• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

জেনে নিন মহামারির কারণ ও তার প্রতিকার

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২০  

মহামারি। নামটি শুনলেই আমাদের সবার মনে এক আতঙ্ক দানা বাঁধে। পৃথিবীর ইতিহাসে যত মহামারি এসেছে সবগুলোই মানুষের জন্য ছিল ভীতি ও আতঙ্কের নাম। বর্তমান দুনিয়ার সবচে আতঙ্কের নাম হলো কোভিড ১৯ তথা করোনা।

 

দিন যত গত হচ্ছে কোভিড ১৯ এর গতি তত বাড়ছে। লাগামহীন ঘোড়ার মতো নিয়ন্ত্রণ হারা হয়েছে করোনা। আজকে পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে সাহসী রাষ্ট্রগুলোও। আজকে পরাশক্তিরাও দুর্বল বড় অসহায়। বিগত দিনের মতোই এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে বহু সময়ের প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যে করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গবেষণা থেকে জানা যায়, এখন এই মহামারী উত্তোরণের একমাত্র কাযকরী উপায় হলো সচেতনতা। সচেতনতার ওপর কোনো ওষুধ নেই। সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইসলামের নির্দেশনাগুলো মেনে চললে ইনশাল্লাহ! করোনা আমাদের মাঝে সংক্রামক হবে না।

 

মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে আমরা জেনে নিই কি করণে আল্লাহ মহামারি দিয়ে থাকেন-

 

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে বিপর্যয় পাঠান কয়েকটি কারণে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো,

 

ক. মহামারি বা বিপর্যয় দ্বারা আল্লাহ পাপীদের সতর্ক করেন।
খ. মহামারি বা বিপর্যয় মুমিনদের জন্য রহমতের জরিয়া বানান।
গ. মহামারি বা বিপর্যয় দ্বারা পাপীদেও কিছু অপরাধ মার্জনা করেন।
ঙ. মহামারি বা বিপর্যয় দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতের ক্ষমতা প্রদর্শন করেন যাতে করে অহঙ্কার ও দাম্ভিকেরা সতর্ক হয়।

 

এক আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা দেন,

 

وَمَا نُرْسِلُ بِالآيَاتِ إِلاَّ تَخْوِيفًا

 

অর্থাৎ: ‘আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শন প্রেরণ করি।’ (সূরা: বনি ইসরাইল : আয়াত নম্বর: ৫৯)।

 

একবার কুফাতে ব্যাপক আকারে ভূমিকম্প হলো। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কুফাতে অবস্থান করছিলেন। ভূমিকম্প হওয়া পর তিনি লোকদের নির্দেশ দিলেন, আল্লাহ তোমাদের তিরস্কার করছে, তোমরা তওবা করো। 

 

উল্লিখিত আয়াত ও ঘটনা থেকে আমারা বুঝলাম মহামারি বা বিপর্যয় সবগুলোই আল্লাহ পক্ষ থেকে আসা। তবে এগুলোতে মুমিনদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এগুলোতে মুমিন বান্দার জন্য আল্লাহ রহমত করে দিয়েছেন। যেমন হাদিসে এসেছে,

 

عن عائشة -رضي الله تعالى عنها- قالت: سألتُ رسول الله ﷺ عن الطاعون فأخبرني أنه: عذاب يبعثه الله على من يشاء، وأن الله جعله رحمة للمؤمنين، ليس من أحدٍ يقعُ الطاعونُ فيمكث في بلده صابراً محتسباً، يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر شهيد

 

অর্থ : ‘হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহামারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘মহামারি হলো আল্লাহ প্রদত্ত একটি আজাব। যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা হয় এ আজাব পাঠান। পরবর্তীতে তিনি তা ঈমানদারদের জন্য নিজ অনুগ্রহে রহমতে রূপান্তর করেন এভাবে যে- ‘কোনো ব্যক্তি যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে সওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তায়ালা ভাগ্যে যা রেখেছেন তার বাইরে মহামারি তার কিছু করতে পারবে না তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহিদের সাওয়াব।’ (বুখারী : হাদিস নম্বর ৩৩১৫, রিয়াসুস সালিহিন : হাদিস নম্বর ৩৩)। 

 

মহামারি মুকাবিলায় ইসলাম কি দির্দেশনা প্রদান করে এখন সেইগুলো আলোচনা করবো। প্রথমেই আমরা একটি হাদিস উল্লেখ করছি, অতঃপর তার থেকে ওই সব পন্থাগুলো নির্ণয় করছি যা দ্বারা মহামারি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি এসে সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে মহামারি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তখন উসামা ইবনু যায়েদ (রা.) বললেন, আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।

 

عَنْ أُسَامَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ هَذَا الطَّاعُونَ رِجْزٌ سُلِّطَ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ، أَوْ عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ ، فَإِذَا كَانَ بِأَرْضٍ فَلَا تَخْرُجُوا مِنْهَا فِرَارًا مِنْهُ ، وَإِذَا كَانَ بِأَرْضٍ فَلَا تَدْخُلُوهَا

 

হজরত উসামা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শাস্তি অথবা ধমকস্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলের একটি দলের উপর অথবা তোমাদের পূর্ববর্তী কিছু লোকের উপর এমন শাস্তি নিপতিত করেছিলেন। তাই যখন কোনো স্থানে মহামারির কথা শুনতে পাবে সেখানে যাবে না। আর যদি তা তোমাদের কাছে চলে আসে তবে তা থেকে পালিয়ে যাবে না’। (মুসলিম: হাদিস নম্বর: ৪২২৮)।

 

এই হাদিসটির মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুর্যোগ অথবা মহামারি থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ম বলে দিলেন। হাদিসের মধ্যে খবু গুরুত্বেও সঙ্গে একটি বিষয় ফুঠে ওঠেছে তা হলো আক্রান্ত অঞ্চল থেকে বের না হওয়া। এই ব্যাপারে আমাদের আকাবির ওলামাদের বক্তব্য হলো। 

 

ক. কুদরতের ভালোমন্দের ওপর বিশ্বাস ও স্থির থাকা।
খ. অন্যান্য অঞ্চলে রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করা।
গ. যদি মানুষ বেরিয়ে যেতে চায় তাহলে রোগাক্রান্ত অক্ষম ব্যক্তিদের সেবা-শুশ্রুষা করার জন্য কেউ থাকবে না।

 

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহু মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ না করার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন,

 

ক. ক্ষতিকারণের উপায় উপকরণ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
খ. আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ না করা, আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে না যাওয়া। 
গ. দূষিত বাতাস ও পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে সতর্কতা অবলম্বন করা।

 

এ ধরণের মহামারি এবং দুর্যোগ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। তাই এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য উচিত হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করা এবং তাঁর কাছে দোয়া করা। মহামারি ও বিপদ আপদের যেসব দোয়া আছে তা বেশি বেশি পড়া। তবে এধরণের পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহর ওপর ভরসার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারি পরামর্শগুলো মেনে চলবো। সরকার যেসব বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সেগুলোও মেনে চলবো। আমাদের একটু সচেতনতা আমাকে বাঁচাতে পারে। আমার পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে পারে। 

 

হয়তো কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো কষ্টে যাবে তবে তারপরও তাতেই আমার আর আপনার হোম কোয়ারেন্টাইনেই থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থ রাখুক নিরাপদ রাখুন। আমিন। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল