• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

খরগোশ পালনে স্বাবলম্বী মধুপুরের গ্রামের নারীরা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২০  

টাঙ্গাইলে মধুপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের অর্ধশত হতদরিদ্র নারী সংসারের কাজের পাশাপাশি খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই গ্রামের অনেক বাড়িতেই নারীরা খরগোশ পালন করছেন। এক সময় এই গ্রামের নারীরা হাঁস-মুরগি এবং গরু-ছাগল পালন করতেন। এখন এসবের পাশাপাশি খরগোশ পালনে লাভের মুখ দেখছেন বেশি। এতে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন এই গ্রামের হতদরিদ্র উদ্যমী প্রান্তিক নারীরা। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে ব্যাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।

মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম পিরোজপুর। মধুপুর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আনারস, পেঁপে, আদা, হলুদ, কচু, সরিষা, ধান, পাট, আলু, কলা, সবজি এই গ্রামের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল। কৃষি তাদের প্রাণ।


 
গরু-ছাগল এবং হাঁস-মুরগি পালনে গ্রামের নারীরা এগিয়ে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে জড়িত। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তারা এখন খরগোশ পালনে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। এই গ্রামের প্রায় অর্ধশত নারী নিজেদের সংসারের কাজের পাশাপাশি খরগোশ পালন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুর গ্রামের প্রায় নারীরই রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫-২০টি করে খরগোশ। তারা জানালেন, প্রতিটি মা খরগোশ ৪-৯টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। বাড়িতে পাইকাররা এসে নগদ দামে কিনে নেন। নারীরা সকালে নিজেদের বাড়ির কাজ শেষে মাঠে গিয়ে ঘাস কেটে এনে খরগোশদের খাবার দেন।

নারীরা জানান, খরগোশ পালনের জন্য আলাদা ঘর প্রয়োজন। এ জন্য কাঠের ফালি দিয়ে বাক্স বানিয়ে তিনদিকে কাঠের বেড়া দিতে হয়। সামনের দিকে জালের নেট দিয়ে দরজা বানিয়ে খরগোশ পালন করা হয়। এতে সামনের দিক দিয়ে আলো-বাতাস ঢুকে ও ময়লা পরিষ্কার করতে সহজ হয়। দিনে ও রাতে কয়েকবার খাবার দিতে হয় এবং এই খরগোশ থাকার ঘর বা টং পরিষ্কার করতে হয় প্রতিদিন। খাবারের মধ্যে ঘাস অন্যতম। ঘাসের সঙ্গে ভাত ও ধানের কুড়া মিশিয়ে খাবার দিতে হয়। ছোট বাচ্চাগুলোকে আলাদা রাখতে হয়। যাতে বড় খরগোশের চাপে বা আঘাতে না মারা যায়।


 
প্রতিদিন ৪-৫ বার দুধ খাওয়াতে হয়। বাচ্চা দেখতে ইঁদুরের মতো। ২০-২৫ দিনের মধ্যে বাচ্চা বিক্রি করা যায়। প্রতিটি বাচ্চা ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। শীতকালে দাম কিছুটা কম থাকে।

খরগোশ পালনকারী আজিরন বেগম বর্তমানে ১৫টি বড় খরগোশ পালন করছেন। প্রতি মাসে তিনি ১৫-২০টি করে বাচ্চা বিক্রি করেন। এতে তার প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়। আর এই আয় দিয়ে তিনি তার কাপড়, নাতি-নাতিনদের পড়াশোনার খরচ চালান। এখন তার আর বাড়তি অর্থের জন্য চিন্তা করতে হয় না।

হনুফা বেগমের (৩৫) রয়েছে ১৬টি বড় মা খরগোশ। প্রতি মাসে খরগোশ বিক্রি করে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আসে তার। নিজের খরচ মিটানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় না।


 
ফরিদা বেগম (৪০) খরগোশ পালন করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। বাড়িতে থাকার ঘর দিয়েছেন। স্বামীকে প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার টাকা করে সাহায্য করেন। এভাবে শুধু আজিরন, নাজমা, হনুফা, ফরিদাই নন, এই গ্রামের অর্ধশত নারী এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তারা জানান, বর্তমানে পাইকার কম থাকার কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা অথবা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন- এমনটাই জানালেন এই গ্রামের নারীরা।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল