• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

করোনায় বেজার ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অনলাইনে মিলছে ব্যবসার অনুমোদন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২০  

মহামারির আকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা (কোভিড-১৯) সংকটে যেখানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক  অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) সেন্টারের সেবা মিলছে সার্বক্ষণিক। এখন ঘরে বসে অনলাইনে ক্লিক করেই মিলছে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমোদনসহ বিভিন্ন সেবা। ‘কভিড-১৯’ মহামারীর ভয়কে জয় করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছে ওএসএস সেন্টার।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগের ফলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের এখন আর ফাইলপত্র নিয়ে অনুমোদনের জন্য দফতরে দফতরে ঘুরতে হচ্ছে না। সুদূর ইউরোপ আমেরিকা থেকেও স্বল্প সময়ে অনলাইনে মিলছে কাক্সিক্ষত সুবিধা। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হয়েছে।

 

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর কোথাও এতসব সুবিধা একই ছাতার নিচ থেকে পাওয়া যায় না, যেটি বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে মাত্র পাঁচ ধরনের সেবা পাওয়া যায় ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। অথচ বাংলাদেশে আমরা ১২৫ ধরনের সেবা বেজার মাধ্যমে দিচ্ছি। এর মধ্যে অনেক সেবাই মিলছে অনলাইনে। করোনা সংকটে ভীতিকর পরিবেশেও ঘরে বসে অনলাইনে এসব সেবার সুফল মেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় বিনিয়োগকারীদের ভিসা সুপারিশপত্র, বিনিয়োগ ছাড়পত্র, কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট, আমদানি অনুমোদন, রপ্তানি অনুমোদন, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প নিবন্ধন, স্থানীয় বিক্রিতে অনুমতি, স্থানীয় ক্রয়ের অনুমতি ও নমুনা আমদানি অনুমতি অনলাইনে দিচ্ছে বেজা।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সব মিলিয়ে ১২৫ ধরনের সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ওএসএস সেন্টার থেকে, যার মধ্যে ৩৭ ধরনের সেবা দিচ্ছে বেজা নিজে। বাকি ৮৮ ধরনের সেবা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হলেও সেসব সেবাও বেজা থেকেই নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৯ ধরনের সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১০৬টি সেবা প্রচলিত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হলেও আগের তুলনায় সময় অনেক কম লাগছে।

 

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি সেবাগুলো ডিজিটাল প্লাটফর্মে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও, ‘কভিড-১৯’ মহামারীর কারণে এ প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে এসব সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেজার সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে তিনি জানান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগজনিত সেবা একই ছাতার নিচ থেকে দেওয়ার লক্ষ্যে গত বছর অক্টোবরে ওএসএস সেন্টারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে বেজা। এরপর থেকে গত ৯ মাসে এই সেন্টার থেকে ৪৯টি প্রকল্প, ৬ হাজার ২১৯টি আমদানি অনুমতি, ১ হাজার ১৮৪টি রপ্তানি অনুমতি, ৩৮৬টি ভিসা অনুমোদনের সুপারিশ, ১৩৬টি ওয়ার্ক পারমিট এবং ১১টি ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

 

এর আগে এ ধরনের সেবা পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো সম্ভাব্য উদ্যোক্তাকে। ব্যবসা শুরুর জন্য এক দফতর থেকে আরেক দফতরে ঘুরতে হতো দিনের পর দিন। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসাসূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস অনুযায়ী দেশে কিছু কিছু সেবা পেতে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। যেমন- কারখানার ভবন নির্মাণের অনুমতি পেতে প্রায় ২৮১ দিন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সময় লেগে যেত প্রায় ১৪৮ দিনের মতো। ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করাটাই ছিল একটি বিরক্তিকর ও হতাশাজন কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসা শুরুর জন্য অন্তত ১৬ ধরনের অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের সরকারের বিভিন্ন দফতরে দৌড়াতে হতো, এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হতো। বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার কার্যক্রম শুরুর পর এখন ঘরে বসে কম্পিউটারে মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে ১৯টি বড় ধরনের সেবার অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে, যা মহামারীর মধ্যে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি উত্তম উদাহরণ। পবন চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য ভিসার অনুমোদনের জন্য আগে দেশি-বিদেশি দূতাবাস ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হতো। এখন শুধু বেজার ওএসএস সেন্টারকে জানালেই এ অনুমোদন মিলে যাচ্ছে স্বল্প সময়ে। আগে ওয়ার্ক পারমিট পেতে সরকারের কয়েকটি দফতরে যেতে হতো। এখন ওএসএস সেন্টার থেকেই এটি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীরা যদি সব সেবা একই জায়গায় পায় তবে তাদের আস্থা বেড়ে যায় অনেকগুণ, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাড়াতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে, এটাই বড় কথা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়লে বাংলাদেশ আরও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পাবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল