• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

উচ্চ আদালতের মামলাজট কমাতে এ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্যোগ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২০  

উচ্চ আদালতে মামলাজট নিরসনে এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় বেশকিছু উগ্যোগ গ্রহণ করেছে। মহামারী করোনার কারণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলাজট আরও প্রবল হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হেভিওয়েট (চাঞ্চল্যকর) মামলাগুলো তালিকা ধরে পর্যায়ক্রমে শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ বিচারাধীন যেসব মামলা স্থগিত হয়ে আছে, সেগুলো দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি পেন্ডিং মামলা এবং রিভিশনের কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকা মামলাগুলো খুঁজে বের করে সচল করা হবে। যে আপীলের মামলাগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলা যেন নষ্ট হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইনজীবীরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, আদালতে মামলা বেড়েছে, বিচারপতির সংখ্যা কমেছে। বিচারপ্রার্থী ও মামলার নিষ্পত্তির স্বার্থে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে আরও বিচারক নিয়োগ দেয়া উচিত। আপীল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে ২৩ হাজার ৬১৭ মামলা। এর মধ্যে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য অপেক্ষা করছে আট শতাধিক। আপীল বিভাগে বিচারক সংখ্যা মাত্র ৭ জন।

নবনিযুক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, করোনার কারণে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর শুনানি হয়নি। এগুলো তালিকা ধরে ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদালতে মেনশন করে একটা একটা করে আনা হবে। এরই মধ্যে এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব মামলা সচল করাসহ নানা দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা দেখা কত মামলা পেন্ডিং আছে। সেখান থেকে কিছু মামলা রিভিশনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। সেগুলো খুঁজে বের করে সচল করার চেষ্টা করব। আর যেগুলো আপীলে আছে, সেগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তির চেষ্টা করব।

করোনার কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া বিচারকাজ সচল করতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। গত ১৩ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপীল বিভাগে ৪ হাজার ৭৩ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৩০৩ মামলা। সুপ্রীমকোর্ট স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়লেও বিচারপতির সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। মামলা জটের এটিও একটি কারণ। বর্তমানে আপীল বিভাগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ ৭ বিচারপতি রয়েছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে রয়েছেন ৯২ বিচারপতি। সে হিসেবে আপীল বিভাগে এক বিচারপতি গড়ে ৩৩৭৩ এবং হাইকোর্টে এক বিচারপতির হাতে রয়েছে ৫৩১৫ মামলা। এর আগে আপীল ও হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা বেশি ছিল। আইনজীবীদের অভিমত যেহেতু মামলার সংখ্যা বাড়ছে সে বিবেচনায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিচারপতি নিয়োগ প্রয়োজন।

উচ্চ আদালতে বিডিআর হত্যা মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলা, চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা, পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আপীলসহ চাঞ্চল্যকর এসব মামলাগুলোর শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। এ্যাটর্নি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতের এসব মামলার শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। করোনার সময় মামলাগুলোর শুনানি হয়নি। চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তালিকা ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে শুনানি উদ্যোগ নেয়া হবে। এদিকে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীরা বলেছেন, এ্যাটর্নি কার্যালয়ের এ উদ্যোগটি ভাল। এর ফলে মামলা জট অনেকাংশে কমে যাবে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের উদ্যোগটি খুবই প্রশংশনীয়। কারণ উচ্চ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মামলাগুলোর শুনানি উদ্যোগ নেয়াটা ভাল কথা। এর ফলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সেটাও ভাল দিক। বিচারপ্রার্থী জনগণ নিশ্চয়ই এর সুফল পাবেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, নতুন এ্যাটর্নি জেনারেল মামলা জট নিরসনে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এটা ভাল উদ্যোগ। আমি আশা কারি তার এই উদ্যোগ যেন সফল হয়। তার এই পদক্ষেপে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, মামলা বাড়ছে কিন্তু বিচারক বাড়ছে না। উচ্চ আদালতসহ নি¤œ আদালতে আরও বিচারক নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ একজন বিচারকের কাছে কয়েক হাজার মামলা বিচারাধীন। এছাড়া দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে না পারায় মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী স্বপন কুমার রায় বলেন, বর্তমানে উচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতগুলোতে পাহাড়সম মামলা জট রয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা খুবই ভাল পদক্ষেপ। আমি আশা করি এর ফলে মামলা জট অনেকাংশে কমে যাবে। বিচারপ্রার্থীরাও অনেকাংশে উপকৃত হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরদ্ধে আপীল বিভাগে ২৯ মামলা রয়েছে। এর আগে ৩০ মামলা ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির, শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সংগঠক আবদুস সুবহান মারা যাওয়ায় তার আপীল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। এই ২৯ আপীলসহ উচ্চ আদালতে ৮ শতাধিক ডেথ রেফারেন্স মামলা রয়েছে। যেগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলার মামলা, চলন্ত বাসে সিরাজগঞ্জের রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, বাসচাপায় শিক্ষার্থী মীম-রাজিবের মৃত্যুর মামলার আপীল, নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলা, চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা, পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা, রাজন হত্যা মামলা, রাকিব হত্যা মামলা, পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলা, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদনের শুনানি, হলি আর্টিজান মামলার জেল আপীল, ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপীল এবং জেল আপীল, রমনার বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ মামলা, চট্টগ্রামের লালদীঘিতে ২৪ হত্যা মামলার আপীল, হলি আর্টিজান হত্যা মামলার আপীল, গাইবান্ধার এমপি লিটন হত্যা মামলা, এমন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অগণিত মামলার ডেথ রেফারেন্স ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির আপীল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল