• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ইরানের যে অস্ত্রগুলি নিয়ে চিন্তিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২০  

ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হবার পর প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান। যারা জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পেছনে দায়ী তাদের জন্য ‘কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে’ বলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে একহাত নেয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের। 

 

এক নজরে দেখে নেয়া যাক দেশটির বর্তমান সামরিক শক্তি-

সেনাবাহিনী 

ইরানের বর্তমান সক্রিয় সেনাসদস্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার। এছাড়া সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে তিন লাখ ৫০ হাজার জন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মতে কমপক্ষে দেড় লাখ ইসলামিক রিভলিউশানারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি সেনা আছে দেশটিতে। আইআরজিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ৪০ বছর আগে যা পরে বড় মিলিটারি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। এটাকে ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফোর্স বলে মনে করা হয়।

 

দেশটির ট্যাংকের সংখ্যা এক হাজার ৬৩৪টি। সাঁজোয়াযানের (আর্মরড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা দুই হাজার ৩৪৫টি। সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান (টোয়েড আর্টিলারি) রয়েছে দুই হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি সংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও এক হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে।  

বিমানবাহিনী 

ইরানের বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ৫০৯টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির। ইরানের হাতে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো স্টেলথ ফাইটার বিমান নেই। 

নৌবাহিনী 

ইরানের নৌবাহিনীতে এখন পর্যন্ত যোগ হয়নি কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। বাহিনীটিতে ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং সাবমেরিন রয়েছে ৩৪টি। নেই কোনো ডেস্ট্রয়ার। তবে ইরানের ৮৮টি পেট্রোলবোট  ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে। 

পারমাণবিক শক্তির তুলনা

যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হলেও এখন পর্যন্ত ইরানের বোমা নেই বলে ধারণা করা হয়। মার্কিনিদের হাতে ৭ হাজার ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তাই পারমাণবিক শক্তির দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র।  

দেশের বাইরে অভিযান

কুদস ফোর্স যার নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল সোলেইমানি, সেটি বিদেশে অনেক গোপন অভিযান পরিচালনা করে এবং তারা সরাসরি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করে। এই ইউনিটকেই সিরিয়াতে মোতায়েন করা হয়েছিলো যারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও সশস্ত্র শিয়া মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। ইরাকে তারা শিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি প্যারা মিলিটারি ফোর্সকে সমর্থন করতো যারা ইসলামিক স্টেট গ্রুপের পরাজয়ে সহায়তা করেছে।

 

যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে কুদস ফোর্স অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও উপকরণ দিয়েছে এমন সংগঠনকে যাদের যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে মনে করে। এর মধ্যে লেবাননের হেজবোল্লাহ আন্দোলন এবং প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদও রয়েছে। অর্থনৈতিক সমস্যা ও অবরোধ ইরানের অস্ত্র আমদানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

 

দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে তা সৌদির আরবের মোট সামরিক আমদানির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মাত্র। ইরানিরা সামরিক খাতে বেশী আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে এবং এর পরেই আছে চীনের অবস্থান।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আছে?

ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় বিশেষ করে স্বল্প পাল্লা আর মাঝারি পাল্লার। তারা আরও বলছে, ইরান স্পেস টেকনোলজি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে যাতে করে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা যায়।

 

তবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ইরান স্থগিত করেছিলো ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পর, বলছে রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউট। তবে তারা এও বলছে যে, এটি আবার শুরু হয়ে যেতে পারে ওই চুক্তির অনিশ্চয়তার কারণে। অনেক ক্ষেত্রেই সৌদি আরব ও উপসাগরীয় এলাকার অনেক টার্গেট ইরানের স্বল্প বা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতাতেই আছে, বিশেষ করে ইসরায়েলে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলো।

 

এছাড়া আরও প্রমাণ আছে যে তেহরানের আঞ্চলিক মিত্ররাও ইরানের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে বিশেষ করে সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের টার্গেটগুলোর ক্ষেত্রে। গত বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করে মধ্যপ্রাচ্যে যা ইরানের সাথে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর মানে হলো পাল্টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ মিসাইল ও অগ্রবর্তী এয়ারক্রাফট।

অপ্রচলিত (নন কনভেনশনাল) অস্ত্র কোনগুলো

কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান তার ড্রোন সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সাল থেকেই ইরাকে ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। ২০১৯ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করে তারা এই অভিযোগে যে ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এর বাইরে তারা ড্রোন প্রযুক্তি তাদের মিত্রদের কাছেও স্থানান্তর বা বিক্রিও করেছে। 

 

২০১৯ সালেই ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হেনেছিলো সৌদি তেল ক্ষেত্রে। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র এজন্য ইরানকেই দায়ী করেছিলো। যদিও তেহরান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং তারা ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের দায় স্বীকারের দিকে ইঙ্গিত করেছে।

ইরানের সাইবার সক্ষমতা আছে?

২০১০ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর বড় ধরণের সাইবার অ্যাটাকের পর তারা সাইবার স্পেস সক্ষমতায় জোর দেয়। আইআরজিসিরি নিজস্ব সাইবার কমান্ড আছে বলে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালের এক রিপোর্টে বলেছে, ইরান অ্যারোস্পেস কোম্পানি, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার, এনার্জি ও ন্যাচারাল রিসোর্সেস কোম্পানি ও টেলিকম ফার্মগুলোকে তাদের বিশ্বব্যাপী সাইবার অপারেশনের কাজে টার্গেট করেছে।

 

২০১৯ সালে মাইক্রোসফট বলেছে, ইরান ভিত্তিক একটি হ্যাকার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকে টার্গেট করেছিলো ও তারা আমেরিকা সরকারের অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।

 

ইরানের কাছে কী পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে, এ ব্যাপারে বিশদ কোনো তথ্য নেই। তবে অস্ত্রের মজুত তাদের নেহাত কম নয়। ট্যাংকের মতো ভারী অস্ত্র তারা নিজেরাই তৈরি করে। আছে সাবমেরিন বিমানবাহী তরি, যুদ্ধবিমান, গোলাবারুদসহ ভারী অস্ত্র। আরও আছে স্বল্প, মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। শাহাব, আশুরা, কাদের, সেজ্জিল—এসব ক্ষেপণাস্ত্র এক হাজার থেকে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে পারে। মিশকাত নামের ইরানি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের দৌড় দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল