• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গ্রামে গ্রামে পৌছে যাচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২০  

শেখ হাসিনা সরকারের ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন মাইলফলক স্থাপনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক এখন সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় গ্রামে গ্রামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে তৃণমূলের মানুষকে আরও বেশি ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসার পথ সুগম হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৬০০ ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্প নিয়ে শুরু হওয়া ইনফো সরকার-৩-এর কাজ এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটলে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকার ১০ কোটি মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে।

 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে দেশের দুটি বেসরকারি এনটিটিএন কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে চীনের বিশ্বখ্যাত কোম্পানি হুয়াওয়ে।

 

প্রকল্প পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে গ্রাম পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে এক হাজার পুলিশ স্টেশনে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এ প্রকল্পের ফলে শহর ও গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য দূর হবে, গ্রামে সর্বাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা সহজে পৌঁছে যাবে।

 

এক নজরে ইনফো সরকার-৩: তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে দুই হাজার ৬০০ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৬ সালে। এর আগে বিসিসি উপজেলা পর্যায়ে সরকারি অফিসে ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়ার জন্য ইনফো সরকার-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্প নেওয়া হলেও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে এটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্নিষ্টদের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।

 

ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ২২৭ কোটি টাকা এবং সরকার বহন করছে ৭৭২ কোটি টাকা।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নের বর্তমান চিত্র: প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ৬৩টি উপজেলার ৪৪৮টি উপজেলার দুই হাজার ৬০০ ইউনিয়নে এ প্রকল্পের আওতায় ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২ জেলার ২৪৭ উপজেলার এক হাজার ৩০৭টি ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ফাইবার অ্যাট হোম।

 

এই প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান আব্বাস ফারুক জানান, এরই মধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২৫২টি ইউনিয়নে কাজ সম্পন্ন করেছে। এই ইউনিয়নগুলো এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাকিগুলোর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে জেলা পর্যায়ে ১০০ জিবিপিএস, উপজেলা পর্যায়ে ১০ জিবিপিএস এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নূ্যনতম এক জিবিপিএস ডাটা ট্রান্সমিশন সক্ষমতায় উন্নীত হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্যও দূর হবে। কারণ প্রায় ৬০ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকায় ১০ কোটি মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে। তখন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। গ্রাম পর্যায়ে সরকারি সেবায় আরও স্বচ্ছতা আসবে।

 

বিসিসির প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সামিট কমিউনিকেশন এক হাজার ১২৬টি ইউনিয়নে কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী দুটি বেসরকারি এনটিটিএন কোম্পানি নির্মাণের পর পুরো নেটওয়ার্ক পরিচালনা করবে এবং ২০ বছর মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রকল্পে ট্রান্সমিশন লিঙ্ক স্থাপনে সর্বাধুনিক ডিডব্লিউডিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

প্রকল্প-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পে ট্রান্সমিশন লিঙ্ক নির্মাণে ১০০ জিবি সক্ষমতার ডিডব্লিউডিএম কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব ইউনিয়নে লিঙ্ক স্থাপন এবং নেটওয়ার্ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, সেসব ইউনিয়নে এখনই ব্রডব্যান্ড সুবিধা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে সেবাদানের কাজও চলছে। পুরো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করে নেটওয়ার্কের সক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার পরই সাধারণ পর্যায়ে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য উদ্বোধন করা হবে। এ নেটওয়ার্কে ট্রান্সমিশন সেবা দুটি বেসরকারি এনটিটিএন কোম্পানি দেবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল