• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ঘাটাইলে এতিমখানায় প্রতিমাসে আধাটন চাল দিবেন ভাইস চেয়ারম্যান

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২১  

সারাদেশে যখন সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাগুলো বন্ধ, ঠিক সেই সময়ে টাঙ্গাইলে ঘাটাইল উপজেলার মোমিনপুর বাইতুল মাকছাদ এতিমখানা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য প্রতিমাসে আধাটন করে চাউল ও আনুসঙ্গিক সকল সুযোগসুবিধা সারাজীবন প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে এতিমদের পাশে দাঁড়িয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু।

জানা যায়, পেশায় ব্যবসায়ি, মানবিক গুনাবলি সম্পন্ন এই মানুষটি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনগণের বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করেন। বিজয়ী হয়ে অল্পদিনের ব্যবধানে ঘাটাইলের সর্বস্তরের মানুষের কাছে একজন মানবিক হৃদয়ের মানুষ হিসাবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মিয় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মানবতার ফেরিওয়ালার খেতাব কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাকালীন সময় থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ ও হতদরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহায়তা ও প্রদান করে গোটা উপজেলার মানুষের প্রশংশায় ভাসছেন তিনি। একই সাথে প্রায় ত্রিশটির অধিক কন্যাদায়গ্রস্থ অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নিজ খরচে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন।

জানা যায়, গত ২রা মার্চ (মঙ্গলবার) মোমিনপুর মাদরাসা পরিদর্শনে যান কাজী আরজু। সেখানে গিয়ে মাদরাসার ছোট ছোট এতিম শিশুদের দুঃখকষ্টের কথা জেনে তাৎক্ষণিক অত্র মাদরাসার শিশুদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি নিজেও তাদের সাথে বসে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি উক্ত এতিমখানা ও মাদরাসায় আজীবন প্রতিমাসে আধাটন করে চাউল এবং সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
 
উক্ত এতিমখানায় কাজী আরজুর দেয়া প্রতিশ্রুত চালের প্রথম চালান গত ৩ এপ্রিল বুঝে পেয়েছেন বলে  নিশ্চিত করেছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
 
মোমিনপুর এতিমখানা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের এতিমখানায় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায় না। তবুও স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান আমাদের এতিমখানায় এসেছিলেন, সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তিনি আমাদের এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিমাসে আধাটন করে চাউল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- এমন উদাহরণ সমাজে সচরাচর পাওয়া যায় না। আমরা তার ও তার পরিবার সদস্যদের জন্য দোয়া করি, যেন তিনি তার মহতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন।
 
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুত চালের প্রথম চালান গত ৩ এপ্রিল আমরা বুঝে পেয়েছি। তার দান করা চাল খুবই উন্নতমানের এবং এই ধরনের চালের ভাত এতিমখানার শিক্ষার্থীরা আগে কখনও খায়নি বলে তিনি জানান।
 
মোমিনপুর এতিমখানা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থী ফুয়াদ, কবির, নুরুল ইসলাম সহ অনেকেই  জানান, আমরা আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজুকে কাছে পেয়ে এবং প্রতিমাসে আমাদের খাবারের জন্য আধাটন করে চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে আমরা খুবই আনন্দিত। তিনি যে আমাদের মতো এতিমদের মাথায় হাত রেখেছেন সে জন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমাদের মা-বাবা নেই, আমরা এতিম। চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের পিতার অভাব পূরণে ভুমিকা রাখলেন। আমরা তার জন্য দোয়া করবো সবসময়।
 
মোমিনপুর এতিমখানা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের মতো যারা অর্থবিত্তের মালিক রয়েছেন তারা যদি তার মতো করে এতিম শিশুদের প্রতি সুদৃষ্টি দেন, তাহলে এরা সঠিকভাবে লেখাপড়া করে সমাজ ও দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এছাড়াও এতিম এই শিশুরা মা-বাবা ও অভিভাবকহীনতার যে দুঃসহ কষ্ট বয়ে চলে, সেগুলো কিছুটা হলেও লাঘব করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
 
ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আরজু বলেন, গত নির্বাচনে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। আমি সেই দায়িত্ববোধ থেকে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব তহবিল থেকে সারা ঘাটাইলের অনেক এতিমখানা, মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। 

তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর দুই বছরে সম্পূর্ণ নিজ তহবিল থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নানান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রদান করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় মোমিনপুর এতিমখানা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য আজীবন প্রতিমাসে আধাটন করে চাউল দিব ও এতিম এই শিশুদের সকল চাহিদা পূরণের চেষ্টা আমার সাধ্যমতো করে যাব।
 
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এইসকল সহযোগিতা চলমান থাকবে। সকলের ভালবাসা নিয়ে সামনের দিনগুলো অতিবাহিত করতে চাই বলে সে সময় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল