• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

করোনাভাইরাস আক্রমন : চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

করোনাভাইরাসের আক্রমনের কারনে ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে রপ্তানি হচ্ছে না সাতক্ষীরার কাঁকড়া ও কুঁচে। ফলে এ আহরণ থেকে রপ্তানির সাথে সম্পৃক্ত সাতক্ষীরা জেলার কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন বিপাকে। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে বর্তমানে অনেকে অন্যের ক্ষেতে দিন মজুর খাটছেন।

 

দেবহাটার পারুলিয়া বাজারের হেমন্ত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হেমন্ত দুলাই বলেন, গত ছয় বছর ধরে তিনি পারুলিয়া বাজরে কাঁকড়া ও কুঁচে কেনা বেচা করে থাকেন। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের উজিরপুর, দেবহাটার গাজীরহাট, পারুলিয়া, কুলিয়া ও আশাশুনির বদরতলাসহ বিভিন্ন বাজর থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই বাজারে কাঁকড়া  ও কুঁচে বিক্রি করে থাকেন। এই বাজারে তিনি একাই কুঁচে কিনলেও কাঁকড়া কেনেন অনেকে। এক সময় কাঁকড়া  ও কুঁচে প্রাকৃতিকভাবে নদী, খাল, পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ে পাওয়া যেত। সাতক্ষীরায় সাধারণতঃ মিষ্টি পানির কুঁচে ও লোনা পানির কাঁকড়া পাওয়া যায়। মিষ্টি পানির কুঁচে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর লোনা পানির কুঁচে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। 

 

তিনি আরো বলেন, আগে হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মিষ্টি পানির কুঁচে খেত। তখন কম দামেই মিলত এসব। কয়েক বছর আগে চীনসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের কুঁচের উপর ঝুঁকে পড়ে। ফলে শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে কাঁকড়া  ও কুঁচে রপ্তানি। তখন থেকেই কাঁকড়া গ্রেড অনুযায়ী বিক্রি শুরু হয়। কাঁকড়ার আকার ও গুণগতমান অনুযায়ী কেজি প্রতি চীনে বিক্রি হতো এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। ফলে সাতক্ষীরার মানুষ কাঁকড়া  ও কুঁচে সংগ্রহের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে। চীনে রপ্তানির জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুই তিনদিন পর পর পাঁচ থেকে ছয় টন কুঁচে ঢাকার উত্তরায় পাঠনো হতো। কাজেই কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। 

 

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, করোনা ভাইরাস আক্রমনের ফলে গত ২৫ জানুয়ারী থেকে চীনে কাঁকড়া  ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দুই তিন দিন পর পর ৩০ থেকে ৪০ কেজি করে কুঁচে তারা সংগ্রহ করে থাকেন। বর্তমানে খরিদ্দার না থাকায় বেশ কিছু কুঁচে মারা যাচ্ছে। মরা এই কুঁচে শুকিয়ে কাঁকড়া ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, কলবাড়ি ও বুড়িগোয়ালিনী এলাকায়। শুকনা কুঁচে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। একই কথা জানালেন পারুলিয়া বাজারের সন্দীপ পোইট, প্রসেনজিৎ মন্ডল ও আবুল কাশেম।

 

দক্ষিণ পারুলিয়ার সুনীল ভূঁইয়া বলেন, তিনি গত ১২ বছর ধরে কুঁচে মজুদ করে ঢাকায় পাঠান। তিনিসহ ছয়জন এ ব্যবসার সাথে জড়িত। চীনে কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার থেকে কিনে ঘরে রাখা কুঁচের একটি বড় অংশ মারা যাচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। একই গ্রামের মৃণাল ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বাজার থেকে কুঁচে সংগ্রহ করে পারুলিয়াসহ বিভিন্ন সেটে বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। সাতক্ষীরা থেকে চীনে কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সংসারে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে বর্তমানে তিনি অন্যের ক্ষেতে দিনমজুর খাটছেন।

 

পারুলিয়া বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনু, মিজানুর রহমান ও শাহীন ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকার মহাজনদের কাছ থেকে তারা তাদের বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না। ফলে ঘের মালিকও খুচরা ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে তারা বিপাকে পড়েছেন। এই সুযোগে অনেক হ্যাচারী মালিক কম দামে কাঁকড়া কিনে মজুদ করছেন। একই কথা জানালেন কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুরের কাঁকড়া ও কুঁচে ব্যবসায়ী আব্দুল বারী ও মিজানুর রহমান। 

 

সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ও কুঁচে ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব মন্ডল বলেন, ঢাকার উত্তরার তমা এন্টারপ্রাইজ, জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও জেড এল এন্টারপ্রাইজ, কাশেম ইন্টারন্যাশনাল ও সিরাজ ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি কোম্পানিকে তারা কাঁকড়া ও কুঁচে সরবরাহ করে থাকেন। ওই সব কোম্পানি মূলতঃ চীন  ও উত্তর কোরিয়ায় কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করতো। গত ২৫ জানুয়ারী থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ঢাকার রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আটকা পড়েছে। এতে করে সাতক্ষীরার অনেক ব্যবসায়ী তাদের ঘর বন্ধ করে দিয়েছেন। 

 

তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার মাত্র একটন কাঁকড়া সাতক্ষীরা থেকে রপ্তানি হলেও তার মূল্য চীনা বাজার থেকে অর্ধকেরও কম। এছাড়াও গ্রেডগত ভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। অবিলম্বে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করা না গেলে এ পেশার সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান জানান, গত বছরে জলোয় ৩১০ দশমিক ৯ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। ওই জমি থেকে দুই হাজার ১৯০ দশমিক ৪ মেট্রিক টন ও সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে এক হাজার ১০৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। তবে কি পরিমাণ কুঁচে সংগ্রহ করা হয়েছিল তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

 

এদিকে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জেলার কাঁকড়া ও কুঁচে চাষ। চীনের আমদানিকারকদের কাছে বাংলাদেশের কাঁকড়া ও কুঁচে ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৫০ কেটি টাকা পাবে। ফলে একদিকে ব্যবসা বন্ধ অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদাররা।

 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল