• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

জঙ্গি দমনে যা করতে চায় পুলিশ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩  

জঙ্গি ও উগ্রবাদ দমনে বিশেষায়িত ইউনিটগুলো ছাড়াও এখন নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের কাজে লাগাতে চায় সরকার। এর সঙ্গে বিট পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সারা দেশে থানা ও বিট পুলিশকে জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে সংস্থাটি গড়ে তুলেছে দুটি গবেষণা সেল। যে সেল থেকে ইতোমধ্যে জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়েছে।

দেশে জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাউন্টার টেরোরিজম নামের একটি ইউনিট কাজ করে। তবে জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে গৃহীত পুরো কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট।

জঙ্গিবাদ দমন নিয়ে কাজ করেন এমন কর্মকর্তারা বলেন, জঙ্গিরা যখন সংঘবদ্ধ হয়ে পড়বে তখন তো তাদের দমন করতেই হবে। তবে তার আগেই যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটাই হবে ভালো কাজ। এজন্য শুধু বিশেষায়িত ফোর্সগুলো ছাড়াও পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যদের জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে সম্যক ধারণা ও প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। সেদিকেই সরকার নজর দিচ্ছে বেশি। পাশাপাশি জনসচেতনতার কাজও চলবে।

পুলিশের মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থানা পুলিশ। আরও প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করে বিট পুলিশ। যাদের বিচরণ ইউনিয়ন কিংবা গ্রাম পর্যায়ে। আবার তাদের সঙ্গে কাজ করেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা। জঙ্গিবাদ নিয়ে মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে সেগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রতিরোধ ও দমনেও কাজ করতে পারেন পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য। সে লক্ষ্যে পুলিশের এসব সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।

তারা বলেন, বিট পুলিশিং ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়া অনেক প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, যেখানে পুলিশের যেতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। যে কারণে আইনশৃঙ্খলাজনিত বড় ধরনের কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হলে পুলিশও সেসব দূরবর্তী এলাকায় টহলে যেতে চান না। আর এ সুযোগে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশের সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে প্রশিক্ষণ থাকলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা জানান, দেশব্যাপী পুলিশের ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ফেব্রুয়ারি (২০২৩) থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০টি ইনস্টিটিউটের আওতায় ২৩ জেলার সব থানা ও বিট পুলিশকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডসহ যেকোনও ঘটনার পরে তার পেছনে কোনও জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে কিনা সেটা তদন্তে গিয়ে বুঝতে সহযোগিতা করবে। অপরাধীদের মধ্যে ধরন অনুযায়ী কারা কী করে সেটা নিয়েও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি সদস্যদের জীবনাচরণ নিয়েও ধারণা দেওয়া হচ্ছে তাদের। আগামী মে (২০২৩) মাসের মধ্যে সারা দেশে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে এটিইউ’র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রেনিং ও মিডিয়া উইং) ওয়াহিদা পারভীন বলেন, বিট পুলিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে। বিট পুলিশের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফোরামে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে কথা বলেন ও মতামত দেন। তাই তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এটিইউ। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কর্মকর্তাগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে চরমপন্থা প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কার্যক্রমে ফোকাল পার্সন হিসেবে কাজ করবেন। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনও ইস্যু তৈরি হলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে এটিইউকে রিপোর্ট করতে হবে তাদের।

ওয়াহিদা পারভীন আরও বলেন, বিট পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য ইউনিটে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরও মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের মাধ্যমে চরমপন্থা প্রতিরোধ ও দমন বিষয়ে গত মাসে দুই সপ্তাহের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে এসআই ও পরিদর্শক পদমর্যাদার ৯০০ জন অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এটিইউর পুলিশ সুপার (ট্রেনিং) শিরিন আক্তার জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে জোরেশোরে কাজ চলছে। জঙ্গি ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় পুলিশ ‘ভালো অভ্যাস’ অনুসরণ করে দুই ধরনের প্রস্তাব (অ্যাপ্রোচে) নিয়ে কাজ করছে। এরমধ্যে ‘কঠিন প্রস্তাব বা হার্ড অ্যাপ্রোচ’ জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়। আর ‘সাধারণ প্রস্তাব বা সফট অ্যাপ্রোচ’ হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নাই।

গত বছর (২০২২) সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী ৪২টি অভিযান চালিয়েছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। এসব অভিযানে ৪৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ২৭টি। এ বছরও (২০২৩) বেশ কজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিবাদ একটি স্থায়ী ও বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর সমাধানের পথও স্থায়ীভাবে নিতে হবে। শুধু গ্রেফতার করেই জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়। সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতাও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অন্যতম সহায়ক হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল