• শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২০ ১৪৩১

  • || ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রৌমারীতে গো-খাদ্যের তীব্র সংকটে বিপাকে খামারিরা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপাকে পড়েছেন রৌমারী উপজেলার খামারি ও সাধারণ কৃষকেরা। 

একটি গরুর পেছনে ব্যয় করে কোরবানির সময় পাওয়া যাচ্ছে না তেমন দামও। হিসেব-নিকেষ করে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও এককালীন কিছু টাকা পাওয়া যায় তাতেই সাধারণ কৃষকের খুশি! 

গরুর খাদ্যের মধ্যে অন্যতম খড়-কুটাসহ অন্য খাদ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই জানালেন রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গরুর খামারিরা। তাই এ উপজেলায় কৃষকের গবাদিপশুর খাদ্য ঘাটতির জন্য কচুরিপানায় একমাত্র ভরসা।
এখানে বর্ষার শুরুতেই পুকুরে,খালবিল, নদীনালা, পানিতে ভরে যায়। ফলে গবাদিপশু সবুজ ঘাসের খাদ্য সংকটে পড়ে। তাছাড়া খড়, খৈল, ভুষি ইত্যাদি ক্রয়কৃত খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে। তাই গবাদিপশুকে বাচিয়ে রাখতে বা  সবুজ ঘাসের ঘাটতি মেটাতে কচুরিপানাকেই প্রধান উৎস হিসেবে বেচে নিয়েছেন তারা। তাই উপজেলার খালবিল, নদীনালায় ভেসে আসা কচুরিপানা রোদ বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকেরা সংগ্রহ করে গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য। প্রতিটি জলাশয়ে সকাল বিকাল এমনই চিত্র দেখা যায়। 
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন খামার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আগামী বছরের কোরবানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। কারো রয়েছে দুগ্ধজাত খামার আবার কেউ শুধুমাত্র ঈদ ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পালন শুরু করেছেন গরু। এসব খামারে সংকট রয়েছে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটা, ভূষি, খৈলসহ আরো অনেক খাদ্য। 
উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাগুয়ারচর গ্রামের বক্তার হোসেন জানান,‘যেভাবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে আর গরু পালন করা সম্ভব হবে না হয়ত। খামারের গরুগুলোকে এক মাস আগে যে খাবার দিয়েছি এখন তার অর্ধেক পরিমাণে দিচ্ছি। এতে গরু কাহিল হলেও আমার আর কিছুই করার নেই।’ ১৫ দিন আগে ৩৫ কেজি ওজনের গমের চালের দাম ছিল এক হাজার ১১শ’ টাকা, সে চালের দাম হয়েছে ১৯’শ টাকা। অনেকে বাধ্য হয়েই সাধ্য মতো খড়ের আটি কিনছেন। 
এদিকে ১’শ খড়ের আটি সাড়ে ৮’শ থেকে ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ফিড প্রকার ভেদে সাড়ে ৮ থেকে ১হাজার ৩’শ ৫০ টাকা ও গমের ভুষি প্রকার ভেদে প্রতিবস্তা ১হাজার ৮’শ থেকে ১ হাজার ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বহু খামারি বা ছোট কৃষক পরিবার। গরু-মহিষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে পানিতে ভাসমান কচুরিপানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন অনেকেই। তারা গো-খাদ্যের দাম কম রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
খামারি ও চাষীরা জানান, ছয়মাস আগে একবস্তা ভালোমানের ভাঙ্গা গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২’শ থেকে ১ হাজার ২’শ ৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৯’শ ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। একইভাবে ছয় মাস আগে মাসকলাইয়ের ভুষির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪’শ থেকে ১ হাজার ৪’শ ৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ১’শ থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা। এক বছর আগে এক বস্তা খৈল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫’শ থেকে ২ হাজার ৬’শ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩শ’ থেকে ৩ হাজার ৪’ শ টাকা। ৬ মাস আগে ডালের ভুষির বস্তা (৩৫ কেজি) ছিল ১ হাজার ২শ’ টাকা, অ্যাংকর ডালের ভুষি ৮’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরও ধীরে ধীরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছেই। তবে দেড় মাস পড়েই আমন ধান কাটার শুরু হলে এ সংকট আরা থাকবে না।  
গরু পালন করেন গোলাম হোসেন, আব্দুর রউফ ও আব্দুল হাকিম সহ এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, একটি গরুর সারা বছরের শুকনা খাবারের জন্য খড়ের বিকল্প নেই। তিনবেলা নিয়ম করে অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি খড় দিতে হয়। কুড়া-ভুষি, চাল ফুটানো মিলিয়ে খাওয়ার সঙ্গে খড় কেটে পানির সঙ্গে ভিজিয়ে খাওয়ানো হয়। এছাড়াও তিনবেলা খাওয়ার বাইরে খড় ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। ঘাসের তুলনায় খামারে খড়ের প্রয়োজনীয়তাই বেশি। আর এ কারণেই প্রত্যেক খামার বা সাধারণ গেরস্থদের কমপক্ষে এক বছরের জন্য খড় কিনে রাখতে হয়। এ মৌসুমে কিনে আগামী কোরবানি পর্যন্ত খড়-খাদ্যের যোগান দিতে হয় খামারে। খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণেরাও। দাম বেশি হওয়ার পরও সংকট রয়েছে খড়ের। খড়ের দাম বাড়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। গত কয়েক বছরে রৌমারী উপজেলায় গরুর খামারের সংখ্যা বেড়েছে। নতুন খামার তৈরিতে ঝুঁকছেন যুবকেরা। দুগ্ধজাত গরুর ও মোটাতাজাকরণ উভয়ই থাকছে খামারে। দিন দিন খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে খামারদের যেমন কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে, সে সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকেরা। যারা বাড়িতে দুই-তিনটি করে গরু পালন করেন কোরবানিতে বিক্রির আশায়। 
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এটিএম ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বন্যায় কৃষকের খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও গরুর অন্যান্য খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষকেরা কুচুরিপানা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে সামনে আমন ধানা কাটা শুরু হলে গো-খাদ্যের সংকট থাকবে না।