• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে উৎপাদিত মধু যাচ্ছে দেশের বাইরে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২০  

মধুর দেশীয় বাজার দর রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাজারজাত ও বিপণন সমস্যা না থাকায় ভালো দাম পেয়ে মৌ চাষিদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। করোনার কারণে দামও বেড়েছে কয়েক গুণ।
টাঙ্গাইলের বেশ কয়েকটি উপজেলার মধু খামারি ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি সংস্থা এপি আশির দশকে প্রথম টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইলে মৌবাক্সে খামারি মধু চাষ শুরু করে। পরে বিসিক ও গ্রামীণ ব্যাংক মৌচাষে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।

নব্বইয়ের দশকে মধুপুর ও ঘাটাইলে মৌচাষে বিপ্লব ঘটায় মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থা। মৌচাষ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা এবং তৃণমূল পর্যায়ে মৌমাছি পালনকে জনপ্রিয় করে তোলে মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থা। এ সংস্থা প্রায় ৪ হাজার বেকার যুবক-যুবতিকে মৌচাষে প্রশিক্ষণ দেয়। 

ফলে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইল ছাড়িয়ে ধনবাড়ী, গোপালপুর, ভূয়াপুর, সখীপুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ী এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় মৌচাষ ছড়িয়ে পড়ে।

উক্ত সংস্থা স্থানীয় জাত সিরোনিকের পরিবর্তে ভারত থেকে আনেন হাইব্রিড মেলিফেরা জাতের মৌমাছি। এতে মৌচাষ ও মধু উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থার (মউস) পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন জানান, বর্তমানে এসব উপজেলায় প্রায় ৮০০ টন খামারি মধু উৎপাদন হয়। বাজারজাত ও বিপণন সমস্যায় মৌচাষিরা প্রতি বছর উৎপাদিত মধু নিয়ে বেকায়দায় পড়েন।

ক্রেতার অভাবে বিপুল পরিমাণ মধু অবিক্রীত থেকে যায়। তখন প্লাস্টিকের ড্রাম বা মাটির কুঁজোয় দীর্ঘদিন মধু সংরক্ষণ করে রাখায় মধু জমে চিনি হয়ে যায়। মেশিনে প্রসেস করে বাজারজাতকরণে তখন নানা ঝুঁকি পোহাতে হয়।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং ভূয়াপুর উপজেলার পাঁচতেরিল্লা গ্রামের দুলাল হোসেন জানান, তার খামারে সাড়ে ৪০০ মৌবাক্স রয়েছে। গত সরিষা মৌসুমে প্রায় ১৮ টন মণ মধু উৎপাদন করেন।

মধুপুরের মৌখামারি খোরশেদ আলম বাচ্চু ও ঘাটাইলের আরশেদ আলী জানান, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে টাঙ্গাইলে সরিষা ফুল ফুটলে মধু সংগ্রহের ধুম পড়ে যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে মৌকলোনি নিয়ে যান মাদারীপুরের দনিয়া ও কালাশচ মাঠে। এপ্রিলে মাদারীপুর থেকে বৃহত্তর দিনাজপুরের লিচুবাগান অথবা গাজীপুরে এবং মে মাসে মাইগ্রেশন হয় সুন্দরবন এলাকায়। জুনে পঞ্চগড়ের তিল জমিতে। জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে মৌবাক্স রেখে মৌমাছিকে কৃত্রিম খাবার খাওয়ানো হয়।

অক্টোবর-নভেম্বর মধুপুর গড়ের শালবনের স্বর্ণলতাসহ পাহাড়ি ফুল থেকে পরাগ ও নেকটার সংগ্রহ করা হয়। ভূয়াপুর উপজেলার আশরাফ ও ঝুমুর, গোপালপুর উপজেলার আরিফ, রিপন ও মনির, মধুপুর উপজেলার মোতালেব, রফিকুল ও জাহিদ, কালিহাতীর রাজু আহম্মেদ, ঘাটাইলের সাগরদীঘির আফছার ও শফিকুলের মতো মৌপালকরা এখন কোটিপতি।

অবসরপ্রাপ্ত বিসিক কর্মকর্তা হাসান আরিফ জানান, টাঙ্গাইল ও এর আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় খামারি মধু চাষে বিপ্লব ঘটেছে। বহু তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে। সাধারণত ভারত, সৌদি আরব, জাপান, কানাডা ও জর্ডানে দেশি-বিদেশি বায়ারদের মাধ্যমে এখানকার মধু রফতানি হয়। করোনার কারণে রফতানি বন্ধ ছিল। অভ্যন্তরীণ বাজার চাঙা হওয়ায় মৌচাষিদের কপাল এবার খুলে গেছে। সেই সাথে অসংখ্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্হানের ব্যবস্থাও হয়েছে। দূর হয়েছে অভাব নামের দানবটিরও। এ ছাড়াও মধুপুর ও ঘাটাইলের বনাঞ্চলেও প্রাকৃতিকভাবে অনেক মধু পাওয়া যায়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল