• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ভুঞাপুরের সফল কৃষক আহসান

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

মাত্র ৫৬ শতাংশ জমি। অন্যদিকে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধি। অভাবের সংসার। তবুও জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী জীবনযাপন করছে কৃষক। একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১ ছেলে ও ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১ মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে পরিবার তার। শুধু কৃষি কাজ আর ওই ৫৬ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন্ ধরণের সবজি চাষ করেই সংসারের হাল ধরছে। কথাগুলো বলছিলাম ৫১ বছর বয়সি প্রতিবন্ধি একজন কৃষককে নিয়ে। সে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের চরাঞ্চলের বাসিন্দা মো. আহসান আলী।

প্রতিবন্ধি আহসান আলীর ১৯৬৯ সালে কৃষক পরিবারে জন্ম। সুযোগ হয়নি বাল্য শিক্ষার। ছোট বেলা থেকেই অন্যের বাড়িতে দিনমুজুরের কাজ করতেন। বয়সের বাড়ে এখন সে আগের মতো মজুরের কাজ করতে না পারায় তার আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়। কামলা (কৃষি মুজুর) হিসেবেও কেউ কাজে নেয় না। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতো। একপর্যায়ে কোন উপায় না দেখে ২০১৬ সালে অন্যের ২৬ শতাংশ জমি (বর্গা) নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষাবাদ শুরু করেন। সবজি চাষে লাভবান হয়ে ২০১৭ সালের শেষের দিকে কিছু কিছু করে টাকা জমিয়ে ৩০ শতাংশ জমি (বন্দকি) রাখেন। এদিয়ে মোট ৫৬ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি চাষ শুরু করে আসছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধি কৃষক তার ৫৬ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুল, সয়াবিন তেল গাছ, তিল, তিষী, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, গোটা সজ, মরিচ ও বেগুন ১০ ধরণের সবজি চাষ করছেন। ভোর সকাল থেকেই পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতেই ফসলের পরিচর্যা করাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সবজি বিক্রি করেন। এ থেকে তার সংসারের চাহিদা পূরণ করেও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার অর্থের যোগানও আসে।

কৃষক আহসান আলী আরো বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরণের সবজি বীজ, সার, কীটনাশক ও কৃষি পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করায় স্বাবলমী হয়েছি। এখন একটাই স্বপ্ন (জমি চাষ করার জন্য) একটি ট্রাক্টর কেনার। কিন্তু ট্রাক্টর কেনার এত টাকা না থাকায় কিনতে পারছি না। সরকার বা কৃষি অফিস স্বপ্নটি পূর্ণ করে দেয় তাহলে তা নিজের জমি চাষ করেও অন্যের জমিতে চাষ করে সংসারের অভাব-অনটন দূর কর যাবে ও সন্তানের পড়াশনা ভালমতো করাতে পারবো।

আহসান আলীর ছেলে ও একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র মো. সৌরভ খান বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। এটা আমার গর্ব ও অহংকার। পড়াশনার পাশাপাশি বাবাকে কৃষি কাজে সহযোগিতা করি। যাতে বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। সবজি বিক্রি করে আমাদের ভাই-বোনদের লেখাপড়া করাচ্ছে। তাই এ কাজকে ছোট করে দেখেনি। সৌরভের বোন ও (৭ম শ্রেণি) বলেন, শাক সবজি বিক্রির টাকায় আমরা পড়াশনা করি। বাবা কখনো আমাদের চাওয়া অপূর্ণ রাখে না। স্কুল ছুটিরপর ক্ষেতে কৃষি কাজে সহযোগিতা করি। কাজ করতে ভালো লাগে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, হতদরিদ্র ওই প্রতিবন্ধি কৃষকটির ব্যাপারে ও পরিবারের অবস্থা জানতে পারি সে প্রতিবন্ধি ও প্রান্তিক পর্যায়ে হতদরিদ্র কৃষক। সে থেকেই তাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে সবজিবীজসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করা হয়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল