• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবিদের প্রথম রোজা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩  

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা বা সাওম অন্যতম। সাওম আরবি শব্দ। এর সমার্থক শব্দ রোজা। রোজা ফারসি থেকে আগত। সাওম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।
শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার এবং স্ত্রীসঙ্গ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোজা বলা হয়। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ, কোনো ওজর আপত্তি না থাকলে সবার জন্য রোজা ফরজ।

রোজা সম্পর্কে দু’একদিনে আলোচনা করে শেষ করা যায় না। এটি একটি ব্যাপক বিষয়। তবে একটি বিষয় প্রায় সব মুসলিম উম্মাহর জানার ইচ্ছে জাগে যে- কেমন ছিলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবিদের প্রথম রোজা। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে  জেনে নিই-

চারদিকে মরুভূমি, যেখানে ছিল খাদ্য ও পানির সংকট। তারপরও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশে মদিনার মুসলিমরা প্রথম রোজা রাখা শুরু করেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা আরো একটি রমজানের মুখোমুখি হয়েছেন।

আজ থেকে ১ হাজার ৩৯৮ বছর আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশে প্রথম রোজা রাখা শুরু হয়। সে হিসেবে এ বছর রোজা শুরুর মাধ্যমে রোজার ১৩৯৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন হচ্ছে।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে আজকের সৌদি আরবের মদিনা শহরে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রমজান পালিত হয়েছিল।

রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় যে বছর হিজরত করেন তার পরের বছর মুসল্লিরা রোজা রাখা শুরু করেন। যাকে ইংরেজিতে অভিবাসন বলে। রোজা রাখার মধ্য দিয়ে ইসলামে এক নব দিগন্তের সূচনা হয়।

পৌত্তলিক বা মূর্তিপূজা অনুসরণকারী ধর্মীয় নেতাদের চাপে ৬২২ সালে মক্কা থেকে অনেক মানুষ রাসূলুর্লাহ (সা.) এর সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে গিয়ে তারা ছোট্ট একটা মুসলিম কমিউনিটি গড়ে তোলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশে তারা মক্কা থেকে মদিনায় যায়। সঙ্গে ছিলেন তার সাহাবিরা। যাদেরকে প্রথম মুসলিম বলা হয়। সেখানে গিয়ে তারা দিন, মাস এবং বছর গণনা করার জন্য হিজরতের প্রথম দিনটি বেছে নেন। এখান থেকেই যাত্রা শুরু হয় হিজরি বছর গণনার।

মুসলমানদের জন্য প্রথম রমজানটি হয়েছিল মার্চ মাসে। তখন ছিল বসন্ত কাল। মূলত এ সময়ে মদিনাসহ আরব উপদ্বীপের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালের তুলনায় কিছুটা কম। তবে এ সময়ের মধ্যেই তীব্র গরম মরুভূমি এবং আশেপাশের শহরগুলোতে আঘাত হানে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

হাতিত ইউনিভার্সিটির ইসলামিক ডিভিনিটির অধ্যাপক কাসিফ হামদি ওকুরের বলেন, আয়াতটি ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বা হিজরতের দ্বিতীয় বছরের শাওয়াল মাসে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ হয়।

কাসিফ হামদি ওকুর আরো বলেন, যদিও রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং কিছু মুসলমান কোরআনের আয়াত অবর্তীণের আগে মক্কায় নির্দিষ্ট মাসগুলোতে কিছু দিন রোজা রেখেছিলেন, কোনো বাধা ছাড়াই ৩০ বা ২৯ দিন রোজা রাখা প্রথম মুসলমানদের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সময়কালীন নথিভূক্ত হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রথম যে বছর রোজা শুরু হয় সে বছর মুসল্লিদের কিছু কঠিন সময় পার করতে হয়। কারণ এ সময়টাতে কোরআনের আয়াত অবর্তীণের মাধ্যমে সবাইকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। যা ছিল মানসিক এবং শারীরিকভাবে সবাইকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া।

রমজানের আয়াত নাজিল হওয়ার অল্প সময় মধ্যে, মুসলমানরা তাদের প্রার্থনার দিক (কিবলা) জেরুজালেম (কোরআনের কুদস) থেকে মক্কার কাবাতে পরিবর্তন করেছিল। এক ঈশ্বরবাদ হুকুম পালন করার জন্য পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরিফ নির্মাণ করেন নবী ইব্রাহিম (আ.)। মদিনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) অব্স্থান শক্ত হওয়ার পর থেকেই ইসলাম অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

হামদি ওকুরের মতে, কিবলার দিক পরিবর্তন করে এক মাসের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদাত করা হয়। এর ফলে প্রথম মুসলমানরা গভীরভাবে অনুভব করেছিল যে তারা অন্যান্য একেশ্বরবাদী গোষ্ঠী (খ্রিস্টান এবং ইহুদি) থেকে একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায়। তারা মদিনার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করে একটি শক্তিশালী সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।

পবিত্র এই রমজান মাসেই বদর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মদিনা ভিত্তিক মুসলমান এবং মক্কা ভিত্তিক পৌত্তলিকতার ধর্ম অনুসরণকারীদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিজয় লাভ করেন। ফলে ইসলামের ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়। আর এ যুদ্ধে জয় লাভের মধ্যে দিয়ে পুরো বিশ্বে ইসলাম প্রচার সহজ হয়ে যায়।

অধ্যাপক হামিদ বলেন, রোজা সব বয়সী মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল। কোরআন সর্বদা বিশ্বাসীদের জন্য তাদের জীবনকে সরল এবং সহজ করার জন্য মধ্যপন্থা অবলম্বন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খুবই বৃদ্ধ, অসুস্থ, গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের রোজা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হয়েছে। 

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি যদি কোনো কারণে রোজা না রাখতে পারেন তাহলে তার পরিবর্তে তিনি একজন দুস্থ মানুষকে খাবার খাওয়াবেন। এভাবে যতগুলো রোজা রাখা সম্ভব না হবে ততদিন এই কাজ করতে হবে। নারীদের জন্য একই নির্দেশনা।

পবিত্র রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবাদাত নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। তিনি মসজিদে ইতিকাফে প্রবেশ করে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। ইতিকাফের অর্থ হলো নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করা, আপনার জীবনের দিক সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য পার্থিব বিষয়গুলোর পরিবর্তে ইবাদতে সময় ব্যয় করা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে যখন কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী রোজা রাখা শুরু হয়। তখন সাহাবিদের রোজা রাখা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ সেই সময়ে খাবারে ছিল অপ্রতুলতা। সাহাবিদের কয়েকটা খেজুর আর সামান্য কিছু পানি খেয়ে রোজা রাখতে হয়েছে। আবার এই খাবার খেয়ে ইফতার করতে হয়েছে। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল