• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দাঁড়াশ সাপ: জানার আ‌ছে অ‌নেক

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯  

ছবিতে একটি সাপ ও কিছু দর্শক দেখে কি মনে হচ্ছে, ওখানে সাপের খেলা দেখাচ্ছে। মরা সাপ কি আর খেলা দেখাতে পারে! হ্যা ছবিতে শেরপুরে স্থানীয় কৃষক কর্তৃক পিটিয়ে মারা ১৩ ফুট লম্বা দাঁড়াশ সাপ দেখা যাচ্ছে। অথচ কৃষকের নীরব বন্ধু নির্বিষ সাপ দাঁড়াশের প্রধান খাবার ইঁদুর। মূলত ইঁদুর খেয়েই সে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে। তবে অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের কারণে মানুষের হাতে প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে উপকারী দাঁড়াশ সাপ। 

 

দাঁড়াশ এখনো বিপন্ন পর্যায়ে না গেলেও বর্তমান তেমন একটা দেখা যাচ্ছেনা। দাঁড়াশ দেখতে খুবই সুন্দর। এদের ইংরেজি নাম Rat Snake বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa। 

 

দাঁড়াশ সাপ কৃষি জমিতে থাকতে পছন্দ করে এবং যে জমিতে থাকে তার আশে পাশে প্রায় ৩ একর এলাকা সে বিচরণ করে এবং এই জায়গায় খুঁজে খুঁজে ইঁদুর শিকার করে যার ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসল হানী ঘটে তা থেকে রক্ষা মিলে।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি বছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় ধান ও গমের।

 

কিন্তু ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য দাঁড়াশ সাপটি যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাই এই সাপকে রক্ষা করতে পারলে বছরে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার ফসলের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ যে টাকা ইঁদুর নিধনে খরচ করে সে টাকাও রক্ষা করা সম্ভব।

 

কিন্তু কৃষকের উপকারী এই সাপকে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা থেকে মেরে ফেলা হচ্ছে, দাঁড়াশ সাপ দেখতে অনেকটা বড় এবং কোবরার মত বলে মানুষ না জেনেই একে বিষধর ভাবে। সাপ নিয়ে আমাদের দেশে প্রচুর মিথ্যা কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। তেমনি দাঁড়াশ নিয়ে মানুষের ধারনা দাঁড়াশ সাপের ফনা না থাকলেও কোমরে বা লেজে কাঁটা আছে, সেই কাটা দিয়ে আঘাত করলে মানুষ মারা যায় এবং দাঁড়াশ সাপ রাতে গাভীর বান থেকে দুধ চুষে খেয়ে থাকে। কিন্তু এগুলো সবই ভুল ধারনা। দাঁড়াশ সাপের কোমর বা লেজ বা শরীরের কোথাও এমন কোনো কাঁটা নেই। বাস্তবে সাপটি খুব নিরীহ তবে রেগে গেলে বা ভয় পেয়েও যদি কাউকে কামড় দেয় তবু কিচ্ছু হবেনা কারণ এটি নির্বিষ সাপ।

 

কৃষকের ফসল রক্ষায় দারাজ সাপ নিয়ে কাজ করছেন রাজবাড়ীর সাপের খামারের পরিচালন রবিউল ইসলাম রঞ্জু তিনি জানান, আমি আমার এলাকায় কৃষকদের সাথে আলাপ করে বেশ কিছু দাঁড়াশ অবমুক্ত করেছি, কৃষকদের সচেতন করেছি এখন কৃষকরা দাঁড়াশকে পেলে মারেনা বরং তারা বুঝে এই সাপ বেচে থাকলে কৃষকের লাভ। এ সাপ নিয়ে বিভিন্ন বেদে-সাপুড়িয়াদের ভ্রান্ত কিছু তথ্য প্রচার করেছে তাদের তাবিজ-কবজ বিক্রি করতে আসলে এই ধারনাগুলোর কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা প্রমাণ নেই। সাপের জিহ্বা বিভক্ত সাপ কোনো কিছুই চুষে খেতে পারেনা।

 

জাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, শুধু দাঁড়াশ কেন পৃথিবীর কোন সাপই দুধ চুষে খেতে পারেনা। গরুর উলানে এক ধরনের পোকায় কামড় দেয় যার ফলে সাধারণ কৃষক এই দাগ দেখেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে প্রচার করে সাপে গাভীর দুধ খায়। এ সাপটি সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত, তার গায়ে কোন কাটা নেই । বিপুল অংকের রবি ফসল বাচাতে এই সাপের প্রজনন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা উচিত।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল