• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর: চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২১  

টাঙ্গাইলের শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। নতুন প্রজন্ম যেখানে গিয়ে জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উল আলম শহীদ তার টাঙ্গাইল শহরের বাসভবনে গড়ে তুলেছেন এ জাদুঘর। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরতে এ জাদুঘর তিনি স্থাপন করেছেন।

 

আনোয়ার উল আলম শহীদ টাঙ্গাইল জেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন নেতা হিসেবে স্বাধীনতা পূর্ব বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। পরবর্তীতে সশস্ত্র সংগ্রামের সম্ভাব্যতাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

 

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর একজন সংগঠক হিসেবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক প্রধান। যুদ্ধ শেষে তিনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পরিচালক হিসেবে রক্ষী বাহিনীতে যোগদান করেন।

 

৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রক্ষী বাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়। আনোয়ারুল আলম সেনাবাহিনীতে লে. কর্নেল হিসেবে পদায়ন হন। পরে কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। কূটনীতিক হিসেবে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি স্পেনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। চাকরি জীবনে যেখানেই গেছেন সেখানেই নিয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির বিভিন্ন দুর্লভ ছবি, যুদ্ধকালীন নানা দলিল দস্তাবেজ।

 

আনোয়ার উল আলম ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণের পর টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৈতৃক ভিটায় দোতলা ভবণ নির্মাণ করেন। এ ভবণের নিচ তলাতেই গড়ে তুলেছেন এই জাদুঘর। ২০১০ সালে জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। এ জাদুঘর যারা দেখতে আসেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের। দেশ বিদেশের অনেক প্রখ্যাত লোকও জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। বাসায় থাকলে আনোয়ারুল আলম নিজে দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখাতেন জাদুঘরের বিভিন্ন স্মারক। ছবি দেখিয়ে বর্ণনা করতেন যুদ্ধদিনের ইতিহাস।

 

সরেজমিন শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দেখা যায়, পুরো নিচ তলা জুড়ে সাজানো মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন। স্বাধীনতার আগে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত একুশের সংকলন, আন্দোলন সংগ্রামে দিক নির্দেশনা দিয়ে জেলার নেতাদের লেখা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতার চিঠি, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পাক বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন বীরত্ব থেকে শুরু করে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের আলোকচিত্র।

 

আরো রয়েছে যুদ্ধচলাকালীন ও বিজয়ের পর দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদনের ছবি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তাঞ্চল থেকে আনোয়ারুল আলমের সম্পাদনায় প্রকাশিত রণাঙ্গন পত্রিকার কপি, মুক্তাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দলিল, টাঙ্গাইল অঞ্চলে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, ভারতীয় বাহিনীর প্যারাসুট, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি জাহাজের অংশ বিশেষসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মারক। জাদুঘরটি ঘুরে দেখলে চোখের সামনে ফুটে উঠে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র।

 

জাদুঘর পরিদর্শনে আসা প্রজন্মের এক দল তরুণদের একজন সোহাস চৌধুরী বলেন, জাদুঘরটি পরিদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তারা এ জাদুঘর দেখে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবো।

 

সরকারি সা’দত কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র আবু কাওছার আহমেদ জানান, জাদুঘরটি দেখে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এক ছাদের নিচে পুরো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখানে পাওয়া যায়।

 

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার জানান, শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আনোয়ারুল আলম শহীদের একটি মহান উদ্যোগ। তিনি শুধু যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেই তার দায়িত্ব শেষ করেননি। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে যুদ্ধকালীন অমূল্য আলোকচিত্র ও বিভিন্ন দলিলাদি দিয়ে জাদুঘর ঘরে তুলেছেন। এ উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার উল আলম শহীদ জানান, জাদুঘরে স্থান পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের ছবি ও বিভিন্ন দলিলপত্র তিনি সংরক্ষণ করেছেন। অবসর গ্রহণের পর নিজ বাড়িতে এ গুলো দিয়ে জাদুঘরটি গড়ে তুলেছেন।

 

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।  

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল