• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল উদ্বোধনের পায়তারা জামায়াত নেতার!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২১  


টাঙ্গাইল শহরে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে হাসপাতাল উদ্বোধনের পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। তারা হাসপাতালের নামে রাজনৈতিক ঘাঁটি গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজন্য তারা অবলম্বন করছেন নানা কৌশল। এখনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।


এই হাসপাতালের মালিকানায় ৩৩ জনের নাম থাকলেও জেলা জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা রয়েছেন মূল দায়িত্বে। তারা হলেন- হাসপাতালের এমডি আল-মোমিন এবং হাসপাতালের পরিচালক ইয়াহিয়া খান মারুফ। তারা দু’জনই জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য। এছাড়া তাদের সাথে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মী রয়েছেন।


টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সাবালিয়া এলাকায় এই হাসপাতালের অবস্থান। সেখানে এক আইনজীবীর তিন তলাবিশিষ্ট ভবন ভাড়া নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নাম দেয়া হয়েছেÑ ‘আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল’। এই হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সরকার বিরোধী অপকর্মের মামলার কয়েকজন আসামীও রয়েছেন। যারা নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে তারা কৌশলে টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে হাসপাতালের নামে ট্রেড লাইসেন্স হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ট্রেড লাইসেন্সধারীর জায়গায় জামায়াত নেতা আল-মোমিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগের এই হাসপাতালের মালিকানায় ৩৩ জনের নাম থাকলেও আল-মোমিন কৌশলে নিজের একক নামে ট্রেড লাইসেন্স করে নিয়েছেন। যাতে করে ভবিষ্যতে অন্যান্য অংশীদারদের বিদায় করে দিয়ে একক নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন হাসপাতালটি। ইতিমধ্যে তিনি সকল অংশীদারদের ওপর একনায়েকতন্ত্র কায়েম করে ফেলেছেন।


অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়ত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অযুহাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় স্থায়ীভাবে ঘাঁটি গড়ে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর টাঙ্গাইল শহরের মধ্যে সাবালিয়া-কোদালিয়া এলাকাটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবেও দিনদিন উন্নত হচ্ছে এলাকাটি। এখানে গড়ে উঠছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই এলাকায় রয়েছে বেশকয়েকটি জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যে কারণে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রটি এই এলাকাটিই বেছে নিয়েছে তাদের ভবিষ্যত কর্মকান্ডের জন্য।


জানা যায়, ইতিপূর্বে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা টাঙ্গাইল শহরে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নেপথ্য ভূমিকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সেই হাসপাতালগুলো তারা টিকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। অবশেষে আমানত হাসপাতালের মাধ্যমে তারা তাদের মিশন বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, হাসপাতালের এমডি আল-মোমিন জামায়াতের রুকন। তিনি জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দেলদুয়ার উপজেলা শাখার আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই আল-মোমিনই হচ্ছেন আমানত হাসপাতালের আড়ালে জামায়াতের যাবতীয় কর্মযজ্ঞের মাস্টারমাইন্ড। এই হাসপাতালের আরেক কা-ারী ইয়াহিয়া খান মারুফ জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য হওয়ার পাশাপাশি মির্জাপুর উপজেলা শাখার আমীর হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনিও জামায়াতের রুকন এবং তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। জানা যায়, তারা গাজীপুর থেকে পানির দরে পুরাতন একটি হাসপাতালের মানহীন যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য মালামাল কিনে এনেছেন হাসপাতাল সাজানোর জন্য। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল এসব যন্ত্রপাতি। ফলে এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যাপক প্রতারণার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডারদের নামে হাসপাতাল অনুমোদন দেয়া উচিৎ হবে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।


হাসপাতালের এমডি জামায়াত নেতা আল-মোমিন জানান, হাসপাতাল করা হয়েছে। উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন পরিদর্শন করে অনুমতি দিবেন। আরো কিছু জানার থাকলে সামনে গিয়ে কথা বলতে বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।


জামায়াতের জেলা আমীর আহসান হাবীব মাসুদ জানান, হাসপাতাল হচ্ছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। রাজনীতি বা দলের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আর আল-মোমিন এবং ইয়াহিয়া খান মারুফ জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও তারা দলের কোন পদ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।


এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমানত স্পেশালাইজড হাসপাতাল নামে কোন আবেদন আমরা এখনো পাইনি। তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়া হাসাপাতাল উদ্বোধনের কোন সুযোগ নেই।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল