• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গোপালপুরের যে স্থাপনা দৃষ্টি কাড়ে সবার

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

বিশ্বের বহু স্থানে, ভিন্ন ভিন্ন নামে, নব্য ও প্রাচীন অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। মূলত, এসব স্থাপনাসমূহের প্রতি প্রায় সবধরনের মানুষেরই অন্যরকম দুর্বলতা থাকে। এগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে মনে হয় যেন, জীবনবিহীন পদার্থ হওয়া সত্ত্বেও নিরবে এরা প্রতিনিয়ত এক-একটি ইতিহাস বর্ণনা করে যাচ্ছে।

এরকম ইতিহাস বর্ণনাকারী বহু স্থাপনার মধ্যে বাংলাদেশের নির্মাণাধীন একটি স্থাপনা অন্যতম। উক্ত স্থাপনাটির নির্মাণের ইতিহাস ও শৈল্পিক কলাকৌশল আমাদেরকে রীতিমত অবাক করে তুলে বারংবার। 

বলছিলাম টাঙ্গাইল জেলার, গোপালপুর উপজেলার, দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত "২০১ গম্বুজ মসজিদ" এর কথা। যেটি ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে অনেক উৎসুক মানুষের মনকে আলোড়িত করে তুলেছে।

গোপালপুরের "বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্ট" এর উদ্যোগে, ২০১৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে, ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারিতে, ১০০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরে, মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মাতা মিসেস রেজিয়া খাতুন।

ঐতিহাসিক ঝিনাই নদীর তীরে, প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশে, ১৫ বিঘা জমিতে অবস্থিত উক্ত মসজিদটির সর্বমোট ২০১ টি গম্বুজ রয়েছে। তার মধ্যে ২০০ টি গম্বুজের উচ্চতা ২৩ ফুট করে এবং মাঝখানের প্রধান গম্বুজের উচ্চতা ৮১ ফুট। সবচেয়ে বেশি গম্বুজের দিক থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই সর্বপ্রথম মসজিদ।

আর এতে মোট নয়টি মিনার রয়েছে। নির্মাণাধীন প্রধান মিনারটির উচ্চতা হবে ৪৫১ ফুট। যেটি লম্বায় ৫৭ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। উচ্চতার দিক থেকে এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিনার। তাছাড়াও মসজিদ ভবনের উপরে ১১১ ফুট করে চার কোণায় চারটি মিনার ও ১০১ ফুট করে আরো চারটি মিনার রয়েছে। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থবিশিষ্ট দ্বিতল এই মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, নিচতলা মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য বরাদ্দকৃত হয়েছে। আর এই ভবনের উত্তর পাশের ওযুখানায় একসাথে প্রায় ১৫০ জন করে অজু করতে পারবে।

অবাক হওয়ার মত হলেও সত্য যে, মসজিদটির ভেতরের দেয়ালে পুরো ৩০ পারা কুরআনই পিতল দিয়ে খোদাইকৃত হয়েছে। যা যেকেউ বসে বা দাঁড়িয়ে তা পড়তে পারবেন। প্রধান ফটকের পাশে মসজিদের দেয়ালেও পিতলের মাধ্যমে খোদাইকৃত হয়েছে আল্লাহর ৯৯ টি পবিত্র নাম। আর ইলেকট্রিক দরজাসমৃদ্ধ প্রধান ফটকটি নির্মাণেই ৫০ মণ পিতল ব্যবহৃত হয়েছে।

মসজিদের দেয়াল ও মেঝেতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে চীন ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক সব টাইলস ও পাথরসমূহ। উল্লেখ্য যে, মেঝের টাইলসগুলো বাহিরের তাপমাত্রা শোষণ করে মেঝে শীতল রাখে। 

অত্যাধুনিক লাইটিং ব্যবস্থা, পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ এই মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মিম্বার। 

সবচেয়ে আশা ও ভালো লাগার দিক হলো যে, মসজিদের পাশেই নির্মিত হচ্ছে পাঁচতলা ভবন সমৃদ্ধ বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের জন্য বৃহৎ পরিসরে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র। পাশাপাশি মসজিদকে কেন্দ্র করে ১৮ বিঘা জায়গা জুড়ে একটি হেলিপ্যাড নির্মিত হয়েছে। তাছাড়া এখানে গাড়ি পার্কিংয়েরও পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও বহু পেশার মানুষের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে এগিয়েছে। এ পর্যন্ত ৭০ শতাংশেরও বেশি নির্মানকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে এক সূত্রে জানা গেছে। নির্মাণকাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হলে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামের মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা জানানো হয়েছে।

দেশ-দেশান্তরের বহু জায়গা থেকেই বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও পেশার মানুষ এই ইসলামি স্থাপনাটি একবার হলেও দেখার নেশায় ছুটে আসে। এটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত থাকা সত্বেও, সর্বস্তরের মানুষের আসা-যাওয়ায় যেন একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পর্যটন শিল্পে এই মসজিদকে ঘিরে ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থাপনাটি নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য গর্বের এবং এটি ঐতিহাসিক কারণে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে আরো সুপরিচিত করে তুলার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে হয়। ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি তার দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য নিয়ে সুরক্ষিত থাকুক আজীবন, এটাই কামনা।

(জাফর আলী/ শিক্ষার্থীঃ শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল