• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আলো ছড়াচ্ছে নতুন বই

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

আলো ছড়াচ্ছে নতুন বই

আলো ছড়াচ্ছে নতুন বই

মেলা জমতে সময় নেয়। কয়েকদিন পেরোলে পাঠকের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কল্যাণে এবার দ্বিতীয় দিনেই মেলা জমে উঠেছে। বেলা যত গড়িয়েছে মেলায় পাঠকের আনাগোনা ততই বেড়েছে। সব স্টলে বিক্রি সমান হারে না বাড়লেও মানুষের সমাগম জমিয়ে তুলেছে বইমেলা।

প্রথম দিনের ধূলিধূসর পরিস্থিতি কাটিয়ে মেলা গুছিয়ে উঠছে। পানি ছিটানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। ফিরে এসেছে চিরচেনা সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে, কিন্তু সেসব কোনো বাধা হয়নি বইয়ের টানে ছুটে আসা দর্শনার্থীদের। যারা বইয়ের গন্ধ ভালোবাসেন, ভালোবাসেন পড়তে, তারা ঠিকই এসেছিলেন মেলায়। নতুন নতুন বইয়ের ছটায় আলোকিত হয়ে উঠেছে বইমেলা। এদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে আলোচনা ও অনুষ্ঠান।

তাম্রলিপির প্রকাশক একে তারিকুল ইসলাম রনি বললেন, ছুটির দিনে মেলা জমে ওঠে মানুষের আনাগোনায়। এবারও তাই হয়েছে। প্রচুর মানুষ আসছে। তারা শুধু বই দেখছেন না, কিনছেনও। এবারের মেলাটা বেশ জমাট হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ধীরে ধীরে বইমেলার চরিত্র বদলাচ্ছে। পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে বইয়ের প্রকাশনা। পাঠকের আগ্রহ বিভিন্ন দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধু গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধে থেমে নেই। সে কারণে বই বৈচিত্র্য বেড়েছে। যারা তরুণরা বই পড়ছে না বলে ‘হায় হায়’ করেন তাদের মিথ্যে প্রমাণ করে বিকেলে বইমেলা ভরে উঠেছিল তরুণ-তরুণীদের পদচারণায়। স্টলগুলোতে বিক্রেতাদের বই গোছাবেন নাকি বিক্রি করবেন এমন মধুর সমস্যাতেও পড়তে দেখা গেল। অনেকে খোঁজ করছেন তার প্রিয় লেখকটির বই এসেছে কিনা। মেলার শুরুতেই প্রিয় লেখকের বইটি হাতে পাবার আগ্রহ।

ছুটির দিন শনিবার ছিল শিশুপ্রহর। মেলার দুয়ার খুলে গিয়েছিল সকালেই। মা-বাবার হাত ধরে এসেছিল শিশুরা। শুরুর দিকে বলে খুব বেশি ভিড় ছিল না। কিন্তু তাদের আনন্দই মেলায় প্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছিল। বই কিনে হুড়োহুড়ি হুটোপুটি তো ছিলই, সেই আনন্দে বান ডেকে দিল কার্টুন সিরিজ ‘সিসিমপুর’-এর হালুম-ইকরি-টুকটুকি-শিকুরা এসে। সেখানে শিশুদের জন্য বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তারা। তাদের সঙ্গে মেতে উঠেছিল খুদে বিচ্ছুর দল। শিশুদের জন্য তৈরি মঞ্চে নানা ধরনের শিক্ষণীয় খেলায় অংশ নিয়ে অন্যরকম এক দিন পার করেছে শিশুরা।

মেলায় অন্যপ্রকাশের স্টলে ঘুরে ফিরে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস কিনছিল তরুণ- তরুণীদের একটি দল। তাদের মধ্যে দু’একজন সংগ্রহ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘কয়লাতলা এবং অন্যান্য গল্প’ বইটি। তাদের মধ্যে আশরাফি মিথুন বলেন, আমরা বন্ধুরা বই শেয়ার করি। এ কারণে যে যারা প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করি। তারপর নিজেদের মধ্যে সেটা আদান-প্রদান হয়। এতে আমাদের লাভ হলো অনেক লেখকের লেখা যেমন পড়তে পারি তেমনি সবার জন্য সাশ্রয়ও হয়।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে গতকাল লেখকের ৮০তম জন্মদিনে প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতিমান সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের আত্মজৈবনিক গ্রন্থের সংকলন ‘স্মৃতিকহন’। ৮০০ টাকা মূল্যের এই বইটিতে তার পূর্বে লেখা চারটি আত্মজীবনী ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’, ‘এই পুরাতন আখরগুলি’ ও ‘দুয়ার হতে দূর’ সংকলিত হয়েছে।

নতুন বই:একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮১টি। এর মধ্যে গল্প ১০, উপন্যাস ২০, প্রবন্ধ ৭, কবিতা ১৪, গবেষণা ১, ছড়া ১, জীবনী ৩, রচনাবলী ৪, মুক্তিযুদ্ধ ৪, নাটক ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৫, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ২ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর বই এসেছে ৭টি।

এর মধ্যে মঈনুস সুলতানের ‘নিকারাগুয়ার পুরাতাত্ত্বিক নগরী ও নির্জন দ্বীপ’ ও মোস্তাফা সেলিমের ‘খবর নিশান’ (উত্স), আনিসুল হকের ‘দুষ্টু মেয়ের দল’ ও সুমন্ত আসলামের ‘অযান্ত্রিক’ (সময়), মিতালী পারকিন্সের ‘রিকশা কন্যা’ (ময়ূরপঙ্খী), সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সম্পাদিত মাহবুবুল হক শাকিল স্মারকগ্রন্থ (আগামী), জাকির তালুকদারের ‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’ (পুঁথিনিলয়), মুনতাসীর মামুনের ‘রাজকন্যের জন্য’ (পাঞ্জেরী) উল্লেখযোগ্য।

‘ভাষার সংগ্রাম মূলত স্বাধীনতার সংগ্রাম’:গতকাল গ্রন্থমেলার আলোচনা পর্ব শুরু হয়েছে। মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিজয় : ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক-সাংবাদিক হারুন হাবীব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী এবং গবেষক মোফাকখারুল ইকবাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক।

আহমদ রফিক বলেন, ভাষার সংগ্রাম মূলত স্বাধীনতার সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলন চেতনার যে প্রদীপ প্রজ্বালন করেছিল তারই বিচ্ছুরিত শিখায় আমরা আমাদের জাতিসত্তার স্বরূপ আবিষ্কার করেছি এবং আঁধার রাতের পরিধি ভেঙে সম্ভব করেছি স্বাধীনতার সুবর্ণ সকাল।

পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান এবং কবি হালিম আজাদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইস্তেকবাল হোসেন এবং লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সংগীত পরিবেশন করেন তিমির নন্দী, শিবু রায়, রুমানা ইসলাম, আলম আরা মিনু ও শ্যামা সরকার।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল