• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল
সর্বশেষ:
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি : স্পিকার ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা পদ্মাসেতুর নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ ভুটানের রাজা অ্যানেসথেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের ৬ দফা নির্দেশনা

গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়ার সময় এখনই

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৯  

আমাদের একটা পুরনো ঐতিহ্য আছে; বলতে পারেন এটা আমাদের একটা অর্জনও। “হুজুগে বাঙ্গালী”- শব্দটার সাথে আপনারা অনেকেই কম-বেশী পরিচিত। আমাদের পূর্বপুরষরাও সে ঐতিহ্যকে সযত্নে লালন করে রেখেছিলেন- তাদের কর্মের মাধ্যমে। বাংলায় আমাদের একটি অতি পরিচিত শব্দ আছে- “গুজব” যার ইংরেজীতে অর্থ অনেক- Rumor, Idle Gossip, Bruit এরকম। এসব শব্দকে বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষিরা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করলেও এর মূলকথা- “গুজব”।

 

জার্মানির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের তথ্য উপদেষ্টা গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, একটা মিথ্যা ১০ বার প্রচার করলে তা সত্যে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে এ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে অনেক গুজব ছড়িয়েছিলেন তিনি। তাই সত্য লুকাতে বা দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে আজগুবি কিছু ছড়ালে তা দুনিয়াব্যাপী 'গোয়েবলস স্টোরি' নামে পরিচিতি পেয়ে আসছে।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইদানীং গুজব নামক একটি বিস্ফোরকের ফলে সমাজ ও দেশ প্রচন্ডরকম নিরপত্তাহীনতার  ঝুঁকিতে রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর আইনের আওতায় আনা না গেলে সমাজে নানা সন্দেহ ও সংশয় বাড়বে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল শক্ত হবে। এমনকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিকট অতীতে যার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। নাসিরনগরে তান্ডব, কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর চাঁদে তাকে দেখা ,পদ্মা সেতুতে মাথা লাগার গুজব।সর্বশেষ গতকাল ভোলার ঘটনা।

 

ভোলায় বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ। নিহত হওয়ার ঘটনা, পুলিশসহ আহত আরো শতাধিক।

 

শনিবার থেকে ঘটনার সূত্রপাত। এক সনাতন ধর্মাবলম্বী ছেলের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নামে কটূক্তি করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী, এর পরেই এই অবস্থার শুরু হয়।

পুলিশ বলছে, রোববার বোরহানউদ্দিন এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে মুসল্লিরা। 

সমাবেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা থাকায় পুলিশ সেখানে জমায়েত করতে বাধা দেয়। 

পুলিশের দাবি, বাধার এক পর্যায়ে মুসল্লিদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। 

সেসময় হামলাকারীদের সাথে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত ও নিহত হয়।

 

পুলিশ বলছে ঘটনা মূলত এই, কিন্তু ঘটনার অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

আইডি হ্যাক করে হিউমার ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ করার ঘটনা নতুন নয়। 

ভোলায় বোরহানউদ্দিনে যা ঘটেছে ঘটছে অতীতে নাসিরনগর গঙ্গাচড়া সহ আরও নানান জায়গায় ঘটে যাওয়া নোংরা ঘটনার পুন:পুনরাবৃত্তি বলেই ধরে নেয়া যায়।

 

সবাই সচেতন থাকুন। 

গুজবে কান না দেয়ার জন্য করজোরে অনুরোধ থাকছে।

 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত গুজবের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকারের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অনেকে মনে করেন যখন কোনো ঘটনার পর সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পরিস্কারভাবে জনগণের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়, তখন গুজব ডালপালা ছড়ায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ফিল্টারিং ছাড়া তথ্য বা মতামত দেওয়া হয়, যেটা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বলা হয়ে থাকে গুজব সত্যের চেয়েও শক্তিশালী। যখন সঠিক তথ্য জানা সম্ভব না হয় বা অর্ধেক তথ্য জানা যায়, তখনই গুজবের ডালপালা ছড়ায়। অনেক সময় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থে গুজব ছড়ানো হয়। সম্প্রতি দেশের মূলধারার কিছু গণমাধ্যমও রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে গুজবে পা দিয়েছে। নিজস্ব একাধিক সূত্র থেকে তথ্য যাচাই না করে খবর প্রচার করা হয়। বর্তমান বাস্তবতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক ও শক্তিশালী হলেও তা সংবাদমাধ্যম নয়। তাদের কোনো গেটকিপার নেই। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়া সংবাদ হিসেবে ব্যবহার করা হলে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।

 

তবে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যারা এসব মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে তাদের ধরা খুব সহজ নয়। কারণ, অধিকাংশ আইডির আইপি ঠিকানা দেশের বাইরে।

 

 কিছু কিছু সাইট থেকে  সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতাদের ছবি অশালীনভাবে ব্যবহার করে প্যারডি ভিডিও ছাড়া হয়েছে।

 

এসব আইডির অধিকাংশের ইন্টারনেট প্রটোকল ঠিকানা (আইপি) দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। খুব অল্প অর্থে ডোমেইনের জন্য এসব সাইটের হোস্টিং কেনা যায়। কখনও একটি সাইটের পেছনে মাত্র এক ডলার খরচ হয়। অল্প অর্থের বিনিময়ে কথিত খবর ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, যাকে বলা হয় 'বুস্ট'।

 

 জনপ্রিয় তারকাদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে ফেইক ফেসবুক পেজ খোলা হয়। অনেকে তারকাদের ছবি দেখে সেই পেজে যান। মূলত এসব পেজ থেকে যারা গুজব ছড়ায়, তাদের ৮০-৯০ শতাংশের টার্গেট সরকার, প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ। অনেকে সরকারের জনপ্রিয় পরিকল্পনাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। এতে সংশ্নিষ্টদের ধারণা, গুজব ছড়ানোর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে। নিজের পরিচয় লুকাতে অনেক কুৎসা রটনাকারী ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করেন। আইন অনুযায়ী অনলাইনে গুজব ছড়ালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারার মামলার বিধান রয়েছে। ৫৭ ধারার প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অনেকে মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তির এহেন অপব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

লেখক

-আব্দুল্লাহ্ আল সাদি সিয়াম 

 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল