• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দেশের বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১  

উড়োজাহাজ থেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপের কোনো দেশে নামলেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ঝাঁ–চকচকে বিমানবন্দর স্বাগত জানায়। ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ নিয়ে গাড়ি কিংবা মেট্রোতে উঠে সহজেই গন্তব্যে রওনা দেওয়া যায়। বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে এমন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার বহুদিনের আক্ষেপ ঘোচাতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ।

নতুন টার্মিনালটি চালু হলে বছরে ঢাকার এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটিতে পৌঁছাবে। একই প্রকল্পের অধীনে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে বর্তমানে বিমানবন্দরের ২ লাখ টন কার্গোর সক্ষমতা বেড়ে ৫ লাখ টন হবে।

২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মত, নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার একটি নতুন টার্মিনাল চালু হলে নানামুখী ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আগামী ১০ বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী পরিবহন তিন গুণ বাড়বে। কার্গো বাড়বে। তাই তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সাময়িকভাবে সুফল মিলবে। বিদেশি অনেক যাত্রী ও কার্গো এয়ারলাইনস দেশে আসতে চাচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে। সেই প্রতিষ্ঠান ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরের মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদের পাশাপাশি তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামোর নকশা প্রণয়ন করে।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের সুফল ব্যবসা-বাণিজ্যে অবশ্যই পড়বে। তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি উন্নত সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। বিদেশ থেকে আসা কোনো বিনিয়োগকারী যদি উড়োজাহাজ থেকে নেমেই ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইন দেখেন, তাহলে তিনি নিরুৎসাহিত হবেন। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমানবন্দর পরিচালনা করে না। কারণ, তাতে জবাবদিহি থাকে না। নতুন টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশি দক্ষ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নিয়োগ করা প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের এই জায়গায় ঘাটতি রয়েছে।

নির্মাণাধীন নতুন টার্মিনালের নিচে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটির সংযোগও থাকবে। ফলে বিমানবন্দরে যাওয়া–আসার ব্যবস্থা বর্তমানের চেয়ে বহুমাত্রিক হবে। তা ছাড়া বিমানবন্দরের পাশেই হচ্ছে পাঁচ ও তিন তারকা মানের হোটেল। বিপণিবিতানও নির্মাণ হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগে।

বিমানবন্দর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন কার্গো ভিলেজ তৈরি হচ্ছে। এই কার্গো ভিলেজের আয়তন ৬৩ হাজার বর্গফুট। এটি বর্তমান কার্গো ভিলেজের কয়েক গুণ বড়। মূলত পৃথক দুটি চারতলা ভবনে ইমপোর্ট (আমদানি) ও এক্সপোর্ট (রপ্তানি) কার্গো ভিলেজ হবে। উভয় ক্ষেত্রে পণ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে।

জানতে চাইলে ফ্রেইট ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কে জেড ইবনে আমিন সোহাইল বলেন, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও কার্গো ভিলেজ নির্মিত হলে আকাশপথে পণ্য আনা-নেওয়া বাড়বে। কারণ, টার্মিনাল ও কার্গো ভিলেজে আধুনিক সুবিধা থাকবে। পণ্য পড়ে থাকবে না। দ্রুত পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে।

বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। নতুন টার্মিনাল চালু হলে রপ্তানিপ্রক্রিয়া সহজ হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর। তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে কার্গো হ্যান্ডলিং বর্তমানের মতো ম্যানুয়ালি হবে না। পুরো প্রক্রিয়া হাতের স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হওয়ায় সময় কম লাগবে। তা ছাড়া পচনশীল দ্রব্যের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ওয়্যারহাউস থাকবে। সেটি হলে পণ্য নষ্ট হবে না। বর্তমানে উড়োজাহাজে ওঠানোর আগে ৮-১০ ঘণ্টা বাইরে পড়ে থেকে সবজি ও ফলমূলের মান খারাপ হয়ে যায়।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল