• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের মাটিতে ফলন হচ্ছে বারোমাসি বিদেশি তরমুজ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২০  

টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় জহুরুল হক নামের এক কৃষক তার জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে কোরিয়ার সাকেরা, থাইল্যান্ডের ব্লাক বেরী ও ইয়োলো বেরী এবং সৌদির সাম্মাম জাতের তরমুজের চাষ করেছেন। এসব জাতের তরমুজ বার মাস পাওয়া যায়। 

 

বাজারে এ জাতের তরমুজের চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে এই নতুন জাতের তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করছেন অনেকেই। ফলন ভালো হওয়ায় অধিক লাভের আশা করছেন জহুরুল হক। পরীক্ষামূলক চাষে সফল হলে পরবর্তীতে তিনি অধিক জায়গায় এ তরমুজের চাষ করবেন। 

 

জহুরুল সদর উপজেলার বাঘিল ইউপির ফৈলারঘোনা এলাকার হযরত আলীর ছেলে। 

 

তিনি জানান, ঢাকার পুরানা পল্টনে প্রিন্টিং এর ব্যবসা করেন তিনি। ব্যবসার সুবাধে গাজিপুর কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটে তার যাতায়াত রয়েছে। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অলস সময়ে সখের বশে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে চাষাবাদ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। বিদেশি জাতের তরমুজ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। 

 

সদর ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে বিদেশি জাতের তরমুজের বীজ পাননি জহুরুল হক। যোগাযোগ করেন এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসায়ী বন্ধু ছোটন কুমার ঘোষের সঙ্গে। তার মাধ্যমে বিদেশ থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। 

 

দুই মাসে গাছে তরমুজ ধরতে শুরু করেছে। আগামী তিন সপ্তাহ পর তরমুজ বিক্রি করা যাবে। তরমুজের সঙ্গে তিনি শসা, ইস কোয়াস, চিচিঙ্গা, জিঙ্গা ও ভূট্টার চাষও করেছেন।

 

জহুরুল হক জানান, ব্লাক বেরী তরমুজের উপরে কালো ও ভিতরে লাল, ইয়োলো বেরী তরমুজের উপরে হলুদ ও ভিতরে লাল এবং সাম্মাম জাতের তরমুজে উপরে গারো হলুদ ভিতরে লাল। প্রতিটি তরমুজ পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজন হবে। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি তরমুজ পাইকারি ৪০-৫০ টাকা ও খুচরা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। দুই বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রায় চার লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন তিনি।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জহুরুল হকসহ আরো দুই শ্রমিক তরমুজ গাছ পরিচর্যা করছেন। সারি সারি গাছে তরমুজ ধরেছে অসংখ্য। তরমুজের সঙ্গে শসা, ইস কোয়াস, চিচিঙ্গা, জিঙ্গা ও খেতের চারদিকে ভূট্টার চাষ করেছেন। ভূট্টার জাতটিও বিদেশি। ভূট্টা রং হবে লাল। পোকা মাকড় দমনের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে বিশটি সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসানো আছে।

 

তরমুজ বাগানে কাজ করা শ্রমিক বুদ্দু মিয়া জানান, এখানে দুই-তিনজন শ্রমিক চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফল হওয়ার আগ পর্যন্ত দেখাশোনা করবেন। ফল পরিপক্ক হলে সেগুলো বাজারে সরবরাহ করবেন তারা। যে মজুরি পাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের ভালোই চলছে।    

 

তরমুজ চাষ দেখতে আসা মো. গিয়াস ও লাবু মিয়া জানান, এলাকা নতুনে তরমুজের চাষ হওয়ায় তারা দেখতে এসেছেন। জহুরুলের কাছ থেকে এই চাষের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন তারা।

 

জহুরুল ইসলাম বলেন, অনেকটা সখের বশে পরীক্ষামূলকভাবে এই তরমুজ চাষ শুরু করি। বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে কোরিয়ার সাকেরা, থাইল্যান্ডের ব্লাক বেরী ও ইয়োলো বেরী এবং সৌদি আরবের সাম্মাম জাতের তরমুজ চাষ করেছি। চারা রোপণের দুই মাসের বেশি সময়ে প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই তরমুজ বাজারে তোলা যাবে। এলাকায় নতুন হওয়ায় এই জাতের তরমুজ চাষে বেশ সাড়া পেয়েছি। আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে এই জাতের তরমুজ চাষের ইচ্ছা আছে। আল্লাহর রহমতে এতে করে আমার ভালোই লাভ থাকবে।

 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ বলেন, সদর উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে এক একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের নিয়োগকৃত উপসহকারীরা সপ্তাহে একবার গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল