• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আজ আরও ৫৩ হাজার পরিবারকে ঘরসহ জমি দিলেন প্রধানমন্ত্রী

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আজ ২০ জুন রবিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে সারাদেশের ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন তিনি।

এ সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‌করোনার কারণে আমি যেহেতু যেতে পারিনি, আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিসি এবং ইউএনও জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন।

দেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন ছিন্নমূল এসব পরিবার। দলিলে জমির মালিকানা স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে। উপহারের সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে। এছাড়াও আত্মনির্ভরশীল করতে ওইসব পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থানের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারই কন্যা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তিচুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, সমুদ্র বিজয়, অর্থনৈতিক উন্নতিসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশে চলমান এমন উন্নয়নের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন- মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে।

প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি এবং গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষে ‘দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’– প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নাই, এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ বছরের ২৩ জানুয়ারীতে প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ও আজ ২০ জুন রবিবার ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সেমি-পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২১ জেলার ৩৬ উপজেলার ৪৪টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আজকের আশ্রয়ণের মধ্য দিয়ে গত ছয় মাসে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে।

এবারের বরাদ্দ হয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৯১২টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬ হাজার ৪৪৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১৪০টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৩৭২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৪০১টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ হাজার ১৬১টি, রংপুর বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১২ হাজার ৩৯১টি, রাজশাহী বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৫৬৮টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৬০৪টি, খুলনা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৮১২টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৩ হাজার ৯৯টি, বরিশাল বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৭ হাজার ৬২৭টি এবং সিলেট বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২২৩টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ হাজার ৭৫৬টি নির্মিত ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়া গত বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ১৬০টি পরিবারকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

ড. আহমদ কায়কাউস জানান, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এরই মধ্যে ২ শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছেন সারা দেশের ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।

একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়িঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও যুক্ত হয়েছেন। অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেওয়াকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বলা যায়। বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনও কেউ এটা ভাবেনি।

আহমদ কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশাল এবং মানবিক এ উদ্যোগ বিশ্বের কাছে দারিদ্র্য বিমোচনে সক্ষমতা প্রমাণের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি বলেন, এসব ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষকে শুধু সেমি পাকা বাড়িই দেওয়া হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের যৌথ নামে জমির মালিকানাসহ সারা জীবনের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে। জমির মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থ সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাত্রায় মানের পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়নও হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বাসস্থানই নয় পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা, খেলার মাঠ, গাছপালাসহ সব কিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। তিনি আরও জানান, সরকার অসহায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণও দেবে।

কিছু কিছু জায়গায় ঘর দেওয়ার নামে আার্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ড. কায়কাউস বলেন, আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই সঠিক ছিল না। যার স্বার্থহানি হয়েছে তিনি এমন অভিযোগ করেছেন। তবে বিভিন্নভাবে বা গণমাধ্যমে অভিযোগ এলে আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করি।

কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনেক সরকারি জমি অবৈধ দখলে ছিল জানিয়ে কায়কাউস বলেন, সেখান থেকে জমি এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সুতরাং তাদের অনেকেও নানা অভিযোগ করছে। সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ হিসাবে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনবার্সন প্রকল্প খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করেন।

খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে আরও ৩ হাজার ৮০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান মুখ্য সচিব। 

 

প্রধানমন্ত্রী’র আশ্রয়ন প্রকল্প: 

১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তদানীন্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ মে ঐ এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং সকল গৃহহীন পরিবারসমূহকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষনিক নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়ণ” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন (০৩) টি ফেইজে আশ্রয়ণ প্রকল্প (৯১৯৭ - ২০০২), আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেইজ – ২) (২০০২ - ২০১০), আশ্রয়ণ – ২ প্রকল্প (২০১০ - ২০২২) মোট ৩১৯,১৪০টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়, তন্মধ্যে আশ্রয়ণ – ২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২১৩,২২৭টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্ণিত প্রকল্পের সাফল্য ও ধারাবাহিকতায় ২০১০-২০২২ (সংশোধিত) মেয়াদে ২.৫০ লক্ষ ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

পুনর্বাসিত ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমির মালিকানা স্বত্বের দলিল/কবুলিয়ত সম্পাদন, রেজিষ্ট্রি ও নামজারী করে দেয়া হয়। পুনর্বাসিত পরিবার সমূহের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ, কবর স্থান, পুকুর ও গবাদি পশু প্রতিপালনের জন্য সাধারণ জমির ব্যবস্থা করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ দান এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হয়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল