীদিনের বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং আনবিক যুদ্ধের হুমকি মুক্ত বিশ্ব গড়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘একদিকে অতীতের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাইতে হইতেছে, অপরদিকে আমরা আগামীদিনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতেছি। আজিকার দিনে বিশ্বের জাতিসমূহ কোন পথ বাছিয়া নিবে তাহা লইয়া সংকটে পড়িয়াছে। এই পথ বাছিয়া নেওয়ার বিবেচনার উপর নির্ভর করিবে আমরা ধ্বংসের ভীতি এবং আনবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়া এবং ক্ষুধা, বেকার ও দারিদ্র্যের কষাগাতে মানবিক দুর্গতিকে বিপুলভাবে বাড়াইয়া তুলিয়া আগাইয়া যাইব অথবা আমরা এমন এক বিশ্ব গড়িয়া তোলার পথে আগাইয়া যাইব- যে বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ন সম্ভব করিয়া তুলিবে। ’

‘... এবং যে বিশ্ব কারিগরিবিদ্যা ও সম্পদে পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়িয়া তোলার অবস্থা সৃষ্টি করিবে। যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়াছে তাহা একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়া জরুরিভাবে মোকাবিলা করিতে হইবে। এই বৎসরের প্রথম দিকে এই পরিষদের বিশেষ অধিবেশন বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। ’

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল