• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠত্বে শেষ হলো শেখ কামাল যুব গেমস

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২৩  

প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, টেকনিক্যাল অফিসিয়াল ও ক্রীড়া সংগঠকের অংশগ্রহণে ২ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল ক্রীড়া ক্ষেত্রের মহাযজ্ঞ। শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামে তার সফল সমাপ্তি হয়েছে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের গতির ঝলক, আতশবাজির রোশনি, মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো সমাপনীতে পর্দা নামল শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের।

চূড়ান্ত পর্বে চার হাজার অ্যাথলেটের ক্রীড়াশৈলীতে সাত দিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছিল উৎসবের আবহ। সেই উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার সমাপনী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন সেনাপ্রধান।

চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠত্বে শেষ হলো শেখ কামাল যুব গেমস
গেমসের অন্যতম সংগঠক কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা
বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বিওএ’র সহ-সভাপতি ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ এবং বিওএ’র অন্যান্য কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ফেডারেশন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আটটি বিভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে ২৪টি ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত গেমসে সেরা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ৪৯টি স্বর্ণ, ৪০টি রৌপ্য এবং ৫৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক নিয়ে শীর্ষে চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা। দ্বিতীয় হয়েছে ঢাকা বিভাগ। তারা ৪৬টি স্বর্ণ, ৩৯টি রৌপ্য, ৬১টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক জিতেছে। ৪২টি স্বর্ণ, ৪৩টি রৌপ্য এবং ৫৯টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৪টি পদক নিয়ে তৃতীয় হয়েছে খুলনা বিভাগ।

সমাপনী অনুষ্ঠানটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে ছিল প্রধান অতিথি সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেমের আগমন, অ্যাথলেটিকসের ১০০ ও ৮০০ মিটার দৌড় ইভেন্ট, শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অডিওভিজ্যুয়াল প্রদর্শন, স্পন্সরদের ক্রেস্ট প্রদান, প্রধান অতিথির বক্তব্য এবং সমাপনী ঘোষণা।

দ্বিতীয় পর্বকে সাজানো হয় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে, যেখানে সুরের তালে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন শিল্পীরা।

শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্রা পায়।

শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পরস্পর কথা বলেন। ছবি: নিউজবাংলা
অ্যাথলেটিকস শুরুর আগে দেশের নানা উন্নয়ন চিত্র নিয়ে কয়েক মিনিটের অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে যুব গেমসের কিছু খণ্ডচিত্র দেখানো হয়। অ্যাথলেটিকসের জনপ্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সময় তরুণ-তরুণীদের গতির সঙ্গে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের গর্জনে ভিন্ন এক আবহ তৈরি হয়।

স্প্রিন্টের পর ২৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে শুরু হয় সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের ওপর সংক্ষিপ্ত একটি অডিওভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তুলে ধরা হয়, জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে গেমসের মশাল প্রজ্বালন। এরপর যুব গেমসের স্পন্সরদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।

পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন বিওএ সভাপতি সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা।

ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানের পর ৮০০ মিটার এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টের তরুণ ও তরুণী বিভাগে পদক জয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে যুব গেমসের সেরা হওয়া চট্টগ্রাম ও দ্বিতীয় হওয়া ঢাকা বিভাগের হাতে ট্রফি তুলে দেন বিওএ সভাপতি।

বিওএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে ফটো সেশনের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান।

আর্মি স্টেডিয়ামে শনিবার গেমসের সমাপনী দিনে ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রত্যক্ষ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিএবি সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ অন্য অতিথিরা। ছবি: নিউজবাংলা
রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুই ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক: সেনাপ্রধান

সমাপনী বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেলাধুলার জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন ও আধুনিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিয়েছিলেন।

‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। সে সময় একে একে গড়ে ওঠে সাঁতার, হকি, ভলিবল, অ্যাথলেটিকস, টেনিস ইত্যাদি ফেডারেশন। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনও। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য এবং নতুন প্রতিভার সমন্বয়ে আমরা জাতীয় দলগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পারব।

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক ও তারুণ্যের প্রতীক। তার যৌবনদীপ্ত ক্রীড়াশৈলী দেশের তরুণদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। এ প্রজন্মের তরুণরাও খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা ও ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে আগামীতে হয়ে উঠবে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্রীড়াঙ্গনের সম্প্রসারণ ও খেলাধুলার মান উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং করে যাচ্ছে। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে তরুণ প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা যাতে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় সেজন্য দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।

‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নারীরা সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল, সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ইমরানুর রহমান ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন।’

সুন্দরভাবে শেখ কামাল যুব গেমস শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আর এবারের যুব গেমসে সেরা ২৮ জন তরুণ-তরুণীকে ১০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই আতশবাজির আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল