• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে খরস্রোতা ধলেশ্বরীর বুকে ফসলের মাঠ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২১  

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে এখন নানা ধরণের ফসলের চাষ করা হচ্ছে। বর্ষায় যেখানে শুধু পানি আর পানি বাস্প উড়ায় সেখানে চাষ হচ্ছে নানা জাতের ফসল। ধলেশ্বরী নদীর বুক চিরে যাওয়া খরস্রোতের স্থলে শুকনো মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে ইরি-২৮ ও ২৯, বোরো ধান, মাসকলাই, বাদামসহ নানা ধরণের সবজি। 

সময়ের বিবর্তনে খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদীর বুকে পলি জমে চর উঁচু হতে থাকে। গত এক দশক ধরে এ নদীর বেশিরভাগ অংশে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। নদীর বুকে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাকি সময় বিভিন্ন ফসল চাষ হয়ে থাকে। 

ধলেশ্বরী নদীর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া, কাকুয়া, কাতুলী, বাঘিল, পোড়াবাড়ি ও ছিলিমপুর ইউপির প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে ধানসহ ফলানো হচ্ছে নানা ফসল। 

নদী দেখে খালও মনে হয় না। কারণ নদীর তীর নেই, গভীরতা নেই, নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বালু নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউপির গোলচত্বর, ছিলিমপুর ইউপির ঝিনাই পাড়া, চর পাকুল্লা, কাকুয়া ইউপির তোরাপগঞ্জসহ বিভিন্ন অংশে নানা ধরণের ফসল চাষ করা হয়েছে। নদী সীমানা এলাকায় সবুজ আর সবুজের সমারোহ। নদীটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে বর্তমানে কৃষকের চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে সেতু ছাড়া বোঝার কোনো উপায় নেই এটা নদী নাকি ফসলের মাঠ। 

কাকুয়া ইউপির কৃষক বারেক সিকদার বলেন, এ নদী দিয়ে এক সময় নৌকা, স্টিমার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করতো। এখন আর আগের মতো দীর্ঘ সময় নদীতে পানি থাকে না। বন্যার সময় ৩-৪ মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময়টা থাকে শুকনো। প্রতি বছর বন্যার সময় পলি মাটি জমে থাকায় ফসল ভালো হয়। 

চর পাকুল্লা গ্রামের রাজা মিয়া আর মাহমুদ নগর গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, এক সময় নদী অনেক গভীর ছিল। ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও নদীতে নৌকা চলাচল করতো। এখন নদী মরে গেছে। অন্য অঞ্চলের মানুষ এখানে এলে বুঝতেই পারবে না এটা খরস্রোতা ধলেশ্বরী। এখন নদী দেখে খালও মনে হয় না। কারণ নদীর তীর নেই, গভীরতা নেই, নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বালু নেই। যে কারণে স্থানীয় কৃষকরা নদীতটে ধানসহ সবজি চাষ করে থাকেন। 

ছিলিমপুর ইউপি সদস্য মো. আমিন মিয়া বলেন, ধলেশ্বরী নদী বর্তমানে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। পুরো নদীতট বালুর পরিবর্তে উর্বর মাটিতে ভরে গেছে। এ নদীতে ধানসহ যেকোনো ফসল চাষ করলে ফলনও ভাল হচ্ছে।

কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কাকুয়া ইউপির ওমরপুর, দেলদা, রাঙাচিড়া ও চরপৌলী গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। এ ইউপির পাঁচ কিলোমিটার নদীতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। 

বাঘিল ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, এ ইউপির লোহাজানি- শিবপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদীর সীমানা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রত্যেক জায়গায় ফসলসহ সবজি চাষ করা হচ্ছে। 

ছিলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, এ ইউপির পাকুল্লা, তেজপুর, সুবর্ণতলী গ্রামের পাশ দিয়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। আগে নদীতে শুধু বালু আর বালু থাকতো। এখন উর্বর মাটি হওয়ায় ফসল চাষাবাদ করা হয়। 

পোড়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজমত আলী জানান, তার ইউপির খারজানা, বাউশা, নন্দিপাড়া, ঝিনাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নদীর সীমানা। এখন নদী নেই বললেই চলে। নদীর পতিত ভূমিতে বন্যার সময় ব্যতিত বাকি সময় ফসল চাষ হচ্ছে। 

কাতুলী ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, কাতুলী ইউপির ঘোষপাড়া-চকদই গ্রাম দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। প্রত্যেক জায়গাতেই ধান চাষ করা হয়। 

পরিবেশ বাদী সংগঠন বেলার ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র জানান, টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি শাখা পাশের জেলা মানিকগঞ্জের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জের দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। অপরটি গাজীপুরের কালীগঞ্জের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা এক সময় ধলেশ্বরীর শাখা ছিল। ধলেশ্বরী নদী নানাভাবে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীতেই পতিত হওয়ায় এটাকে ব্যতিক্রমী নদী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। 

টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রাণালয়ে কথা হয়েছে। ধলেরশ্বরী, লৌহজং, ঝিনাই নদীসহ কয়েকটি নদীকে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ধলেশ্বরীকে এ ক্যাটাগরিতে আনা হয়েছে। অচিরেই নদী খনন ও তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।  

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল